গাজার উত্তরের ঘনবসতিপূর্ণ জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্পে ইসরায়েলের বিমান হামলায় অন্তত ৫০ জন নিহত এবং দেড় শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওই ক্যাম্পের পাশেই ইন্দোনেশিয়া সরকার পরিচালিত একটি দাতব্য হাসপাতালের প্রধান আলজাজিরাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তবে এ বিষয়ে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। গাজা সিটির উত্তরে অবস্থিত জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্পটি ছোট্ট ওই ভূখণ্ডে থাকা আটটি শরণার্থী ক্যাম্পের মধ্যে সবচেয়ে বড়। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাসেও সেখানে ১ লাখ ১৬ হাজারের কিছু বেশি নিবন্ধিত ফিলিস্তিনি শরণার্থীর বসবাস ছিল। গাজায় হানাদার ইসরায়েলি বাহিনীর দিকে তাদের যোদ্ধারা ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে হামাস দাবি করেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির ডাক প্রত্যাখ্যান করায় ফিলিস্তিনি ছিটমহলটির মানবিক সংকট আরও গভীর হয়েছে। তিন সপ্তাহ আগে গাজার শাসক দল হামাস ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে সবাইকে বিস্মিত করে দেয়। ওই হামলায় ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে ইসরায়েলের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তারপর থেকে গাজা ভূখন্ড অবরুদ্ধ করে সেখানে অবিরাম হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী। খবর, রয়টার্স। হামাসকে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে গাজায় স্থল অভিযানের পরিসর বাড়িয়েছে ইসরায়েল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সোমবার ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণমুখে চলে যাওয়া প্রধান সড়ক সালাহ-আল-দীনকে লক্ষ্যস্থল করে এবং দুই দিক থেকে গাজা নগরীতে হামলা চালায়। ইসরায়েল হামাসের হাতে বন্দি তাদের এক সেনাকে মুক্ত করার দাবি করেছে। ৭ অক্টোবর ইহুদি রাষ্ট্রটিতে হামলা চালিয়ে যে ২৩৯ জনকে বন্দি করে নিয়ে এসেছিল হামাস এই সেনা তাদের একজন বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড জানিয়েছে, মঙ্গলবারের প্রথম কয়েক ঘণ্টায় দক্ষিণ গাজায় আক্রমণকারী ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়েছে তাদের যোদ্ধারা। তারা মেশিনগান নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করেছে এবং তাদের চারটি গাড়ি লক্ষ্য করে আল ইয়াসিন ১০৫ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। তবে লড়াইয়ের এসব ভাষ্য রয়টার্স নিশ্চিত করতে পারেনি। ইসরায়েলি বাহিনীও এ নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৩৪৫৭ শিশুসহ ৮৩০৬ জন নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলায় ইতোমধ্যে গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ১৪ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছেন। বাড়তে থাকা মৃতের সংখ্যা ও গভীরতর হতে থাকা মানবিক সংকট ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র, অন্যান্য দেশ ও জাতিসংঘকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে বাধ্য করেছে।
কিন্তু সোমবার রাতে নেতানিয়াহু টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এ আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন। ইসরায়েল হামাসকে নির্মূল করার পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।