শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

শুরু হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর টার্মিনাল নির্মাণ

বঙ্গোপসাগর ঘিরে পাল্টে যাচ্ছে জনপদ

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। আগামী শনিবার প্রধানমন্ত্রী গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পাশাপাশি উদ্বোধন করবেন বন্দরের চ্যানেলের। এর মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতির জন্য আরেকটা দিগন্ত সূচনা হচ্ছে। মহেশখালীর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে ট্রানজিট ভোগান্তি ছাড়াই ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরাসরি পণ্য পরিবহনের সুযোগ পাবেন ব্যবসায়ীরা। এতে পরিবহন ব্যয় কমবে ৩০ শতাংশ। একই সঙ্গে পণ্য খালাসে সময়েরও সাশ্রয় হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, ‘আগামী শনিবার প্রধানমন্ত্রী গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর ও চ্যানেল উদ্বোধন করবেন। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যা দেশের জিডিপি ও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হবে। একই সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে বৈদেশিক আয়ও।’ তিনি বলেন, ‘মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে আমদানি-রপ্তানির জন্য সিঙ্গাপুর, কলম্বো কিংবা কেলাং বন্দরকে ব্যবহার করতে হবে না ব্যবসায়ীদের। মাতারবাড়ী থেকেই সরাসরি পণ্য পরিবহন করা যাবে। এতে সময় এবং পরিবহন ব্যয় দুটো কমবে। বাংলাদেশ ছাড়াও প্রতিবেশী দেশগুলো মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে পারবে। এতে অত্র অঞ্চলের বাণিজ্যিক হাবে পরিণত হবে মাতারবাড়ী।’ দেশে গভীর সমুদ্রবন্দর না থাকায় ইউরোপ এবং আমেরিকায় পণ্য রপ্তানির জন্য তৃতীয় কোনো দেশের গভীর সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কার কলম্বো কিংবা মালয়েশিয়ার কেলাং বন্দর ব্যবহার করছে। তৃতীয় দেশের গভীর সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করায় একদিকে ৩০ শতাংশ বাড়তি পরিবহন ব্যয় হচ্ছে। অন্যদিকে পরিবহন সময় ১০ থেকে ১৫ দিন বাড়তি লাগছে। দেশের আমদানি-রপ্তানি ব্যয় কমাতে এবং গতিশীল করতে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। জানা যায়, দেশের আমদানি-রপ্তানি গতিশীল এবং ব্যয় কমাতে মহেশখালী লবণ ভূমিতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরই মধ্যে প্রকল্পটির ড্রয়িং ডিজাইন শেষ হয়েছে। ২০২৬ সালে গভীর সমুদ্রবন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরুর প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে থাকবে একটি ৩০০ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ, একটি ৪৬০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার জাহাজ বার্থিং জেটি। বন্দরে থাকবে তিনটি টাগবোট, একটি পাইলট বোট, একটি সার্ভে বোটসহ কার্গো হ্যান্ডেলিং ইক্যুইপমেন্ট টিওএস অ্যান্ড সিকিউরিটি সিস্টেম। গভীর সমুদ্রবন্দরকে জাতীয় মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক। সিভিল ওয়ার্কের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে উত্তর দিকে ২ হাজার ১৫০ মিটার ঢেউ নিরোধক বাঁধের মধ্যে ৩৯৭ মিটার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় ১৪ দশমিক ৩ কিমি দীর্ঘ এবং ২৫০ মিটার প্রস্থ, ১৮ দশমিক ৫ মিটার (এমএসএল) গভীরতার একটি চ্যানেল খনন করা হয়। ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী চ্যানেলের প্রস্থ ১০০ মিটার বাড়িয়ে ৩৫০ মিটারে উন্নীত করা হয়। নির্মিত চ্যানেল ও হারবার নিরাপদ ও সুরক্ষিত করার জন্য সিপিজিসিবিএল ১ হাজার ৭৫৩ মিটার উত্তর ব্রেকওয়াটার (ঢেউ নিরোধক বাঁধ), ৭১৩ মিটার দক্ষিণ ব্রেকওয়াটার এবং উত্তর দিকে ১৮০২ দশমিক ৮৫ মিটার রিভেটমেন্ট নির্মাণ করে। শনিবার গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পাশাপাশি চ্যানেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সর্বশেষ খবর