বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
রাজপথে দুই দল

অবরোধে আগুন সংঘর্ষ গুলি, গ্রেফতার অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবরোধে আগুন সংঘর্ষ গুলি, গ্রেফতার অব্যাহত

সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের মদনপুর এলাকায় গতকাল যানবাহন ভাঙচুর করেন অবরোধ সমর্থকরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সরকার পতনের দাবিতে বিএনপির ডাকা তৃতীয় দফা অবরোধের প্রথম দিন গতকাল রাজধানীতে যানবাহন প্রায় স্বাভাবিক দিনের মতো চললেও যানজট অনেকটা কম ছিল। এদিন রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, গুলি, ভাঙচুর ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে।

গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর তাঁতীবাজার, কাকলী ও রাতে জিগাতলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ফটকের সামনে যাত্রীবাহী তিনটি বাসে এবং গাজীপুরের মাওনায় একটি বাসে আগুন দেয় অবরোধকারীরা।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার সাপমারায় আগুন দেওয়া হয়েছে ফাইভ স্টার কুরিয়ার সার্ভিসের কাভার্ড ভ্যানে। বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে পুলিশের গুলিতে জামায়াতের ১০ জন আহত হয়েছেন। যদিও পুলিশ বলছে, নিজেদের ককটেল বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন তারা।

অন্যদিকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী সাইয়েদ্যুল আলম বাবুলসহ ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে আরও ৫১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। এ নিয়ে ১২ দিনে দলটির ৯ হাজার ৪৬৬ জনকে গ্রেফতার করা হলো। তবে ডিএমপি বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে।  মামলা হয়েছে পাঁচটি। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাঁতীবাজারে আকাশ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় অবরোধকারীরা। রাত পৌনে ৮টার দিকে কাকলীতেও একটি বাসে দিয়েছে তারা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

র‌্যাবের অভিযানে আরও ৩৩ গ্রেফতার : র‌্যাবসূত্র জানিয়েছেন, অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে নাশকতা, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে র‌্যাবের অভিযানে আরও ৩৩ জন গ্রেফতার হয়েছেন। এ নিয়ে গত ১২ দিনে র‌্যাবের অভিযানে ২৫১ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এদিকে ডিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) কে এন রায় নিয়তি বলছেন, বিএনপি-জামায়াতের ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের পর সহিংসতার ঘটনায় ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১১ দিনে ঢাকায় বিএনপির ১ হাজার ৬৯৬ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ১১ দিনে মামলা হয়েছে ১১৭টি।

বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : নোয়াখালীতে নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলায় জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা নিজাম উদ্দিন ফারুককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া সোনাইমুড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক কামালকে (৬৫) গ্রেফতার করা হয়েছে। বগুড়ায় অবরোধের প্রথম দিন যানবাহন ভাঙচুর, সিএনজিতে আগুন, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। নাশকতার সময় পুলিশের ধাওয়া ও রাবার গুলির মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছেন বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। এসব পৃথক ঘটনায় অবরোধকারী ১০ নেতা-কর্মী আহত হওয়ার দাবি করা হয়েছে। আর জেলা পুলিশ বলছে, তাদের নিজেদের ককটেল বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন। ফেনী কলেজ ছাত্রদলের ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সকালে কলেজের প্রবেশমুখে তালা লাগানোর ঘটনায় তাকে সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা যায়। এদিকে সকালে ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের মহিপালে ঝটিকা বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার সাপমারায় ফাইভ স্টার কুরিয়া সার্ভিসের কাভার্ড ভ্যানে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। কাভার্ড ভ্যানটি ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি আসছিল। চট্টগ্রামে ঝটিকা মিছিল ও পিকেটিং করেছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। অবরোধের সমর্থনে পূর্ব নাসিরাবাদ, ডবলমুরিং, বাকলিয়ায় ঝটিকা মিছিলের খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের লালিয়ারহার, সীতাকুন্ডের বাঁশবাড়িয়ার মগপুকুরসহ কয়েকটি এলাকায় বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা অবরোধের সমর্থনে মিছিল করেছেন। সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের মদনপুরে অবরোধের সমর্থনে মিছিল করেছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা একটি বাসসহ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেন। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নেতা-কর্মীরা প্রায় আধাঘণ্টা মদনপুর ত্রিমুখী সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধের সমর্থনে স্লোগান দিয়ে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় নাশকতার অভিযোগে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দুটি পৃথক মামলা করেছে পুলিশ। এ ছাড়া একটি মামলায় পাঁচটি ককটেল উদ্ধারসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সকালে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গতকাল যানবাহন সংকট ছিল। তবে বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ থাকলেও আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করেছেন কর্মজীবীরা। সকাল থেকে দূরপাল্লার বাস দেখা না গেলেও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কিছুু স্থানীয় যানবাহন চলাচল করে। এ ছাড়া পুরোপুরি অবৈধ অটোরিকশা-সিএনজিসহ ছোট যানবাহনের দখলে ছিল মহাসড়কটি। বিএনপির অবরোধের তেমন প্রভাব পড়েনি কুষ্টিয়ায়। শুধু ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহীগামী দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে বাস ও ছোট যানবাহন চলাচল করেছে আশপাশের জেলাগুলোয়।

সর্বশেষ খবর