সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রভিডেন্ট ফান্ডের কর কমছে ১৫ শতাংশ!

শাহেদ আলী ইরশাদ

বেসরকারি খাতের কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি তহবিল ও শ্রমিকদের লভ্যাংশের তহবিলের কর কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এসব তহবিলের জন্য ঘোষিত কর ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ কমাতে চায় তারা। বেসরকারি কর্মীদের দাবি, এফবিসিসিআইয়ের  সুপারিশের আলোকে এ সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর। তবে বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন করলেই তা বাস্তবায়ন করা যাবে। এ জন্য জারি করতে হবে এসআরও। তখন এ ধরনের তহবিলকে দিতে হবে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ কর। প্রভিডেন্ট ফান্ডের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ সময় আগামী ৩০ নভেম্বর। তবে তার আগেই কর কমানোর এসআরও জারি না হলে এ সিদ্ধান্তের সুফল পাবেন না বেসরকারি কর্মীরা।

জানা যায়, চলতি বছরের ৩০ জুন থেকে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের আয়ের কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছিল। পাশাপাশি বেসরকারি খাতের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি তহবিল ও শ্রমিকদের লভ্যাংশের তহবিলে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। অথচ একই সময়ে সরকারি চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং অন্যান্য তহবিলের আয় করমুক্ত ঘোষণা করা হয়। এতে  উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ হিউম্যান রিসোর্স অর্গানাইজেশন (এফবিএইচআরও)। তারা সরকারকে জানান, রাজস্ব আদায়ে এমন বিধানের ফলে বেসরকারি খাতের নিয়োগকর্তাদের সঞ্চয়প্রবণতা এবং এ ধরনের তহবিল গঠনকে নিরুৎসাহিত করতে পারে। তাই প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ অন্যান্য তহবিলের কর পুনর্বিবেচনার জন্য এনবিআরকে অনুরোধ করেন তারা। গত ৩ অক্টোবর এফবিসিসিআই  এবং ১০ অক্টোবর এফবিএইচআরও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হয় এনবিআরকে।

এনবিআর সূত্র জানায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বৈঠক করে প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ অন্যান্য তহবিলের কর পুনর্বিবেচনার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এসআরও (সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রণ আদেশ) জারি করতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে কর পুনর্বিবেচনার বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। তাতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম লিখেন, বেসরকারি খাতের কর্মচারীদের অবসর-পরবর্তী সুবিধা বিবেচনা করে পরিবর্তন আনতে অনুমোদন প্রয়োজন। উচ্চ করের কারণে বেসরকারি খাতের নিয়োগকর্তাদের সঞ্চয়প্রবণতা এবং এ ধরনের তহবিল গঠনকে নিরুৎসাহিত করতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এফবিসিসিআই এবং এফবিএইচআরও। তারা মনে করছে, এটি কার্যকর হলে সরকারি এবং বেসরকারি খাতের কর্মচারীদের মধ্যে চাকরির সুবিধার ক্ষেত্রে বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। এনবিআর চেয়ারম্যান আরও লিখেছেন, ব্যাংক ও অন্যান্য সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জমা প্রভিডেন্ট ফান্ডের মতো তহবিলের সুদের ওপর কর আদায় করা হলেও চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত  রিটার্ন জমা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বেসরকারি খাতের সেটা পায়নি। বেসরকারি খাতের কর্মকর্তারা এনবিআরকে জানিয়েছেন, রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করায় প্রভিডেন্ট ফান্ডের মতো তহবিল রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। কারণ রিটার্ন জমা দিতে হলে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যানদের কাছ থেকে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন নিতে হবে। অন্যদিকে প্রভিডেন্ট ফান্ডের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ সময় চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর। তাই এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আশা করেন এফবিসিসিআই এবং এফবিএইচআরও নেতারা।

সর্বশেষ খবর