সোমবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অবশেষে প্রত্যাহার হচ্ছে প্রভিডেন্ট ফান্ডের কর!

শাহেদ আলী ইরশাদ

অবশেষে প্রত্যাহার হচ্ছে বেসরকারি খাতের কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি তহবিল ও শ্রমিকদের লভ্যাংশ তহবিলের অতিরিক্ত ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ কর! ব্যক্তি করদাতাদের দাবি বিবেচনা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ সিদ্ধান্ত নিতে  যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব জানা গেছে। ২০২৩ সালের আইনে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের আয়ের ওপর নতুন করে ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। অথচ সরকারি চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের আয় কর মুক্ত। কারণ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বেসরকারি চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর কর ছিল ১০ শতাংশ। কিন্তু নতুন আইনে তা ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়। বেসরকারি খাতের কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি তহবিল ও শ্রমিকদের লভ্যাংশের তহবিলে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক এবং ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে করারোপ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এ খাতের কর্মীরা। এ নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, সমালোচনার মুখে বেসরকারি খাতের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর কর যৌক্তিক করার কার্যক্রম চলছে। এ বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং ফরেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় সাংবাদিকদের বলেন, প্রভিডেন্ট ফান্ডের আয়ের ওপর কর বেসরকারি খাতের কর্মীদের কর্মজীবন শেষের আয় কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটা তাদের সঞ্চয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি আরও বলেন, আমরা এই কর মওকুফ করার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছি। পরবর্তীতে চিঠি দিয়ে কয়েকটি পয়েন্ট ব্যাখ্যা করেছি। আশা করছি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ন্যায্যতা বিচার করে একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নেবে।

জানা গেছে, ভবিষ্যৎ তহবিলে বেসরকারি চাকরিজীবীরা অর্থ জমান ভবিষ্যতের আর্থিক সুরক্ষার জন্য। প্রতি মাসে বেতনের টাকা থেকে একটি অংশ নিয়োগদাতা কর্তৃপক্ষ চাঁদা হিসেবে কেটে রাখেন। একই তহবিলে চাকরিজীবীর দেওয়া অর্থের সমপরিমাণ অর্থ জমা দেয় নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানও। কর্মীর নিজের জমা অর্থ ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ দুটিই প্রতি মাসে প্রভিডেন্ট ফান্ডের হিসাবে জমা হয়। এই টাকা লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করা হয়। নতুন আয়কর আইনে ট্রাস্ট ও তহবিলের আয়ের ওপর প্রতি বছর সাড়ে ২৭ শতাংশ হারে করপোরেট কর বসানোর বিধান করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। প্রজাতন্ত্রের এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি শেষে অবসর ভাতা দেওয়া হয় রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। পদের গ্রেড আর বেতন হিসেবে এই অবসর ভাতা নির্ধারিত হয়। কর্মীর অবর্তমানে তার পরিবারও এই পেনশন সুবিধা পায়। আছে ভবিষ্যৎ তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ড। এর বাইরেও চাকরি শেষে এককালীন এক বছর ছয় মাসের মূল বেতন দেওয়া হয়। তা গ্রাচ্যুইটি বা আনুতোষিক ভাতা নামে পরিচিত। কিন্তু বেসরকারি খাতে কত লোক প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা নিয়ে চাকরি করেন, এর সঠিক কোনো হিসাব নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই সংখ্যা ১ কোটির কম নয়। এসব সুবিধার বেশির ভাগই পায় না বেসরকারি চাকরিজীবীরা। এবিষয়ে আয়কর আইন বিশেষজ্ঞ ¯েœহাশীষ বড়ুয়া বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে তহবিল আছে (প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন তহবিল) তা তারা সরকারি বিভিন্ন বিল, বন্ডে বিনিয়োগ করেন। তাদের ৫ থেকে ১০ শতাংশ কর কর্তন করা হয়। কিন্তু আইনে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, তা হলো- সরকারি পেনশন তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে না। বেসরকারি খাতে কোনো কর অব্যাহতি না থাকলেও সরকারি খাতে সেটি আছে। তার মানে সরকারি চাকরিজীবীদের তহবিলে যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ কর কাটা হবে, তাই তাদের চূড়ান্ত কর। আর বেসরকারি খাতের পেশাজীবীদের আরও ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর