বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বর্জ্যে বিপর্যস্ত হাতিরঝিল

হাসান ইমন

বর্জ্যে বিপর্যস্ত হাতিরঝিল

হাতিরঝিলের পানিতে বিভিন্ন স্থানে জমেছে বর্জ্য -বাংলাদেশ প্রতিদিন

হাতিরঝিল এখন রাজধানীর এক টুকরো বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ভ্রমণে আসেন। ওয়াটার ট্যাক্সিযোগে এফডিসি ঘাট থেকে গুলশানের গুদারাঘাট যাতায়াত করেন অনেকে। একই সঙ্গে হাতিরঝিলের আশপাশের নাগরিকরা হাঁটাহাঁটিসহ শরীরচর্চা করে থাকেন। কিন্তু আশপাশের বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা, ড্রেনের পানি ঝিলে পড়ে দূষিত করছে পরিবেশ। ময়লা-আবর্জনা ঝিলের পানিতে মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

সরেজমিন হাতিরঝিল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আশপাশের বাসাবাড়ির গৃহস্থালি ময়লা-আবর্জনা, দর্শনার্থীদের ফেলা বিভিন্ন খাবারের উচ্ছিষ্ট, চানাচুর ও চিপসের প্যাকেট, পলিথিনসহ বিভিন্ন ধরনের ময়লা হাতিরঝিলের লেক পাড়ে পড়ে আছে। চারপাশে গড়ে ওঠা দোকান ও রেস্তোরাঁর ময়লাও ফেলা হচ্ছে ঝিলের পানিতে। পানিতে ভাসছে বিভিন্ন ধরনের ময়লা-আবর্জনা। পানির রং কোথাও কালচে, কোথাও গাঢ় নীল। এ ছাড়া পুরো হাতিরঝিলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতলসহ বিভিন্ন বর্জ্য, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। পান্থপথ, ধানমন্ডি ও কলাবাগান এলাকা থেকে বর্জ্য ও নোংরা পানি সোনারগাঁও হোটেলের পেছনের ড্রেনসহ মোট ১১টি পয়েন্ট দিয়ে হাতিরঝিলে ঢুকে নষ্ট করছে পানির স্বচ্ছতা। এ পানি অনেক দিন ঝিলে আটকে থাকায় ক্রমেই পানির রং কালো হয়ে বাড়ছে দুর্গন্ধ। বাতাসের  সঙ্গে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ঝিলপাড় ও আশপাশ এলাকায়। ময়লা পানির ঘনত্বে ঢেউয়ে সৃষ্টি হচ্ছে সাদা ফেনা। 

এ ছাড়া রামপুরা থেকে মগবাজার পর্যন্ত হাতিরঝিল লেক সড়কটি ডিপিডিসি কেটে বিদ্যুতের ক্যাবল মাটির নিচে নিয়েছে। পরে মাটি ভরাট করলেও বৃষ্টিতে ছোট বড় অসংখ্য খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। উলন এলাকায় নিঝুম আবাসিক কল্যাণ সমিতির ১ নম্বর গেটের সামনের সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। এই সড়কে ভূগর্ভস্থ ক্যাবল বসানো হলেও যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা হয়নি। সড়কের গর্তগুলো শুধু বালু দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। খানাখন্দের সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করার সময় বালুর গর্তে আটকে যাচ্ছে। ফলে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা।

নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণকারী শাহিনুজ্জামান বলেন, হাঁটাহাঁটি, ঘুরে বেড়ানোর জন্য রাজধানীর নানা প্রান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসেন এখানে। ময়লা-আবর্জনার কারণে যে পরিবেশ হয়েছে তাতে বেড়াতে আসা কঠিন হয়ে পড়েছে। খানাকন্দের কারণে সকালে হাঁটাও নিরাপদ হয়।

ওয়াটার ট্যাক্সিতে নিয়মিত যাতায়াত করেন রোকসানা কবির। তিনি বলেন, বছরের সবসময় যদি পানি স্বচ্ছ রাখা যেত, তাহলে এ পথে যাত্রী আরও বাড়ত। একই সঙ্গে ঢাকার সড়ক ব্যবস্থার ওপরও চাপ কমত। প্রথম প্রথম অনেকেই রুটটি ব্যবহার করত। কিন্তু নোংরা পানির কারণে এখন নৌপথের সম্ভাবনাও ধুঁকছে।

এ বিষয়ে হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হাতিরঝিলকে পরিষ্কার রাখতে আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছে। তারা প্রতিদিন সকালে হাতিরঝিলের সড়ক ও ফুটপাথের ময়লা পরিষ্কার করে। এটিকে সুন্দর রাখতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এ ছাড়া কিছু ওয়েস্টবিন নষ্ট আছে, সেগুলো মেরামতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ৫০টি বিন লাগানো হয়েছে। আরও ১৫০টি বিন বসানো হবে।  তিনি বলেন, কিছু ময়লা পরিষ্কার করে নির্দিষ্ট স্থানে রাখে কর্মীরা। একটা নির্দিষ্ট সময়ে গাড়ি এসে সেগুলো নিয়ে যায়। পানিতে দুর্গন্ধ প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, পানিতে এখন উৎকট দুর্গন্ধ নেই। তবে হালকা দুর্গন্ধ থাকতে পারে। পানির দুর্গন্ধ ঠেকাতে আমরা বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর