বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

টাকা পে কার্ড চালু ব্যবহার করা যাবে যেভাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে জাতীয় কার্ড স্কিমের আওতায় ‘টাকা পে’ কার্ড চালু করেছে সোনালী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল গণভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতীয় কার্ড স্কিমটি উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আন্তর্জাতিক পেমেন্ট স্কিমের ওপর নির্ভরতা কমাতে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে, সার্বভৌম এই কার্ড বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। প্রাথমিকভাবে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি, দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড ও সোনালী ব্যাংক পিএলসি ‘টাকা পে’ কার্ড চালু করছে। তবে এদের মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকই শুরু থেকেই ইস্যুয়িং ও অ্যাকুয়ারিং  সেবা দেবে। ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির এমডি সেলিম আর এফ হোসেন, দ্য সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন, সোনালী ব্যাংকের এমডি মো. আফজাল করিম ও অন্যান্য কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ব্যাংক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিসা ও মাস্টারকার্ডের মাধ্যমে যেসব সেবা পাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত ইলেকট্রনিক পেমেন্ট প্ল্যাটফরম ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) ব্যবহারের মাধ্যমে টাকা পে জাতীয়ভাবে একই সেবা দেবে। এ কার্ডটি প্রাথমিকভাবে দেশে ব্যবহারের জন্য চালু করা হয়েছে। লেনদেনের মাশুল নির্ধারণের আগ পর্যন্ত টাকা পে কার্ড ব্যবহারের জন্য গ্রাহকের বাড়তি কোনো খরচ হবে না। টাকা পে কার্ডের ব্যবহার প্রথমে প্রতিবেশী ভারতে সম্প্রসারণ করা হবে। এ প্ল্যাটফরমে বিদেশি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান যুক্ত হলে টাকা পে বিদেশেও ব্যবহার করা যাবে। এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম বলেন, ভিসা-মাস্টারকার্ডের মতো আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ব্যবহারের জন্য আমাদের দেড় থেকে ২ শতাংশ চার্জ দিতে হয়। টাকা পে কার্ড ব্যবহারে সেই চার্জ সাশ্রয় হবে। কারণ দেশে বর্তমানে সাড়ে ৩ কোটি ডেবিট ও ২৩ লাখ ক্রেডিট কার্ড আছে। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশ লেনদেন হয় দেশে। তাই দেশের মধ্যে লেনদেনে টাকা পে কার্ড ব্যবহার করা গেলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, এই কার্ডের মাধ্যমে প্রচলিত কার্ডের চেয়ে খরচ অন্তত ৫-৬ শতাংশ কম হবে। তবে আসলে কী প্রভাব পড়ল তা ‘টাকা পে’ কার্ড চালু হলেই বোঝা যাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সোনালী ব্যাংকের গ্রাহক শাপলা খাতুন সোনালী ব্যাংকের ইস্যু করা টাকা পে কার্ড ব্যবহার করে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের চাঁদার টাকা পরিশোধ করেন। ব্র্যাক ব্যাংকের গ্রাহক নারী উদ্যোক্তা নুসরাত জাহান ব্র্যাক ব্যাংকের ইস্যু করা ‘টাকা পে’ ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইন থেকে বাসের টিকিট কেনেন। সোনালী ব্যাংকের ইস্যু করা টাকা পে কার্ড ব্যবহার করে সিটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল ইসলাম। তিনটি লেনদেনের পুরো প্রক্রিয়া প্রধানমন্ত্রীসহ উপস্থিত সবাই পর্যবেক্ষণ করেন। প্রাথমিকভাবে দেশের অভ্যন্তরীণ লেনদেনের জন্য কার্ড ব্যবহার করা যাবে। এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন, পিওএস মেশিন ও ই-কমার্স লেনদেনে এই কার্ডটি ব্যবহার করা যাবে। লেনদেন হবে নিরাপদ, সুরক্ষিত ও নির্ভরযোগ্য। আর গ্রাহকদের জন্য এটি হবে সাশ্রয়ী, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও সহজে ব্যবহারযোগ্য। 

‘টাকা পে’ কার্ড চালু উপলক্ষে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের নিজস্ব জাতীয় কার্ড স্কিমের আওতায় ‘টাকা পে’ কার্ড চালু এ দেশের ব্যাংকিং খাত প্রযুক্তির দিক থেকে আরও সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর হবে। লেনদেনে গ্রাহকদের খরচ বাঁচবে।  ‘টাকা পে’ কার্ড চালুর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে শুরুতে যুক্ত হয়েছে আটটি ব্যাংক। কার্ড ব্যবহারে গ্রাহক সংখ্যায় এগিয়ে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংক, বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক (ইবিএল), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক প্রথম দিকে ‘টাকা পে’ কার্ড ইস্যু করার সুযোগ পাচ্ছে। পরবর্তীতে অন্যান্য ব্যাংকগুলোও চাইলে এই কার্ড ইস্যু করতে পারবে। আর বাংলাদেশের জাতীয় ডেবিট কার্ড প্রস্তুতে কারিগরি বিষয় দেখভালে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্যারিসভিত্তিক পরামর্শক ‘ফিম’কে।

সর্বশেষ খবর