রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইসির সংলাপে যায়নি বিএনপি

অংশ নিয়েছে আওয়ামী লীগসহ ২৬ দল, অনুপস্থিত ১৮ দল

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইসির সংলাপে যায়নি বিএনপি

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভোটের পরিবেশ ভালো রয়েছে দাবি করলেও নির্বাচন কমিশনের আলোচনায় অংশ নিয়ে কিছু দল ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে। দলগুলো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চেয়ে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে ইসির কাছে। সিইসি বলছেন- ২৬টি দল আলোচনায় অংশ নিয়েছে। আলোচনা যথেষ্ট ইতিবাচক ছিল। নির্বাচনের পরিবেশটা অনুকূল নয়, কিছু কিছু দল এখনো অংশ নিতে পারছে না। আমরা সেটা স্বীকার করেছি। গতকাল সকাল ও বিকালে ইসির সঙ্গে আলোচনা শেষে দলের প্রতিনিধিরা গণমাধ্যমে ব্রিফিং করেন। গতকাল ৪৪টি দলের মধ্যে ২৬টি অংশ নিয়েছে। বিএনপিসহ ১৮টি দল ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি। সকালে ১৩টি দলের সঙ্গে আড়াই ঘণ্টা ও বিকালে ১৩ দলের সঙ্গে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক হয়। এ সভায় সিইসির সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। নভেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে তফসিল দেওয়ার কথা রয়েছে সংসদ নির্বাচনের।

বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মনে করি, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ আছে। আগামীতে এটা আরও ভালো হবে। আওয়ামী লীগ কখনো নির্বাচনে অরাজকতা করে না। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচনে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোট প্রয়োগ করবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে, সংবিধানের কোথাও এ কথা লেখা নেই। পৃথিবীর কোনো আইনেও লেখা নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমরা দেখেছি, নির্বাচনের সময় অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না। সুতরাং যেসব রাজনৈতিক দলের সক্ষমতা নেই, যাদের জনসমর্থন নেই, জনগণের প্রতি যাদের আস্থা নেই; তারা তো নির্বাচনে আসবেই না। ইসির সংস্কারমূলক কাজের পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি জানান, বিশেষ করে ব্যালট পেপারের পেছনে সিল এবং স্বাক্ষরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে নির্বাচন আরও অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। কমিশন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমাদের ব্রিফ করেছে। এর মাধ্যমে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আমরা আশা করছি।

জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ব্রিফিং করা হয়নি। পরে জানতে চাইলে  বৈঠকে উপস্থিত প্রতিনিধি প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া জানান, বরাবরের মতো ইসির সব ধরনের প্রস্তুতি জানানো হয়েছে। পোলিং, প্রিসাইডিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একটি পক্ষের হয়ে ভোটের দিন কাজ করলে আস্থাহীনতা তৈরি হয়।

বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান বলেন, আমরা চেয়েছি যেন সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হয়। এখানে কোনো কোনো দলের অংশগ্রহণ না হয় তাহলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সেখানে পরিবেশ সৃষ্টি করা। খেলার মাঠে এক দল খেলল আরেক দল খেলল না তাহলে খেলা তো হলো না।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘যেহেতু একটা রাজনৈতিক অস্থিরতা আছে সেই অস্থিরতা নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছুটা শঙ্কা আছে। আমরা চাই, এই শঙ্কা থেকে দেশবাসী যেন মুক্তি পায়।’ তিনি জানান, সংসদ নির্বাচন যাতে অংশগ্রহণমূলক হয়, অবাধ সুষ্ঠু হয় এবং এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ যাতে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সে ব্যাপারে কমিশনকে অর্থবহ পদক্ষেপ নিতে হবে। পেশিশক্তি ও সন্ত্রাসের দাপটমুক্ত এবং সংখ্যালঘুর ওপর নির্যাতন যেন না হয় সে বিষয়ে নজর দিতে বলেছে সাম্যবাদী দল।

জাতীয় পার্টি (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা চাই আগামী নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারুক। আগামী নির্বাচন দেশের জন্য, জাতির জন্য গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে সম্মিলিত করুক। আমরা এখানে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছি যে, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা কীভাবে অব্যাহত রাখা যায়। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশের সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারে।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমানে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো পরিবেশ দেশে নেই। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য ইসির ওপর আস্থা থাকলেও দলীয় ও সরকারের আজ্ঞাবহ প্রশাসনের কারণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সংশয় আছে। নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে দলটি অংশ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে জানান তিনি। তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, নির্বাচনে জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য কমিশনকে আরও কাজ করতে হবে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, যারা আলোচনায় আসেনি নির্বাচন কমিশনের উচিত  উদ্যোগ নিয়ে তাদের আলোচনায় নিয়ে আসা। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কমিশনকে এই উদ্যোগ নিতে হবে। কৃষক শ্রমিকের ভোটে অংশ নেওয়ার সুবিধার্থে আয়করের বিষয়টি পরিবর্তন করা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ১ শতাংশ যে সমর্থন প্রয়োজন হয় এটা উঠিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেয় জাসদ। বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) সভাপতি এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইসির অধীনে নির্বাচন হবে, সরকারের অধীনে নয়। নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক করতে কমিশনকে বলা হয়েছে।

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মোমিনুল আলম বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সিইসি রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর যেভাবে দায়িত্ব চাপিয়েছেন, তাতে ফেরেশতারা ছাড়া আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী মোকাবিলা করে নির্বাচনে টিকে থাকা সম্ভব নয়।

ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো প্রহসনের নির্বাচন আর দেখতে চায় না। আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন চাই। বাংলাদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেন বলেন, ভোট কেন্দ্র দলীয় প্রভাবমুক্ত হতে হবে। নির্বাচনে প্রার্থী  ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তাব করেছি। ইনসানিয়াত বিপ্লবের মহাসচিব রায়হান রাহবার বলেন, সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ নির্বাচন পরিচালনা করা হোক। নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হোক। গণফ্রন্টের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন জানান, জাতীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক সরকার চাই। রাজনৈতিক সরকার হলে গণফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি আইভি আহমেদ বলেন, আগামী নির্বাচনের দিকে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি রয়েছে।

সংকট নিরসনের ম্যান্ডেট নেই-সিইসি : প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সংকট নিরসনে নির্বাচন কমিশনের কোনো ম্যান্ডেট নেই। দলগুলোকেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সংকটের সমাধান করে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘স্পেস ও টাইম’ সীমিত বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিএনপিকে ভোটে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনাদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি। কেউ পছন্দ করুক বা না করুক। আপনারা আসুন। কীভাবে আসবেন, সে কোর্সটা আমরা চার্ট করে দিতে পারব না। গতকাল বিকালে নির্বাচন ভবনে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে এ কথা জানান তিনি। ৪৪টি দলের মধ্যে ২৬টির মতামত খুবই ইতিবাচক হলেও কিছু দল ভোটে অংশ না নিতে পারায় নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূল না হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন সিইসি। তিনি জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ সভার আয়োজন করা হয়েছে। এ যাবৎ প্রস্তুতি অবহিত করা, মতামত গ্রহণ করা এবং আমরাও মতামত জানিয়েছি। ২৬টি দল আলোচনায় অংশ নিয়েছে। আলোচনা যথেষ্ট ইতিবাচক ছিল। সিইসির পরিবেশ নিয়ে কেউ কেউ বলেছেন; অধিকাংশই আমাদের অবস্থানটা বুঝেছেন; নির্বাচনের পরিবেশটা অনুকূল নয়, কিছু কিছু দল এখনো অংশ নিতে পারছে না। আমরা সেটা স্বীকার করেছি।

সামর্থ্য ইসির নেই, সংকট নিজেরাই সমাধান করুন : পরিবেশ অনুকূল-প্রতিকূল হওয়াটা আপেক্ষিক মন্তব্য করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আর রাজনৈতিক যে সংকটগুলো আছে আমরা বলেছি সেগুলো সম্পর্কে আমাদের প্রত্যাশা সব সময় ইতিবাচক। কিন্তু সেই সংকট নিরসন করার সামর্থ্যটা আমাদের নেই বা আমাদের সেই ম্যান্ডেটও নেই। আমরাও বলেছি আপনারাও নিজেদের মধ্যে চেষ্টা করতে পারতেন।’

সর্বশেষ খবর