শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নিউমোনিয়ায় প্রতি ঘণ্টায় মারা যায় তিন শিশু

তিন উদ্যোগে কমবে মৃত্যুহার

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে প্রতি বছর জন্ম নেওয়া ৩৬ লাখ শিশুর মধ্যে প্রায় ২০ লাখ আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়ায়। প্রতি ঘণ্টায় তিনটি শিশুর প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে নিউমোনিয়া। নিউমোনিয়ায় আক্রান্তদের মাত্র ৬০ ভাগ শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন অভিভাবকরা। অসচেতনতার কারণে ৪০ ভাগ শিশু পায় না জরুরি পথ্য ও চিকিৎসা।

এ পরিস্থিতিতে আগামী রবিবার পালিত হবে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। এ উপলক্ষে  গতকাল আইসিডিডিআরবি ‘শিশুদের নিউমোনিয়া : আমরা কি যথেষ্ট করছি’ শিরোনামে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা। আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী নিউমোনিয়া নিয়ে তার এবং ড. নুর হক আলম, ড. কে জামান এবং ড. আহমেদ এহসানুর রহমানের কয়েকটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, নিউমোনিয়া এখনো বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রধান সংক্রামক কারণ। এই রোগের ফলে প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়, যা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর ১৪%। বাংলাদেশে এর পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ। প্রতি ঘণ্টায় ২-৩ জন শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায় এবং বছরে প্রায় ২৪ হাজার শিশু মারা যায়। এটি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ২৪% মৃত্যুর জন্য দায়ী, যা বিশ্বব্যাপী গড় থেকে বেশি। নিউমোনিয়ায় আনুমানিক ৪০ লাখ নতুন রোগীসহ প্রতি বছর প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বাংলাদেশের শিশুদের নিউমোনিয়ার কারণগুলো বৈশ্বিক পরিস্থিতি থেকে একটু আলাদা। ড. চিশতী বাংলাদেশের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুদের নিউমোনিয়ার পেছনে বিশেষ কারণ তুলে ধরেন।

২০১৯ এবং ২০২১ সালে আইসিডিডিআরবির গবেষণায় অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী, গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের বিষয়টি উঠে আসে। এই ফলাফলগুলো দেখায় যে বিরল গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া শৈশবকালীন নিউমোনিয়ার নতুন কারণ হিসাবে দেখা দিচ্ছে। প্রতিরোধমূলক কৌশলগুলো তুলে ধরে ড. চিশতী আইসিডিডিআরবির গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল থেকে দেখান যে, ঘরের মধ্যে বাতাসের গুণগতমান উন্নত করার মাধ্যমে নিউমোনিয়া মৃত্যুর ঝুঁকি অর্ধেক করা সম্ভব এবং হাত ধোয়া ২১% আক্রান্ত কমাতে পারে। ২০০৭ এবং ২০২০ সালে আইসিডিডিআরবির ভ্যাকসিন নিয়ে করা গবেষণায় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উপযোগী হতে পারে এমন একটি টিকা নিয়ে আলোচনা হয়। আইসিডিডিআরবির গবেষণায় দেখা গেছে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের আরএসভি টিকা দেওয়া হলে তা নবজাতক শিশুদের গুরুতর নিউমোনিয়া এবং হাইপোক্সেমিয়া (রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা) প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইপিআই থেকে দেওয়া দুটি টিকা নিউমোনিয়া প্রতিরোধে কাজ করে। কিন্তু এখন নতুন জীবাণু দিয়ে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এসব জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করছে না অ্যান্টিবায়োটিক। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের কারণে অনেক শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, ফুসফুসের অক্সিজেন বিনিময় জায়গায় নিউমোনিয়া হয়। এতে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। আগে ব্যাকটেরিয়া নিউমোনিয়ার জন্য দায়ী ছিল। কিন্তু এখন ভাইরাস মাথা চাড়া দিচ্ছে। শিশু দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নিলে, শ্বাস নেওয়ার সময় বুকের নিচের অংশ ভিতরের দিকে ঢুকে গেলে বুঝতে হবে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ঘটেছে। এরকম হলে শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে আনতে হবে। তিনি আরও বলেন, শিশু এবং বয়স্করা নিউমোনিয়াতে বেশি আক্রান্ত হয়। অনেক সময় শ্বাস নেওয়ার সময় কাতরানোর শব্দ হয়, রোগীর ঠোঁট এবং জিব কালো হয়ে যায়। এরকম হলে বুঝতে হবে রোগী মারাত্মক অক্সিজেন স্বল্পতায় ভুগছে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বোঝার জন্য পালস অক্সিমিটার দিয়ে মাপতে হবে। শিশুদের অক্সিজেনের মাত্রা ৯০ শতাংশের নিচে হলে হাসপাতালে নিয়ে দ্রুত অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। টিকা, ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে পর্যাপ্ত মায়ের বুকের দুধ পান করানো এবং এর পরে পরিপূরক পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। এতে নিউমোনিয়ায় মৃত্যু অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।

সর্বশেষ খবর