শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অভিনেত্রী হিমুর মৃত্যু, বন্ধু উরফি গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

অভিনেত্রী হুমায়রা নুসরাত হিমুর মৃত্যুর ঘটনায় মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ওরফে রুফি ওরফে উরফি জিয়াকে গ্রেফতার করেছেন র‌্যাব-১-এর সদস্যরা। বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১-এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর বংশাল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে গ্রেফতার উরফি হিমুর আত্মহত্যার বিষয়ে র‌্যাবকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার  পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসায় অভিনেত্রী হিমু আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। এ ঘটনায় হিমুর খালা বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় উরফিকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। হিমুর মৃত্যুর ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। পরে র‌্যাব হিমুর মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে পুরান ঢাকার বংশাল থেকে উরফিকে গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, হিমু একজন জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী এবং দুই দশকের বেশি সময় ধরে অভিনয় করেছেন। ২০১৪ সালে হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে উরফি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে পারিবারিক কারণে তাদের বিচ্ছেদ হয়। পারিবারিক আত্মীয়ের সম্পর্কের সুবাদে উরফির সঙ্গে হিমুর পরিচয় হয়। হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে উরফির বিচ্ছেদ হলেও হিমু ও উরফির মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। পরে উরফি অন্যত্র বিয়ে করলেও হিমুর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখেন। চার মাস আগে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। এক পর্যায়ে উরফি হিমুকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়মিত তার বাসায় যাতায়াত করতেন বলে জানান। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া ও বাগ্বিতন্ডার সৃষ্টি হতো। এ ছাড়া দু-তিন বছর ধরে হিমু বিংগো লাইভ অ্যাপসে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় করেছেন বলে জানান উরফি। এসব বিষয় নিয়েও বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে বাগ্বিতন্ডা ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হতো। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উরফি হিমুর উত্তরার বাসায় আসেন। পরে অনলাইন জুয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হিমু ও উরফির মধ্যে বাগ্বিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে ভাঙচুরও হয়। পরে হিমু রুমের বাইরে থেকে একটি মই এনে সিলিং ফ্যান লাগানোর লোহার সঙ্গে আগে থেকে বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের রশিতে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করবেন বলে উরফিকে জানান। হিমু আগেও তিন-চার বার আত্মহত্যা করবেন বলে উরফিকে জানালেও পরে আত্মহত্যা করেননি। এবারও আগের মতো আত্মহত্যা করার ব্যাপারে উরফিকে জানালে তিনি বিষয়টিতে গুরুত্ব দেননি। কিন্তু হিমু একটু পর বেঁধে রাখা রশি দিয়ে গলায় ফাঁস নিলে উরফি তাকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এ সময় তিনি পাশের রুমে থাকা হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে আনেন। মিহির রান্নাঘর থেকে একটি বঁটি এনে রশি কেটে তাকে নিচে নামান। উরফি বাসার দারোয়ান এবং মিহিরের সহায়তায় হিমুকে বাসা থেকে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। উরফি ‘ও’ লেভেল শেষ করে টেক্সটাইল কেমিক্যালের ব্যবসা করতেন। হিমুকে ডাক্তার মৃত ঘোষণার পর তিনি হিমুর দুটি আইফোন ও ব্যবহৃত গাড়ি নিয়ে দ্রুত সটকে পড়েন। তিনি হিমুর গাড়ি উত্তরার বাসার পার্কিংয়ে রেখে মোবাইল ফোন দুটি বিক্রির উদ্দেশ্যে বংশালে নিয়ে যান। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) জ্যোতির্ময় সাহা বলেন, ‘আমরা তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে যেটা জানতে পেরেছি, বেশ কিছুদিন ধরে অভিনেত্রী হিমু বিগো নামে একটি অনলাইন অ্যাপ ব্যবহার করতেন। একসময় ওই বিগো অ্যাপে অতিরিক্ত সময় ব্যয় শুরু করেন হিমু। এটায় আসক্ত হয়ে যান। বিষয়টি বন্ধু (প্রেমিক) উরফি সহ্য করতে পারছিলেন না। এ নিয়ে উরফির সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছিল হিমুর। উরফি তার বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। হিমুর মৃত্যুর ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় হওয়া মামলায় উরফিকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর