মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পুড়ল শত কোটি টাকার কাপড়

♦ ভয়াবহ আগুন দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি কাপড়ের বাজার নরসিংদীর শেকেরচর বাবুরহাটে ♦ হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও পুড়ে গেছে ৯১ দোকান

সঞ্জিত সাহা, নরসিংদী

পুড়ল শত কোটি টাকার কাপড়

নরসিংদীর পাইকারি কাপড়ের বাজার বাবুরহাটে ভয়াবহ আগুনে শতাধিক দোকান ভস্মীভূত হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সরু রাস্তা আর অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা না থাকায় ভয়াবহ আগুনে পুড়ল দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি কাপড়ের হাট নরসিংদীর শেকেরচর বাবুরহাট। এতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেছে ৫০ বছরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রবিবার রাতের এই অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও পুড়ে গেছে ৯১টি দোকান। রাত ১১টায় লাগা এই আগুন ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট তিন ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনে।

অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে রাতেই নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম, পুলিশ সুপার মুস্তাফিজুর রহমান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসক জানান, দুর্ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তথ্য সংগ্রহ ও সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চিত্রা শিকারীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সমবেদনা জানিয়েছেন। আশ্বাস দিয়েছেন সহযোগিতার।

নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত- এখনো শনাক্ত করা যায়নি। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তদন্তে প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, বাবুরহাটে এর আগেও একাধিকবার বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটলেও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়নি। হাটের সরু গলিতে অবৈধভাবে চৌকি ফেলার কারণে এবং ওপরে ছাউনি দেওয়ার কারণে আগুন দ্রুত বিস্তার করে। একই সঙ্গে বাজারে কোনো পানি সংরক্ষণাগার না থাকায় শুধু পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর আমাদের নির্ভর করতে হয়েছে। জানা যায়, প্রতি শুক্র থেকে রবিবার পাইকারি এই হাটের বেচাকেনা চলে। রবিবার রাত ১১টার দিকে সাটিং পট্টির গলিতে ষড়ঋতু থ্রি পিসের দোকানে প্রথমে আগুন দেখতে পান বাজারের লোকজন। মুহূর্তে অন্যান্য দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান। পরে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। নরসিংদী ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, রবিবার রাত ১১টা ১৭ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের খবর পান তারা। ৭ মিনিটের মধ্যে প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। বাজারের ভিতরের সড়ক সরু থাকায় গাড়ি ভিতরে ঢুকতে পারেনি। এ ছাড়া নদী খননের পর ক্ষতিগ্রস্ত সেতু মেরামত না করায় বাজারে গাড়ি ঢোকানো সম্ভব হয়নি। ফলে আগুনের তীব্রতা বেড়ে যায়। পরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পরবর্তীতে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরের ১০টি ইউনিট যোগ দেয়। ১০টি ইউনিট প্রায় ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরই মধ্যে পুড়ে যায় গলির ৯১টি ছোট বড় পাইকারি কাপড়ের দোকান। চোখের সামনে দোকান পুড়তে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেক ব্যবসায়ী। কাপড়ের মধ্যে আগুন থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তা নিভাতে কাজ করেন। গতকাল দুপুর ১টায় আগুন নিভানো সম্পন্ন হলে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। বাবুরহাট বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির বলেন, আমাদের হিসাব মতে- ৯১টি দোকান পুড়ে গেছে। প্রায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনেকেই ধারদেনা ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেন। সরকার সহযোগিতা না করলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।

সরেজমিনে গতকাল দুপুরে বাবুরহাট গিয়ে দেখা যায়, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিশাল এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পোড়া টিন ও পোড়া কাপড় কাদা-পানিতে মিশে একাকার। কোথাও কোথাও কাপড়ের গাইট থেকে ধোঁয়া বের হতে এবং অনেক ব্যবসায়ীকে বিলাপ করতে দেখা যায়। এসএস ক্লথ স্টোরের মালিক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, হাটে ঢোকার পথে ব্রিজ ভাঙা। তাই ফায়ার সার্ভিসের কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। আমার দোকানের সব মাল পুড়ে গেছে। আমি এখন নিঃস্ব। ব্যবসায়ী শাহজাহান মিয়া বলেন, রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি গিয়ে শুনি হাটে আগুন লাগছে। দৌড়ে এসে দেখি চোখের সামনে আমার দোকান জ্বলছে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আগুনে আমার সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন চারদিক শুধু অন্ধকার দেখছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর