শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিক্ষোভ করলে কাজ নেই মজুরি নেই নিয়মে চলবে কারখানা

শাহেদ আলী ইরশাদ

ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার পরও পোশাকশ্রমিকরা আন্দোলন ও কারখানা ভাঙচুর করলে আবারও ‘কাজ নেই মজুরি নেই’ নিয়ম চালু করবেন মালিকরা। অনিবন্ধিত শ্রমিক সংগঠনগুলো নিজেদের গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য শ্রমিকদের উসকানি দিচ্ছে। তবে এসব উসকানিতে সাড়া না দিয়ে কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রমিক প্রতিনিধিরা।

মঙ্গলবার সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা প্রত্যাখ্যান করে কিছু জায়গায় বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। গাজীপুরে তৈরি পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভে গুলিতে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম আনজুয়ারা বেগম (২৪)। এ ছাড়া জামাল উদ্দিন নামে আরও এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, সফিপুর, মৌচাকসহ আশপাশের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছেন। এর মধ্যে মঙ্গলবার পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা প্রস্তাব করে মজুরি বোর্ড। তবে মজুরি বোর্ড ঘোষিত বেতন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শ্রমিকরা। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার সকাল ৭টার পর বিক্ষোভ শুরু করেন পোশাকশ্রমিকরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম গতকাল বলেছেন, শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার পরও পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিশৃঙ্খলায় অংশ নিয়ে কাজ বন্ধ রাখলে কিংবা বিশৃঙ্খলার কারণে কারখানা বন্ধ রাখতে হলে শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা অনুযায়ী ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ বা ‘কাজ নেই মজুরি নেই’ এ নিয়ম কার্যকর হবে। তিনি বলেন, অনেক শ্রমিক নতুন মজুরিকাঠামোকে স্বাগত জানিয়েছেন। সবাই সন্তুষ্ট। কিছু লোক আছে, তাদের কাজই হলো গন্ডগোল করা। আন্দোলন করে তাদের জীবন চলে। প্রকৃত শ্রমিকদের সমস্যা নেই, তারা কাজ করছেন। বাইরের কিছু লোক উসকানি দিচ্ছে। সমস্যা হলো আমাদের তৈরি পোশাক খাতে ১৫০টির বেশি শ্রমিক ফেডারেশন আছে, যার মধ্যে মাত্র ৫৬টি নিবন্ধিত। বাদবাকি সব সংগঠন বাইরের। তারাই উসকানিমূলক কাজকর্ম করে নিজেদের গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য। শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, এটা ঠিক না, শিল্পই যদি না থাকে শ্রমিকরা বাঁচবে কীভাবে। ১২ হাজার ৫০০ টাকা দিতে গিয়েই অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। যদি কোনো শ্রমিক কাজ না করেন তাহলে কাজ নেই মজুরি নেই ভিত্তিতে কারখানা চালু রাখা হবে। ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার পরও পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শ্রমিকদের কাজের ধরন অনুযায়ী পাঁচটি গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। মালিকরা বেতন দেবে, শ্রমিকরা বেতন পাবে। এখানে তৃতীয় পক্ষ রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করে বিশৃঙ্খলা করছে।’ 

নতুন নিয়োগ বন্ধসহ চার নির্দেশনা : শ্রমিক আন্দোলন ইস্যুতে জরুরি সভা করেছে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। গতকাল সংগঠনটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভা থেকে কারখানা মালিকদের চারটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- (১) এখন থেকে বাংলাদেশে অবস্থিত সব পোশাক কারখানায় সব ধরনের নতুন নিয়োগ বন্ধ থাকবে। প্রতিটি কারখানার গেটে ‘নিয়োগ বন্ধ’ বাক্যটি টানিয়ে দিতে হবে; (২) যেসব কারখানায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, মারামারির ঘটনা ঘটেছে, সেসব কারখানার ছবি, ভিডিওসহ প্রমাণাদি নিয়ে নিকটস্থ থানায় মামলা করতে হবে; (৩) যেসব কারখানার শ্রমিক কারখানায় প্রবেশ করে কাজ করা থেকে বিরত থাকবে, বা কারখানা ছেড়ে বেরিয়ে যাবে- সেসব কারখানার মালিক শ্রম আইন অনুযায়ী কারখানা বন্ধ করে দেবেন। এ ছাড়াও চতুর্থ নির্দেশনায় যেসব কারখানায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, মারামারির ঘটনা ঘটেছে, সেসব কারখানার ছবি, ভিডিওসহ প্রমাণাদি বিজিএমইএতে পাঠাতে বলা হয়েছে।

জরুরি সভায় সভাপতিত্ব করেন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদি, সিনিয়র সহ-সভাপতি এসএম মান্নান (কচি) প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর