রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

তফসিলের পর আন্দোলনের গতি বাড়াবে বিএনপি

ঘোষণার পর তা বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনকে দুই দিন সময় বেঁধে দিতে পারে বিএনপি নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না, নির্বাচনও করতে দেবেন না

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

তফসিলের পর আন্দোলনের গতি বাড়াবে বিএনপি

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে যে কোনো দিন। নির্বাচনের জন্য এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবেন না নির্বাচনও করতে দেবেন না। এই দাবি আদায় করতে যেয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ ও সক্রিয় অনেক নেতা এখন কারাগারে। মামলার আসামি হয়ে অনেকে আছেন আত্মগোপনে। অনেকটা গোপন জায়গা থেকে চলছে দলটির কার্যক্রম। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে তফসিল ঘোষণা করলে কী করবে বিএনপি? বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণা করা হলে আন্দোলনের মাত্রা বাড়াবে বিএনপি। ঘোষণার পর তা বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনকে দুই দিন সময় বেঁধে দিতে পারে বিএনপি। এরপরই হরতাল-অবরোধের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ ভবন ঘেরাও এবং অবস্থান কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। ওই সময় আত্মগোপনে থাকা নেতা-কর্মীরাও প্রকাশ্যে এসে কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত হবেন এবং আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ানোর চেষ্টা করবে বিএনপি।

এরই মধ্যে সরকার পতন আন্দোলনের চতুর্থ দফা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ রবিবার ও আগামীকাল সোমবার চলবে দলটির সর্বাত্মক অবরোধ। আগামী মঙ্গল অথবা বুধবার ঘোষণা করা হতে পারে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল। তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচিতেই থাকবে বিএনপি। তবে তফসিল ঘোষণার পর কর্মসূচিতে আরও কঠোরতা আনবে- এমনটিই জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। তারা বলছেন- নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। তাই তফসিল ঘোষণার পর সব নেতা রাজপথে বের হয়ে আন্দোলনে যুক্ত হবেন। গ্রেফতার হলে রাজপথেই হবেন। তখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে থেকেও যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী আগের মতো আচরণ করে তাহলে ইসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তখন আন্তর্জাতিক মহল আরও সক্রিয় হতে পারে। তফসিল ঘোষণার পর নেতা-কর্মীদের ‘অলআউট’ নামার পরিকল্পনাও রয়েছে। সারা দেশ থেকে ঢাকাকে পুরোপুরিভাবে বিচ্ছিন্ন করতে চায় দলটি। এ জন্য জেলা-মহানগর এবং গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় অবরোধ আরও জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতাদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য আন্দোলন-কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেন, আন্দোলনের মূল লক্ষ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন। সরকার যদি গণদাবি উপেক্ষা করে এই প্রহসনের নির্বাচনের দিকে ধাবিত হয় সেক্ষেত্রে তা প্রতিহত করতে যা যা করার দরকার বিএনপি তাই করবে। তিনি জানান, আবারও হরতালসহ ঘেরাও এবং অবস্থান কর্মসূচির মতো কঠিন কর্মসূচি দেওয়ারও পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

এদিকে বিএনপির সমমনা দলগুলো বলছে- তফসিল ঘোষণা করা হলে তারাও আন্দোলনের মাত্রা বাড়াবে। জানতে চাইলে ১২-দলীয় জোটের শীর্ষনেতা জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পাতানো নির্বাচনের নীলনকশার ক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে শাসকগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে হামলা-মামলা, অত্যাচরের মাত্রা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাবেক এই মন্ত্রী আরও বলেন, এই পরিস্থিতিতে সরকার আন্দোলনরত বিরোধী দলগুলোর এক দফা না মেনে সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলে আন্দোলনের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করি, কারণ মানুষ ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন চায় না। মানুষ ভোটাধিকার চায় গণতন্ত্র চায়।

বিএনপির দায়িত্বশীলরা বলছেন, তফসিল ঘোষণার পর গণগ্রেফতার ও দমন-পীড়ন চালাতে পারবে না। পুলিশের গ্রেফতার অভিযানের কারণে এখন সিনিয়র নেতারা বের হতে পারছেন না। তফসিল ঘোষণা হলে নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী পুলিশ আর গ্রেফতার করতে পারবে না। তখন নেতারা বের হতে পারবেন। তারা বলছেন, বিএনপি সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। তাই তফসিল ঘোষণার পর সব নেতা রাজপথে বের হয়ে আন্দোলনে যুক্ত হবেন। গ্রেফতার হলে রাজপথেই হবেন। তখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে থেকেও যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী আগের মতো আচরণ করে তাহলে ইসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তখন আন্তর্জাতিক মহল আরও সক্রিয় হতে পারে। তাই তফসিলের পর বড় কর্মসূচি পালনের চিন্তা করছে বিএনপি।

সার্বিক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সব প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে নেতা-কর্মীরা বুকে বুলেট বরণ করে নিয়ে রাজপথে দাঁড়াচ্ছে। তারা রাজপথে থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত দেশের হারানো গণতন্ত্র ফিরে না আসে, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়। আমাদের এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। আমাদের ঠিকানা- হয় কারাগার না হয় রাজপথ।

সর্বশেষ খবর