সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মেট্রোতে উচ্ছ্বাস নগরবাসীর

অফিস, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুলগামী যাত্রীদের পাশাপাশি মেট্রোরেলের পূর্ণাঙ্গ পথের আনন্দময় ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিতে মেট্রোতে চড়েছেন আরও অনেকেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

মেট্রোতে উচ্ছ্বাস নগরবাসীর

মতিঝিল রুটে মেট্রোরেলে চড়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে পেরে খুশি যাত্রীরা -জয়ীতা রায়

অবশেষে শুরু হলো উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক যাত্রা। প্রায় এক বছর ধরে উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলাচল করা মেট্রোরেল গতকাল সাধারণ যাত্রীদের নিয়ে গেছে মতিঝিল স্টেশন পর্যন্ত। আধুনিক পরিবহনে স্বস্তি ও দ্রুতগামী এই যাত্রাকে ঘিরে নগরবাসীর উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। অফিস, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুলগামী যাত্রীদের পাশাপাশি মেট্রোরেলের পূর্ণাঙ্গ পথের আনন্দময় ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিতে মেট্রোতে চড়েছেন আরও অনেকেই।

যানজটের নগরী রাজধানী ঢাকায় যানজটের তীব্রতায় সামান্য দূরত্ব পাড়ি দিতেও লেগে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সেই শহরেই দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার পথ আধা ঘণ্টার কিছু বেশি সময়ে পাড়ি দিতে পারার অভিজ্ঞতাকে স্বপ্নের মতো বলেই ব্যাখ্যা করলেন গতকাল মেট্রোতে চড়া যাত্রীরা। অনেককেই দেখা গেছে সেলফি তুলে এই অভিজ্ঞতাকে ফ্রেমবন্দি করে রাখতে। তাদেরই একজন আনোয়ার হোসেন। চাকরির সুবাদে কাজীপাড়া স্টেশন থেকে মেট্রোতে চেপে মতিঝিল এসে আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত তিনি। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, এত অল্প সময়ে মতিঝিলে চলে আসব কখনো ভাবিনি। যানজটের এই শহরে মেট্রোরেলের এ যাত্রা আসলেই স্বপ্নের মতো। আমার অফিস মতিঝিলে। আগে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল সীমাবদ্ধ থাকায় এ সুবিধাটা পাইনি। আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিরক্তিকর যানজটে বসে থেকে অফিসে আসার যে দুর্ভোগ তার অবসান হলো।

আগারগাঁও থেকে মতিঝিলে এসেছেন শিকদার রাব্বি। তিনি বলেন, একটা কাজে মতিঝিলে এসেছি। অবরোধে গাড়িও ঠিকঠাক চলছে না। যেগুলো চলছে সেগুলোতে মানুষের ভিড়। তাছাড়া অবরোধে পাবলিক পরিবহনে চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ। সবকিছু ভেবেই মেট্রোরেলে উঠেছি। কোনো ঝামেলা ছাড়াই অনেক সহজে সুন্দরভাবে চলে এসেছি।

আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের চলাচল ছিল পূর্ব নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। এই চার ঘণ্টায় যাত্রীরা উঠতে নামতে পেরেছেন মতিঝিল, সচিবালয় ও ফার্মগেট স্টেশনে। তবে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনে মেট্রো চলাচল ছিল আগের মতোই রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে, আগামী তিন মাসের মধ্যে ধীরে ধীরে সময় বাড়িয়ে দুই অংশের মেট্রো চলাচলের সময় সমান করা হবে। খুলে দেওয়া হবে বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন।

সে হিসেবে আগামী বছর মার্চের শুরু থেকেই মেট্রোরেলের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা পাবে নগরবাসী।

এ ছাড়া, ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশ চালুর লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। এ অংশের কাজ শেষ হলে কমলাপুর রেলস্টেশনে আসা-যাওয়া করা যাত্রীরাও পাবেন মেট্রোরেলের সুবিধা। ২১.২৬ কিলোমিটারের এই পুরো রুটটিতে প্রতি ঘণ্টায় পরিবহন করা সম্ভব হবে ৬০ হাজার যাত্রী।

এমআরটি লাইন-৬ এর কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের প্রথম ধাপের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমে পরিকল্পনা ছিল উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। পরে ১.১৬ কিলোমিটার বাড়িয়ে সিদ্ধান্ত হয় কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত নেওয়ার। মূল ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। বর্ধিত ১.১৬ কিমির জন্য ব্যয় ধরা হয় ১১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। সর্বমোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এতে উন্নয়ন সহযোগী জাইকার অর্থায়ন ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা এবং সরকারি অর্থায়ন ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।

উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের ভাড়া ১০০ টাকা। তবে স্মার্ট কার্ডে ভাড়া পরিশোধ করলে ১০ শতাংশ রেয়াতের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে মেট্রোরেল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ডিএমটিসিএল। অর্থাৎ মেট্রোরেলে প্রতি কিলোমিটার যেতে যাত্রীদের ভাড়া গুনতে হবে ৫ টাকা। যাত্রীপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা।

সর্বশেষ খবর