সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কোহিনুরের মৃত্যু রহস্য কাটেনি

হত্যা মামলায় স্বামী কারাগারে

আলী আজম

রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭১ নম্বর মুনস্টোন পার্কের বাসা থেকে কোহিনুর বেগমের (৬৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ১০ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি ডিপার্টমেন্টের সাবেক এই ছাত্রীর লাশ উদ্ধারের পর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। তবে কোহিনুরের পরিবার বলছে, পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

আর মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই বলছে, এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

পিবিআই সূত্র জানায়, কোহিনুরের মৃত্যুর পর স্থানীয় থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়। ময়নাতদন্তের পর শ্বাসরোধে হত্যার আলামত পায় পুলিশ। পরে স্ত্রী খুনের অভিযোগে মেয়েসহ শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়। বতর্মানে স্বামী কারাগারে থাকলেও নিহতের মেয়ে জামিনে আছেন। ধানমন্ডির ওই বাসায় ছেলে সাবিক নূর রশিদ ও দত্তক মেয়ে ফাইজা নূর রশিদকে নিয়ে থাকতেন কোহিনুর বেগম ও তার স্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিক্যুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মামুন রশিদ চৌধুরী। কোহিনুর বেগম আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেন তার স্বামী অধ্যাপক মামুন। ঘটনার দিন রাতেই তিনি অপমৃত্যুর মামলা করেন। কিন্তু কোহিনুরের থুতনির নিচে দুটি দাগ স্বজনদের মনে সন্দেহ তৈরি করে। পরে স্বজনদের অভিযোগে পুলিশ তার লাশ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। ময়নাতদন্তে আলামত মেলে খুনের। কোহিনুর বেগমকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

কোহিনুরের ভাই ফ্লাইট লে. ও ক্যাপ্টেন (অব.) সালাউদ্দিন ম. রহমতুল্লাহ বলেন, লাশের ময়নাতদন্ত না করতে মামুন আমাকে অনেক পীড়াপীড়ি করে। ময়নাতদন্ত যেন না হয় সে জন্য আমার কাছে একটা কাগজও নিয়ে আসে মামুন। কিন্তু আমি বিষয়টি না বুঝে ওই কাগজে স্বাক্ষর করে দেই। পরে বাসায় এসে কম্পিউটারে বিভিন্ন আত্মহত্যার ছবি দেখি, কিন্তু কোথাও আমার বোনের মতো থুতনির নিচে আত্মহত্যা দাগ দেখিনি। পরে আমি ধানমন্ডি থানার ওসিকে ফোন করে ময়নাতদন্ত করার জন্য অনুরোধ করি।

স্বজনরা বলছেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ১৫ জুলাই ধানমন্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের ভাই সালাউদ্দিন ম. রহমতুল্লাহ। মামলায় অধ্যাপক ড. মামুন রশিদ চৌধুরী ও দত্তক মেয়ে ফাইজা নূর রশিদকে আসামি করা হয়। এরপরই তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। কোহিনুরের স্বামী অধ্যাপক মামুন কারাগারে আছেন। তার মেয়ে সম্প্রতি জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। স্বজনরা আরও বলছেন, ৪৬ বছর আগে মামুনের সঙ্গে বিয়ে হয় কোহিনুরের। বিয়ের ১৪ বছরেও সন্তান না হওয়ায় ফাইজাকে দত্তক নেন তারা। এর দুই বছর পরই ওই দম্পতির ঘরে আসে এক ছেলে সন্তান। মেয়েকে মামুন অঢেল টাকা দিতেন। এই টাকায় বেপরোয়া জীবনযাপন করত ফাইজা। ঘটনার পর অধ্যাপক মামুন কোহিনুরের স্বজনদের জানিয়েছেন, ঘটনার দিন দুপুরে তিনি বাসায় গিয়ে দেখেন তার স্ত্রী কোহিনুর ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে আছেন। তিনি একাই চেয়ারের ওপরে দাঁড়িয়ে কাঁচি দিয়ে ওড়না কেটে তাকে নামিয়ে হাসপাতালে নেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার স্ত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে স্বজনদের অনুরোধে হাসপাতাল থেকে কোহিনুরের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। ময়নাতদন্তের পর তার লাশ শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানা গেছে, কোহিনুর বেগম ছিলেন ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে দুই পুত্র সন্তানসহ নিজেও শহীদ, তদানীন্তন যশোর নিবাসী অবসরপ্রাপ্ত সাব-ডেপুটি কালেক্টর ও যশোর জেলা জজ কোর্টের সম্মানসূচক ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রহমতুল্লাহর কন্যা। চাকরি জীবনে কোহিনুর ছিলেন রেনেটা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রাক্তন মার্কেটিং ম্যানেজার পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত একজন ফার্মাসিস্ট।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অতিরিক্ত এসপি সারোয়ার জাহান জানান, মামলার তদন্তে অনেক বিষয় সামনে এসেছে। সেগুলো মাথায় রেখে মামলার সার্বিক কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ে দায়িত্বরত এসআই শাহিন মিয়া বলেন, হত্যা মামলা হওয়ার দেড় মাস পর পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব পায়। মামলার সার্বিক দিক সামনে রেখে তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। মামলাটি ব্যাপক তদন্তের মাধ্যমে সঠিক রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

সর্বশেষ খবর