সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
দুই সিটিতে নতুন মেয়র, যত চ্যালেঞ্জ

পরিকল্পিত টেকসই উন্নয়নে সিলেট হবে স্মার্ট সিটি

বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সাক্ষাৎকারে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

পরিকল্পিত টেকসই উন্নয়নে সিলেট হবে স্মার্ট সিটি

সিলেটের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের ওপর নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শুরুর প্রাক্কালে সিলেটে এসে জনসভায় দাঁড়িয়ে সেই ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সিটি করপোরেশনের মেয়রের চেয়ারে বিএনপি দলীয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী থাকায় উন্নয়ন নিয়ে অনেকেই ছিলেন শঙ্কিত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কথা রেখেছিলেন। ভিন্ন আদর্শের মেয়র হলেও নগরীর উন্নয়নে সিলেট সিটি করপোরেশনকে (সিসিক) দুই হাত ভরে বরাদ্দ দিয়েছেন। দৃশ্যমান ব্যাপক উন্নয়নও হয়েছে।

উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশংসাও করেছেন মেয়র আরিফের। কিন্তু এত উন্নয়নের পরও কমেনি জনদুর্ভোগ। বরং বেড়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এখন টানা এক ঘণ্টা ভারী বর্ষণ হলে নগরজুড়ে দেখা দেয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। বর্ষায় সুরমা নদী উপচে পানি ঢুকে নগরে। রাস্তা প্রশস্ত হলেও কমেনি যানজট। বেড়েছে সুপেয় পানির সংকট। হকারমুক্ত সড়ক ও ফুটপাতের স্বপ্ন সুদূর পরাহত। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) আরিফুল হক চৌধুরীর কাছ থেকে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন গেল নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। প্রথমবারের মতো জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া আনোয়ারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন সিলেট নগর নিয়ে তাঁর স্বপ্ন ও পরিকল্পনার কথা। জানিয়েছেন, বিরাজমান সংকট সমাধানে তাঁর ভাবনার কথা। আগামী পাঁচ বছরে সিলেট নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানাতে গিয়ে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ‘ক্লিন গ্রিন ও স্মার্ট’ সিটির ওপর জোর দেন আনোয়ারুজ্জামান। তিনি বলেন, দেশের মধ্যে সিলেটের পরিচয় আলাদা। এখানে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট রয়েছে। প্রবাসীদের হাব হচ্ছে সিলেট। প্রতিদিন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ ও আধ্যাত্মিক সাধকদের মাজার জিয়ারতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ সিলেট আসেন। কিন্তু সিলেট নগরকে সেভাবে আমরা এখনো সাজাতে পারিনি। পর্যটক ও অতিথিদের স্বাগত জানাতে এই শহরকে ক্লিন রাখতে চাই। আর সবুজায়ন ছাড়া বাসযোগ্য নগর গড়া সম্ভব নয়। আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য শহর করতে হলে অবশ্যই আমাদের ‘ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন সিটি’ তৈরি করতে হবে। তবে এটা সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতা। আমি আশাবাদী, সিলেট নগরবাসীও ‘ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন সিটি’র প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। তারা নিশ্চয় এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবেন।

হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ আসে, উন্নয়ন কাজও হয়, কিন্তু বিরাজমান সমস্যা দূর না হয়ে কেন বাড়ে জনদুর্ভোগ? এমন প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, শুধু টাকা খরচ করে দৃশ্যমান কিছু করলেই উন্নয়ন হয় না। অপরিকল্পিত উন্নয়ন সময়ান্তে দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এতে অর্থও নষ্ট হয়, জনদুর্ভোগও বাড়ে। তাই আমি উন্নয়নের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেব সঠিক পরিকল্পনাকে। পরিকল্পিত টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমেই সিলেটকে করতে চাই স্মার্ট সিটি। যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিশেষজ্ঞ এনে উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হবে জানিয়ে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, যোগ্য লোক দিয়ে সঠিকভাবে পরিকল্পনা না করালে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব হবে না। এ জন্য আমি সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বসব। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও কেন জনদুর্ভোগ কমছে না, তা জানতে চাইব। তাদের ব্যাখ্যা ও পরামর্শ শুনব। এরপর প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর ওপর দেশসেরা বিশেষজ্ঞদেরও পরামর্শ নেব। মোট কথা হচ্ছে, যে কাজই করব তা যেন নগরবাসীর কাজে আসে, সেটা থেকে আমরা যেন দীর্ঘদিন সুফল পাই সেই চেষ্টা করব। আক্ষেপ করে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এখনো সিটি করপোরেশনের কোনো অর্গানাগাম নেই। যুগোপযোগী কোনো মাস্টারপ্ল্যান নেই। এভাবে একটি শহরের পরিকল্পিত টেকসই উন্নয়ন হয় না। এটা নিয়ে আমি অবশ্যই কাজ করব। জলাবদ্ধতাকে সিলেট নগরের প্রধান সমস্যা মনে করেন আনোয়ারুজ্জামান। নগরবাসীকে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে তিনি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে একটি সার্ভে করাতে চান। তাদের দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান। জলাবদ্ধতা ছাড়াও নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, যানজট নিরসন, হকার পুনর্বাসন এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণের কথা জানান তিনি। এ জন্য তিনি নগরভবনের বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে তাদেরও পরামর্শ নেবেন বলে জানান মেয়র। সিলেট অঞ্চল প্রবাসী অধ্যুষিত। তাই প্রবাসীদের স্বার্থরক্ষায় ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করবে নগরভবন-এমনটাই জানালেন আনোয়ারুজ্জামান। তিনি বলেন, সিলেট নগরে প্রবাসীদের জায়গা-সম্পত্তি দখল কিংবা কোনোভাবে হয়রানির চেষ্টা করলে একচুলও ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের পক্ষে সিটি করপোরেশন থাকবে।

ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতিতে পাঠ নেওয়া আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এখন আওয়ামী লীগের নেতা। মেয়রের চেয়ারে বসে নিজেকে কতটুকু নিরপেক্ষ রাখতে পারবেন এমন প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি আর রাজনীতি দুটো আলাদা। নগরভবনের ভিতর আমার পরিচয় আমি সব আদর্শের নাগরিকদের মেয়র। আমি এই নগরবাসীর সেবক। আমার কাছে তখন রাজনৈতিক পরিচয় মুখ্য নয়। সেবাদানের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় দেখার কোনো সুযোগ নেই। আবার যখন রাজপথে দাঁড়াব তখন আমি আওয়ামী লীগের কর্মী। তখন আমাকে দলীয় পরিচয়েই কাজ করতে হবে, পথ চলতে হবে।’ সিলেটকে বলা হয় দ্বিতীয় লন্ডন। আসলে সিলেটকে কি লন্ডন শহরের আদলে গড়ে তোলা সম্ভব- এমন প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এখনো লন্ডন সিটির সঙ্গে সিলেটকে তুলনা করার মতো নয়। আমরা অনেক অনেক পিছিয়ে। তবে আমরা লন্ডনের মতো হতে পারি বা না পারি কাছাকাছি যাওয়ার তো চেষ্টা করতে পারি। টেমসের স্বপ্ন সুরমায় যতটুকু সম্ভব বাস্তবায়ন করার চেষ্টা তো করা যেতে পারে। এক দিন হয়তো আমরা সত্যি সত্যি তাদের ছাড়িয়েও যেতে পারি।

সর্বশেষ খবর