রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

তুলা চাষে ঝুঁকছে পাহাড়িরা

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

তুলা চাষে ঝুঁকছে পাহাড়িরা

পাহাড়ে এবার কমে আসছে তামাক চাষ। লাভজনক হওয়ায় তামাক ছেড়ে তুলা চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। তামাক চাষ করা পাহাড়ি জমিতে তুলা চাষে সার্বিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। এ ছাড়াও তামাক চাষের ফলে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। এ ছাড়া একই জমিতে কয়েক বছর তামাকের চাষ করলে বিশেষ ধরনের আগাছা জন্মে। সে জমিতে আর কখনো অন্য ফসল চাষ করা সম্ভব হয় না। ফলে চাষিরা তামাক চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে এখন তুলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন।  

স্বাস্থ্য বিষেজ্ঞরা বলছেন, তামাকের উচ্ছিষ্ট অংশ শরীরে প্রবেশ করে ক্যান্সার, হৃদরোগসহ নানা ধরনের মরণব্যাধি হতে পারে। তামাক চাষের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা এক সময় হৃদরোগ ক্যান্সারসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হবেন। তাদের বাঁচানো সম্ভব হবে না।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নাছির উদ্দীন আহমেদ বলেন, তুলার বাণিজ্যিক চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এক বিঘা জমিকে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ করে হাইব্রিড কার্পাস তুলা চাষ করলে ৬ মাসের মধ্যে ৪০ হাজার টাকা আয় হয়। এ তুলা থেকে শুধু কাপড়ের সুতা নয়, ১৮ শতাংশ তেলও উৎপাদন করা যায়। তাই বিশ্বজুড়ে বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। কৃষকের মধ্যে বাণিজ্যিক তুলা চাষ নিয়ে জানাশোনা কম। সরকার তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করছে। তাই তিন পার্বত্য জেলায় তামাকের জমিতে এখন তুলার চাষে সহায়তা করছি। কিন্তু জনবলের সংকটের কারণে চাহিদার তুলনায় আমরাও কাজ করতে পারছি না।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলাতে বাণিজ্যিকভাবে কার্পাস তুলা চাষ হয় না। তিন পার্বত্য জেলার (বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি) পাহাড়ি ও সমভূমির ২৪টি ইউনিটে তুলার চাষ হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪টি পাহাড়ি ইউনিটে আঁশতুলা (বেল) উৎপাদন হয়েছে ১০ হাজার ৩৬৩ হেক্টর এবং সমভূমিতে ৩ হাজার ৪৭৮ হেক্টর। গত অর্থবছর (২০২১-২২) পাহাড়ি ইউনিটে উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৩৭৩ হেক্টর এবং ৬ হাজার ৫৮১ হেক্টর। 

জানা গেছে, প্রতি বছর দেশে তুলার ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিদেশ থেকে চাহিদার ৯৮ শতাংশ তুলা আমদানি করতে হয়।  আগে পাহাড়ি অঞ্চলে জুম চাষে সমন্বিতভাবে তুলা চাষ করা হতো। কালের পরিক্রমায় কার্পাস তুলার চাষাবাদ কমে গেছে। এখন জুমে তুলা চাষ প্রায় হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কিছুটা হলেও দেশে এর চাহিদা মেটাতে এবং পাহাড়ের চাষিদের ভাগ্য বদল করতে এরই মাঝে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে তুলা চাষ বৃদ্ধি ও কৃষকদের দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের আওতায় পতিত অনাবাদি জমিতে তুলা চাষে আগ্রহ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। তুলা চাষ বৃদ্ধি ও কৃষকদের দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে পাহাড়ে তুলা চাষের মাধ্যমে কৃষকের ভাগ্য বদল হবে এবং এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। এমনটা মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর