সোমবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

গাজায় বোমা হামলা চলছেই, উদ্বেগ জাতিসংঘের

প্রতিদিন ডেস্ক

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সর্বাত্মক স্থল অভিযানের ঘোষণা দিয়েও সুবিধা করতে পারছে না ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। অভিযানে নেমেও তারা বারবার পিছু হটছে এবং শেষ পর্যন্ত বিমান থেকে বোমাবর্ষণের ওপর নির্ভর করছে। ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা বলেছে, যতবারই ইসরায়েলি সেনারা অগ্রাভিযানের চেষ্টা করেছে ততবারই তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে হটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে অনবরত বোমাবর্ষণের ঘটনায় আবারও জাতিসংঘ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আহ্বান জানিয়েছে। সূত্র : রয়টার্স, আল জাজিরা, পার্স টুডে, এএফপি। একটি খবর অনুযায়ী, ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেড গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান চালাতে ঢুকে পড়া ইসরায়েলের একটি সাঁজোয়া যান ধ্বংস করে দিয়েছে। ওই যানে ১৪ জন ইসরায়েলি সেনা ছিল। হামাস পরিচালিত আল-আকসা টেলিভিশনে ওই সাঁজোয়া যানটি ধ্বংস করার ভিডিও চিত্র সম্প্রচার করা হয়েছে। ফুটেজে দেখা গেছে, রাতের অন্ধকারে ইসরায়েলের কয়েকটি সাঁজোয়া যান সারিবদ্ধভাবে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এ সময় আল-কাসসাম ব্রিগেডের নিক্ষিপ্ত একটি গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি বহরের একেবারে সামনের যানটিকে আঘাত করে সেটিকে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে পরিণত করে। আল-কাসসাম ব্রিগেড গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ‘করনেট’ ক্ষেপণাস্ত্র বলে দাবি করেছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য সরলরেখায় না গিয়ে আঁকাবাঁকা পথে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এক সময় সেনাদের সাঁজোয়া যানটিকে আঘাত করছে। হামাস বলেছে, গাজা উপত্যকার শুজাইয়া এলাকায় ওই হামলা চালানো হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকার সীমান্তজুড়ে ইসরায়েলের লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন রয়েছে। গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তেলআবিব গাজায় স্থল অভিযান চালানোর হুমকি দিলেও বড় ধরনের কোনো স্থল অভিযান এখনো শুরু করতে পারেনি। যদিও বিমান হামলা চালিয়ে তারা হাজার হাজার নিরস্ত্র নারী ও শিশুকে হত্যা করেছে। তবে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার রাতে সেনারা তাদের ভাষায় স্বল্প মাত্রার স্থল অভিযান চালিয়ে আবার ফিরে যাওয়ার কথা প্রচার করেছে।

ইসরায়েলি সেনারা বারবার গাজায় ঢুকে কেন বেরিয়ে যাচ্ছে- তা আল-কাসসাম ব্রিগেডের এই ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট হয়েছে। হামাসের হাতে স্থল অভিযানে মার খাওয়ার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বক্তব্যে বলেছেন, গাজার অভিযান হবে ‘অত্যন্ত কঠিন ও দীর্ঘ।’ এদিকে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই নিহতদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন গতকাল ২৩তম দিনে গড়িয়েছে।

বিশ্লেষকরা জানান, গাজার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও সদাপ্রস্তুত হামাসকে পরাজিত করা সহজ হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে হামাসের দুর্ভেদ্য সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক। ফিলিস্তিনি সূত্রগুলোর তথ্যানুযায়ী, হামাস গাজা উপত্যকায় মাটির নিচে সুবিস্তৃত সুড়ঙ্গপথে ‘ইসরায়েল-প্রুফ’ যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরি করেছে। বাইরে থেকে কেউ যাতে তাদের যোগাযোগে আড়ি পাততে না পারে, সে জন্য হামাস প্রায় ১০ কিলোমিটারেরও বেশি জায়গাজুড়ে বিশেষ আবরণযুক্ত তার বসিয়েছে। এ ধরনের তার অত্যাধুনিক সুড়ঙ্গপথে বসানো হয়েছে। এই তারগুলো থেকে ন্যূনতম পর্যায়ের তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ হতে থাকে, যা মাটির গভীরে সব ধরনের আড়ি পাতার প্রযুক্তিকে প্রতিহত করে। এই নতুন ধরনের সুরক্ষিত যোগাযোগব্যবস্থার কারণেই সম্ভবত হামাস ৭ অক্টোবরের হামলার পরিকল্পনা ইসরায়েলের কাছ থেকে গোপন রাখতে পেরেছিল। যদিও ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা মাটির নিচের ১৫০টি অবস্থানে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে। তবে তাদের এই দাবি যৌক্তিক নয় বলেই মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। তাদের মতে, ইসরায়েল সম্ভবত সুড়ঙ্গের ওপর ১৫০ ভবনে হামলা চালিয়েছে, ১৫০ সুড়ঙ্গে হামলা চালানো এত সহজ হওয়ার কথা নয়।

অভিযানে ৫ হাজার মার্কিন সেনা জড়িত : ইসরায়েলের সেনাবাহিনী শুক্রবার রাত থেকে গাজায় যে স্থল অভিযান শুরু করেছে তাতে প্রায় ৫ হাজার মার্কিন সেনা জড়িত ছিল বলে কয়েকটি নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে ইরানের বার্তা সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে। তাসনিম আরও জানায়, শুক্রবার রাতে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের স্থল হামলায় সামরিক বাহিনীর তিনটি ডিভিশন ও বেশ কয়েকটি ব্রিগেড অংশ নেয়। আগ্রাসনে প্রায় ৫ হাজার মার্কিন সেনা অংশগ্রহণ করে বলে ধারণা পাওয়া গেছে।  আরেক খবরে বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার কাছে ইসরায়েল-অধিকৃত ভূখন্ডে গোপন সামরিক ঘাঁটি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সংবাদ সংস্থা দ্য ইন্টারসেপ্ট এমন তথ্য দিয়েছে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল যখন গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ বর্বরতা চালাচ্ছে ঠিক সে সময়ই এমন উদ্যোগ কার্যকর করছে ওয়াশিংটন। ইন্টারসেপ্ট বলছে, পেন্টাগন নিঃশব্দে গাজা উপত্যকা থেকে মাত্র ২০ মাইল দূরে নেগেভ মরুভূমির গভীরে গোপন সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। এই ঘাঁটির কোড নাম দেওয়া হয়েছে সাইট-৫১২। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী এই ঘাঁটি প্রকৃতপক্ষে একটি রাডার স্টেশন হিসেবে কাজ করবে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণের জন্য এই ঘাঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধ শুরুর প্রায় দুই মাস আগে পেন্টাগন সাইট ৫১২-তে মার্কিন সেনাদের জন্য এই ঘাঁটি নির্মাণ করতে ৩ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের একটি চুক্তি করে।

বন্ধ গাজার ৩০ হাসপাতাল : ইসরায়েলের হামলায় গাজার অন্তত ৩০টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অবরুদ্ধ গাজায় জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে সেখানে মেডিকেল সামগ্রীও শেষ হয়ে গেছে। সে কারণে বেশির ভাগ হাসপাতালই তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। আগামী কয়েক দিন বা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আরও কিছু হাসপাতাল তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে।

সর্বশেষ খবর