রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রতি ১০ মিনিটে প্রাণ যাচ্ছে এক শিশুর

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রতি ১০ মিনিটে প্রাণ যাচ্ছে এক শিশুর

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বৃহত্তম আল-শিফা হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে হাসপাতালের জেনারেটর ব্যবস্থা। যে কারণে এই হাসপাতালে এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন রোগীরা। জেনারেটর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালের ইনকিউবেটরে থাকা ৪৫ শিশুও মৃত্যুর প্রহর গুনছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আল-শিফা হাসপাতালের ইনকিউবেটরে থাকা এক শিশু এরই মধ্যে মারা গেছে। সূত্র : বিবিসি, আলজাজিরা, রয়টার্স

গাজার উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউসেফ আবু আলরিশ বলেছেন, হামাস নিয়ন্ত্রিত ছিটমহলের বৃহত্তম চিকিৎসা কেন্দ্র আল-শিফা হাসপাতালের ভিতরে ইনকিউবেটরে ৪৫ নবজাতক শিশু রয়েছে। এ হাসপাতালে বর্তমানে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালাচ্ছে। ইসরায়েলি স্নাইপাররা হাসপাতালের চারদিকে অবস্থান নিয়েছে। আকাশ থেকে ড্রোন তাক করে আছে। হাসপাতাল থেকে কেউ বের হওয়ার চেষ্টা করলেই তাকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে   সেনারা। খবরে বলা হয়, আল-শিফা হাসপাতাল থেকে কয়েকজন রোগী বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তখন তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মৃতদেহ হাসপাতাল চত্বরে পড়ে আছে। এ সাক্ষাৎকারে আলরিশ নামে একজন চিকিৎসক বলেছেন, ‘আমাদের ইনকিউবেটরে ৪৫টি নবজাতক আছে। এই শিশুরা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। আমরা সম্পূর্ণ আটকা পড়েছি। বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা ছাড়াই এখানে পড়ে আছি। আমরা মৃতদের দাফনও করতে পারছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা পুরো বিশ্বকে সতর্ক করে দিচ্ছি, হাসপাতালের সব জেনারেটর বন্ধ। জ্বালানি না থাকায় জেনারেটর বন্ধ হয়ে গেছে।’ আলরিশ বলেন, ‘কেউ হাসপাতালের আশপাশে ঘোরাফেরা করতে পারছে না। ড্রোন ছাড়াও স্নাইপাররা সব জায়গায় মোতায়েন রয়েছে। তারা চলন্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে হত্যা করছে। হাসপাতালের আশপাশে ভয়াবহ গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে এবং কয়েক মিনিট আগে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে একটি মর্টারের গোলা আঘাত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘সর্বত্রই রক্ত। মেঝেতে রক্ত। এমনকি আমরা তা পরিষ্কারও করতে পারছি না। ইসরায়েলি কিলিং মেশিন হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে এবং টেলিভিশনের পর্দায় তা দেখানো হচ্ছে। এখনো তারা একই ধরনের হত্যাকান্ড ঘটাচ্ছে। কিন্তু কেউ শুনছে না, কেউ দেখছে না। সারা বিশ্ব চুপচাপ আছে।’ এদিকে ফিলিস্তিনে রেড ক্রিসেন্টের প্রধান জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, ‘বেসামরিক নাগরিকদের গাজা থেকে উৎখাত করার জন্য সেখানকার হাসপাতালগুলোকে নির্বিচারে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।’ এর আগে শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একজন মুখপাত্র বলেন, আল-শিফা হাসপাতাল বোমা হামলার কবলে পড়েছে। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় উপত্যকার ২০টি হাসপাতাল বর্তমানে অচল হয়ে পড়েছে। একই দিন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসাস বলেন, ‘গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আগ্রাসনে গড়ে প্রতি ১০ মিনিটে একটি শিশু নিহত হচ্ছে। গাজায় কোনো স্থানই নিরাপদ নয় এবং সেখানে কেউই নিরাপদে  নেই। এমনকি গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পতনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।’ হাসপাতালগুলোর অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তেদ্রোস বলেন, ‘গাজার হাসপাতালের করিডর পর্যন্ত আহত, অসুস্থ, মৃত ব্যক্তিদের ভিড় লেগে আছে। মৃতদেহে উপচে পড়ছে মর্গ। অ্যানেসথেসিয়া ছাড়াই অস্ত্রোপচার করতে বাধ্য হচ্ছেন চিকিৎসকরা। হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ হাসপাতালে আশ্রয় নিচ্ছেন।’

সর্বশেষ খবর