মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

যে কারণে হারিয়ে গেল খোঁয়াড়

নজরুল মৃধা, রংপুর

যে কারণে হারিয়ে গেল খোঁয়াড়

একসময় মানুষ নিজেদের গবাদিপশু রাস্তা কিংবা খোলা মাঠে ছেড়ে দিত। ওই পশু রাস্তার পাশের জমিতে ঢুকে ফসল খেয়ে ফেলত। তখন ক্ষতিগ্রস্ত মালিক ওই গরু অথবা ছাগল ধরে খোঁয়াড়ে দিত। নির্দিষ্ট অঙ্কের জরিমানা দিয়ে খোঁয়াড় থেকে গরু-ছাগল ফিরিয়ে নিতেন ওই গবাদি পশুর মালিক। একসময় খোঁয়াড় গ্রামগঞ্জ হাটবাজারের বিভিন্ন স্থানে দেখা যেত। সাধারণ গৃহস্থ যারা গরু-ছাগল পালতেন তাদের কাছে খোঁয়াড় একসময় আতঙ্কের নাম ছিল। কিন্তু নানান কারণে খোঁয়াড় নামক শব্দটি হারিয়ে যেতে বসেছে আমাদের জীবন থেকে। বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে খোঁয়াড় হারিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে একসময় একাধিক খোঁয়াড় ছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে কাগজে কলমে খোঁয়াড় ইজারা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও এখন খোঁয়াড় ইজারা নিতে কেউ আগ্রহ প্রকাশ করেন না। সারা বছরে যে পরিমাণ গরু-ছাগল খোঁয়াড়ে আসত তাতে ইজারাদারদের ইজারার টাকা উঠত না। ফলে খোঁয়াড় ইজারার প্রথাটি উঠে যেতে বসেছে। এ ছাড়া গরু-ছাগলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় গৃহস্থরা এখন অনেক যত্ন করে পবাদি পশু লালন-পালন করেন। বাড়ি থেকে এখন আর কেউ গরু-ছাগল রাস্তায় ছেড়ে দেন না। খোঁয়াড় সম্পর্কে হারাগাছ এলাকার রমজান আলী বলেন, একসময় ১০ টাকা থেকে ৫০ টাকা জরিমানা দিয়ে খোঁয়াড় থেকে গরু ছাড়িয়ে এনেছিলাম। এখন আর খোঁয়াড়ের প্রয়োজন পড়ে না।

একটা সময় ফাঁকা মাঠজুড়ে গোচারণ ভূমি ছিল। ওই মাঠে অনেকে গরু-ছাগল পালত। সেখান থেকে গরু ছুটে গিয়ে অন্যের ফসল ক্ষতি করত। এখন আগের মতো মাঠ নেই। এ ছাড়া আগে জমিতে দুটি ফসল হতো। এখন অনেক স্থানে ৪টি ফসল হয়। কৃষকরা ফসলের প্রতি যত্নবান হওয়ায় তাদের খেতে গরু-ছাগল প্রবেশ করতে পারে না। এ ছাড়া একসময় মাঠের ঘাস খেত গবাদি পশু। এখন মাঠের ঘাসের প্রয়োজন পড়ে না। অনেকে বাজার থেকে কাঁচাঘাস অথবা ফিড কিনে গরুকে খাওয়ায়। তাই মাঠের ঘাস খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না পবাদি পশুর। রংপুর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র তৌহিদুল ইসলাম বলেন, খোঁয়াড় ইজারা দেওয়ার বিধান এখনো রয়েছে। তবে কেউ খোঁয়াড় ইজারা না নেওয়ায় খোঁয়াড় প্রথা বিলুপ্তির পথে।

 

সর্বশেষ খবর