রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ক্ষণ গণনায় ব্যস্ত ইসি

গোলাম রাব্বানী

ক্ষণ গণনায় ব্যস্ত ইসি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনায় ব্যস্ত রয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক ও জেলা অফিসে ব্যালট বক্সসহ অধিকাংশ নির্বাচনি মালামাল পাঠিয়েছে ইসি। এখন অপেক্ষা শুধুই তফসিল ঘোষণার। ১ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরুর পর থেকে ইসির ব্যস্ততা আরও বেড়েছে। কমিশন বলেছে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন কার্যক্রম শেষ হবে। ডিসিরাই এ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পাচ্ছেন। এ ছাড়া ডিসেম্বরে শুরু হবে প্রায় ৯ লাখ ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ।

এদিকে ৯ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। এ সময় ভোটের সম্ভাব্য বেশ কয়েকটি তারিখ রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণা হতে পারে। তবে ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা বেশি বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক সভা হবে এ সপ্তাহেই। সভায় ভোটের তারিখ নির্ধারণ হবে। কোনো কারণে ১৫ নভেম্বর তফসিল না হলে ১৬ নভেম্বর হতে পারে।

ইসির অন্য এক সূত্র জানিয়েছেন, ১৪ বা ১৫ নভেম্বর সিইসি বেতার ও টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করবেন। এজন্য বিটিভি মহাপরিচালকের সঙ্গে কথাও বলেছে ইসি। কখন ভাষণ রেকর্ড হবে তা দ্রুত বিটিভিকে জানাবে কমিশন। এ ছাড়া সিইসির ভাষণের খসড়া প্রস্তুত হয়েছে। কমিশন সভায় অনুমোদন হলে তা চূড়ান্ত হবে। এদিকে সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত শুক্র ও শনিবার ডিসি-এসপিদের নির্বাচনি প্রশিক্ষণ শেষ করেছে ইসি। আজ বেলা ১১টায় নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম ও স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপস উদ্বোধন করবে কমিশন।

ইসিসূত্র জানিয়েছেন, তফসিল নিয়ে এবারে ভিন্ন চিন্তা রয়েছে ইসির। বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবারও তফসিল পরিবর্তনের চিন্তা রাখা হচ্ছে। এজন্য ভোটের বেশ কয়েকটি তারিখ চিন্তায় রেখেছে কমিশন। এ ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ তথা ২৮ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের তারিখ রাখা হতে পারে। তবে এ তারিখ আবার পরিবর্তন হতে পারে। এ ছাড়া ভোট গ্রহণের তারিখ হিসেবে জোর আলোচনায় রয়েছে ২, ৩, ৭, ৮, ৯ ও ১১ জানুয়ারিও। তবে সবকিছু নির্ভর করছে কমিশনের আনুষ্ঠানিক সভার ওপর। কমিশন সভায় নতুন তারিখও নির্ধারণ হতে পারে।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদের নির্বাচনের পর প্রথম অধিবেশন বসে ৩০ জানুয়ারি। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের বিধান অনুযায়ী এর আগের ৯০ দিনের মধ্যে ভোট হতে হবে। সে হিসেবে গত ১ নভেম্বর নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গেছে। ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা আছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। কমিশন ভোটের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। ব্যালট বক্সসহ অধিকাংশ নির্বাচনি মালামাল ইতোমধ্যে আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন অফিসে পাঠানো হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণা হবে বলে আশা করা যায়। সংসদ নির্বাচন হবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।

কমিশনার আহসান হাবিব বলেন, ‘প্রযুক্তিনির্ভর ভোট ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের কর্মপরিকল্পনায় ছিল। এ ধারাবাহিকতায় মনোনয়নপত্র অনলাইনে দাখিলে অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম (ওএনএসএস) ও “স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি” মোবাইল অ্যাপস এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। নির্বাচন ব্যবস্থাপনাও এর মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ যুগে যুক্ত হলো। এ অ্যাপস আজ রবিবার উদ্বোধন হবে। তফসিল ঘোষণার পর তা সবার জন্য উন্মুক্ত হবে। এ অ্যাপসের মাধ্যমে খুব সহজে ঘরে বসেই সঠিক তথ্য-উপাত্ত ও প্রয়োজনীয় দলিলাদি দিয়ে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন।’

তিনি বলেন, ‘মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শোডাউন, মিছিল করে আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রবণতা যেমন রোধ হবে, এ ছাড়া নমিনেশন জমাদানে বাধা দেওয়া অথবা প্রত্যাহারের জন্য বল প্রদান করা সম্ভব হবে না। সংসদ নির্বাচন ছাড়াও স্থানীয় সরকারের যে কোনো নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমাসহ নির্বাচনি সেবা সহজতর হবে। এ অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে  নির্বাচনি হলফনামা, কেন্দ্রসংক্রান্ত তথ্য, নির্বাচনি তথ্য মিলবে।’

তিনি বলেন, ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি’ অ্যাপসের মাধ্যমে একজন ভোটার ঘরে বসে তার ভোটার নম্বর জানতে পারবেন। পাশাপাশি ভোটার এলাকা/নির্বাচনি আসন, কেন্দ্রের নাম জানতে পারবেন এবং কেন্দ্রের ছবি, কেন্দ্রের ভৌগোলিক অবস্থান (ম্যাপসহ) দেখতে পাবেন। এ অ্যাপের মাধ্যমে বিভাগওয়ারি আসনগুলোর তথ্য যেমন, মোট ভোটার, মোট আসন, আসনের প্রার্থী, প্রার্থীদের বিস্তারিত তথ্য (হলফনামা, আয়কর সম্পর্কিত তথ্য, নির্বাচনি ব্যয় ও ব্যক্তিগত সম্পদের বিবরণী) জানতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ভোটার প্রার্থীদের তথ্যাবলি বিশ্লেষণ করে পছন্দসই প্রার্থী বেছে নিতে পারেন।

ইসি কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি’ অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর তথ্য জানা যাবে এবং সমসাময়িক তথ্যাবলি ‘নোটিস’ আকারে প্রদর্শিত হবে। অ্যাপসের সাহায্যে দুই ঘণ্টা পরপর কাস্টিং ভোটের তথ্য জানা যাবে। এ ছাড়া নির্বাচনি ফলাফলের সার্বিক অবস্থাসহ ‘ফলাফল বিশ্লেষণ’ নামক অপশনের মাধ্যমে একজন ভোটার আগের নির্বাচন এবং বর্তমান নির্বাচনের ফলাফলের গ্রাফিক্যাল বর্ণনা পাবেন।

সর্বশেষ খবর