শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র

বঙ্গোপসাগর ঘিরে পাল্টে যাচ্ছে জনপদ

জিন্নাতুন নূর

বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে মাতারবাড়ী ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট (৬০০ মেগাওয়াট) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এরই মধ্যে কেন্দ্রটির উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

কয়েক বছর আগেও এ দ্বীপ উপজেলার বাসিন্দারা যেখানে উন্নত জীবনের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না, সে এলাকার লোকজনই এখন এ প্রকল্পের জন্য নির্মিত যোগাযোগব্যবস্থার সুফল পাচ্ছেন। আবার স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হওয়ায় দ্রুত বদলে যাচ্ছে এ এলাকার মানুষের জীবনমান। মাতারবাড়ীর এ প্রকল্পের ফলে স্থানীয় ২ হাজার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হয়েছে। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নের ১ হাজার ৪১৪ একর জমির ওপর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অঙ্গপ্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করেছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে ২০১৪ সালের ১৬ জুন বাংলাদেশ সরকার এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (জাইকা)-এর মধ্যে একটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিটির আওতায় জাইকা ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা প্রকল্পসহায়তা হিসেবে দেয় এবং বাংলাদেশ সরকার ও সিপিজিসিবিএলের নিজস্ব তহবিল থেকে অবশিষ্ট ৭ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা প্রদান করা হয়।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পরীক্ষামূলক উৎপাদনের কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার সম্মতি দিয়েছেন। এ প্রকল্প ঘিরে মাতারবাড়ীতে যোগাযোগব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটছে। এটি বাস্তবায়নের ফলে এ এলাকার মানুষের জীবনমান ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটেছে। দুই ইউনিটের মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি গত ২৯ জুলাই পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। প্রতিটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ৬০০ মেগাওয়াট। প্রথম ইউনিটটি রেকর্ড ৬১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লিটি ২২ সেপ্টেম্বর স্থাপন করা হয়।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সূত্র জানান, গভীর সমুদ্রবন্দরের কাছে অবস্থিত মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। প্লান্ট থেকে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন ১৩ হাজার ১০৪ টন কয়লার প্রয়োজন হবে। জানা গেছে, প্রকল্প কর্তৃপক্ষ প্লান্টে কয়লা পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য জেটি এবং সাইলো নির্মাণ করেছে। এ সাইলোর ৬০ দিনের জন্য কয়লা সঞ্চয় করার ক্ষমতা রয়েছে। ৮০ হাজার টন কয়লা ধারণক্ষমতার মাদার ভেসেল সহজেই জেটিতে নোঙর করতে পারবে। আর মাদার ভেসেল থেকে কয়লা আনলোড করতে মাত্র এক থেকে দুই দিন লাগবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নিজস্ব জেটিতে মাদার ভেসেল প্রবেশের জন্য একটি ১৪ দশমিক ৩ কিমি দীর্ঘ ও ৩০০ মিটার প্রশস্ত চ্যানেল খনন করা হয়েছে। ছাই ব্যবস্থাপনা মোকাবিলার জন্য এখানে একটি ছাই রাখার পুকুর খনন করা হয়েছে; যাতে ২৫ বছর ধরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই সংরক্ষণ করা যাবে। ৯০ একর ও ৬০০ একর জমিজুড়ে দুটি পৃথক ছাইপুকুর এবং কয়লা সংরক্ষণের জন্য ৮০ একর জমিতে কোল ইয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, ঘূর্ণিঝড় বা জোয়ারভাটায় এর কোনো ক্ষতি হবে না। এজন্য সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪ মিটার উঁচুতে একটি বাঁধ ও বাঁধের ভিতরে ১০ মিটার উচ্চতার অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি উচ্চ জোয়ারের কথা মাথায় রেখেই ডিজাইন করা হয়েছে। জানা যায়, ৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিটটি উদ্বোধনের ছয় মাস পর দ্বিতীয় ইউনিটটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসবে। এ প্রকল্পে আমদানি করা কয়লা লোড-আনলোড জেটি, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, টাউনশিপ, স্থানীয় এলাকার বিদ্যুতায়ন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংযোগসড়ক নির্মাণের মতো আধুনিক বৈশিষ্ট্য থাকবে। প্রসঙ্গত, জাপানের সুমিতোমো করপোরেশন, তোশিবা করপোরেশন ও আইএইচআই করপোরেশনের কনসোর্টিয়ামকে মাতারবাড়ী আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ইপিসি ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের অধীনে ১৫টির অধিক সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে।

সর্বশেষ খবর