শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

তুমুল যুদ্ধ গাজায়

শতাধিক সামরিক যান ধ্বংসের দাবি হামাসের

প্রতিদিন ডেস্ক

তুমুল যুদ্ধ গাজায়

অবরুদ্ধ গাজার স্থলভাগ কবজা করার পর ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে মাটির নিচে অবস্থান নেওয়া ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে। হামাস দাবি করেছে, তারা ১০ দিনে ইসরায়েলি বাহিনীর ট্যাংকসহ ১৩৬টি সামরিক যান ধ্বংস করেছে এবং এখন সব ফ্রন্টে প্রচ- প্রতিরোধ যুদ্ধ চলছে। অন্যদিকে গতকাল ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, তারা ১০ ঘণ্টার লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে হামাসের একটি সামরিক ঘাঁটি দখল করতে সক্ষম হয়েছে। সূত্র : আলজাজিরা, পার্স টুডে, এএফপি, রয়টার্স, টাইমস অব ইসরায়েল।

একটি খবর অনুযায়ী, ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধারা গত ১০ দিনে ইসরায়েলের ১৩৬টি সামরিক যান সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস করেছে বলে খবর দিয়েছেন হামাসের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আবু ওবায়দা। তিনি বুধবার বিকালে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান। বিবৃতিটি হামাস নিয়ন্ত্রিত আল-আকসা টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, গাজায় স্থল অভিযান শুরু করার পর থেকে দখলদার ইসরায়েলি সেনারা মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। ট্যাংকসহ তাদের ১৩৬টি সামরিক যান ধ্বংস এবং প্রচুর সংখ্যক দখলদার সেনা হতাহত হয়েছে। তেল আবিব তার সেনাদের হতাহতের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করছে না বলে আবারও জানান আবু ওবায়দা। ইসরায়েলি সেনাদের বর্বরতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ইহুদিবাদী শত্রুরা সামনে যাকে পাচ্ছে তাকেই হত্যা করছে, মানুষ কিংবা পশুর মধ্যে কোনো বাছবিচার করছে না।

আল-কাসসাম ব্রিগেডের এই মুখপাত্র ইসরায়েলের সঙ্গে বন্দিবিনিময় করতে হামাসের প্রস্তুতি ঘোষণা করে বলেন, ইসরায়েলি কারাগারে যেমন ফিলিস্তিনি নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রয়েছেন- তেমনি হামাসের কাছেও ইসরায়েলি নারী, শিশু ও বৃদ্ধ বন্দি রয়েছেন। হামাসের হাতে আটক যে কোনো ধরনের বন্দিকে মুক্ত করতে হলে ইসরায়েলের হাতে আটক একই ধরনের বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে। আবু ওবায়দা বলেন, তাদের হাতে আটক ইসরায়েলি সেনাদের মুক্ত করতে হলেও ইসরায়েলের হাতে আটক ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের মুক্তি দিতে হবে। ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্ত করে নেওয়ার একটিই উপায় আছে, আর তা হচ্ছে বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া। তিনি বিবৃতির শেষাংশে বলেন, ‘আমরা দখলদার শক্তিকে এই সুসংবাদ দিতে চাই যে, আল্লাহর ইচ্ছায় গাজার পাশাপাশি পশ্চিম তীর ও আল-কুদসসহ সব ফ্রন্টে প্রতিরোধ যুদ্ধের নতুন পর্যায় শুরু করা হবে। আমরা সব ফ্রন্টে এই আগ্রাসন প্রতিহত করে যাব এবং আমাদের যোদ্ধারা শত্রুদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।’ অপর এক খবরে বলা হয়েছে, টানা ১০ ঘণ্টা লড়াইয়ের পর গাজা উপত্যকার স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের শক্তিশালী একটি ঘাঁটির দখলে নেওয়ার দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনারা। গতকাল এক বিবৃতিতে এই দাবি জানিয়েছে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলীয় শহর জাবালিয়ার পশ্চিমাংশে অবস্থিত এই ঘাঁটিটি অবস্থিত। আউটপোস্ট-১৭ নামের ওই ঘাঁটিটির সঙ্গে বেশ কয়েকটি সুড়ঙ্গ সংযুক্ত। ঘাঁটি ও সুড়ঙ্গ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক জব্দের দাবিও করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে বুধবারের লড়াইয়ে আল কাসেম ব্রিগেড এবং ইসলামিক জিহাদের কয়েক ডজন সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করলেও নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কিত কোনো তথ্যই দেয়নি আইডিএফ। অবশ্য প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, পশ্চিম জাবালিয়ায় যখন নাহাল ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেডের সঙ্গে আল কাসেম ব্রিগেড ও ইসলামিক জিহাদের সংঘাত চলছে, তখনো গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় হামাসের স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। এদিকে গাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, স্থলপথে ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে প্রচ- যুদ্ধ ও আকাশ থেকে নির্বিচারে বোমা বর্ষণের কারণে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নাগরিক মাইলের পর মাইল হেঁটে গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে চারদিক থেকে চেপে ধরতে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের তৎপরতা আরও জোরদার করছে। তবে হামাস বলছে, তারা অত্যন্ত সফলভাবে ইসরায়েলি বাহিনীর মোকাবিলা করছে এবং সেনাদের ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান ধ্বংস করে দিচ্ছে। এদিকে গাজার উত্তরাঞ্চলে জাবালিয়া শরণার্থী শিবির ও পশ্চিমাঞ্চলের সাবরা এলাকায় রাতভর ইসরায়েলের ব্যাপক বোমাবর্ষণে বহু ফিলিস্তিনি হতাহত হয়েছেন।

এ ছাড়া অধিকৃত পশ্চিম তীরের তুবা শহরে ইসরায়েলি সামরিক যানবাহন প্রবেশ করার পর ব্যাপক ভারী গোলাবর্ষণের শব্দ পাওয়া গেছে। সামজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশিত ভিডিওতে যানবাহনগুলোকে রাস্তার বেষ্টনী ভেঙে চলাচল করতে দেখা যায়। গাজার সবচেয়ে বড় আল-শিফা হাসপাতাল বিরাজ করছে বিপর্যয়কর অবস্থা। সেখানে জরুরি বিভাগের কক্ষগুলোতে ঠাসাঠাসি করে অবস্থান করছেন রোগীরা। হাসপাতালের মেঝে, চলাচলের পথ, এমনকি বাইরেও রোগীদের চিকিৎসা চলছে। ফিলিস্তিনিদের শরণার্থী বিষয়ক সাহায্য সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, আল-শিফা হাসপাতালে প্রতি বিছানায় দুজন করে রোগীর চিকিৎসা চলছে। তবে শঙ্কার কথা হলো প্রতি ঘণ্টায় আহত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, বুধবার সাহায্যপণ্য নিয়ে মিসরের রাফাহ ক্রসিং হয়ে ১০৬টি ট্রাক প্রবেশ করেছে গাজায়। এ ছাড়া কুয়েত থেকে পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্সও সীমান্ত অতিক্রম করে গাজায় প্রবেশ করে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর