মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

জন্মদিনে হুমায়ূন স্মরণ নুহাশ পল্লীতে

গাজীপুর প্রতিনিধি

জন্মদিনে হুমায়ূন স্মরণ নুহাশ পল্লীতে

কবর জিয়ারতসহ নানা আয়োজনে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৬তম জন্মদিন পালন করেছেন তার ভক্তরা। গতকাল সকালে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামের নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, দুই ছেলে নিশাত ও নিনিতসহ নুহাশ পল্লীর লোকজনকে নিয়ে কেক কাটেন। এ সময় হুমায়ূন আহমেদের শুভানুধ্যায়ী ও ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে লেখকের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, কবর জিয়ারত ও রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এরপর সাজানো-গোছানো নুহাশ পল্লীর বিভিন্ন স্থাপনা এবং নান্দনিক শিল্পকর্ম ঘুরে দেখেন তারা। এ ছাড়া রবিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে নুহাশ পল্লীতে এক হাজার পঁচাত্তরটি মোমবাতি প্রজ্বালন করে সমস্ত নুহাল পল্লীকে আলোকিত করা হয়। নুহাশ পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবারের? মতো এবারও হুমায়ূন পরিবার, তাঁর ভক্ত, কবি, লেখক আর নাট্যজনেরা ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেন নুহাশ পল্লীর লিচু তলায়। নন্দিত লেখকের প্রিয় চরিত্র হলুদ পাঞ্জাবিতে হিমু এবং নীল শাড়িতে? রূপা সেজে আসেন ভক্ত ও পাঠকেরা। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও নুহাশ পল্লীতে আসেন তাদের প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের সমাধিস্থলে।

প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, হুমায়ূন আহমেদের ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরির যে স্বপ্ন ছিল তা বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে। সম্প্রতি কানাডার একদল চিকিৎসক ও ব্যবসায়ী জানিয়েছেন তারা হাসপাতাল তৈরির বিষয়ে উদ্যোগ নিতে চান, যা একদম প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় রয়েছে। শাওন বলেন, হুমায়ূন আহমেদ যে ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেটা তার অনুপস্থিতে বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন কাজ। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো তার ডাকে অনেকেই সাড়া দিতেন। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের অনুপস্থিতে আমি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মানুষের কাছে গিয়েছি, তবে সেভাবে সাড়া পাইনি। এটি আমার একার পক্ষেও সম্ভব নয়। তবে আমার এখনো বিশ্বাস, লেখকের যে স্বপ্ন ছিল সেটি বাস্তবায়ন হবে। এ সময় তিনি বলেন, তবে আমার একটি পরিকল্পনা ছিল, লেখকের সৌজন্যে একটি জাদুঘর করার। যেটির প্রক্রিয়া অনেকটাই এগিয়েছে। এর নকশা করা হয়েছে, এটা বানাতে যে বাজেট প্রয়োজন সেটা জোগাড়ের চেষ্টা হচ্ছে, জাদুঘর হবে।

তিনি আরও বলেন, নেত্রকোনায় হুমায়ূন আহমেদের প্রতিষ্ঠিত যে বিদ্যালয় আছে, সেটি ফলাফলে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে। বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায়, খেলাধুলায় ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায়ও জেলার বিশেষ স্থানে রয়েছে বিদ্যালয়টি। সম্প্রতি সরকার বিদ্যালয়ে একটি চার তলা ভবন করে দিচ্ছে। আমরা এখন চেষ্টা করছি, প্রত্যন্ত গ্রামের এই বিদ্যালয়টিকে কলেজে পরিণত করার।

মেহের আফরোজ শাওন বলেন, নুহাশ পল্লীর হুমায়ূন আহমেদের সমাধির কাছে এলে যেমন মনে হয় হুমায়ূন আহমেদ আছেন, তেমনি নুহাশ পল্লীর পুকুর ঘাটে বসলে, ঘাসের ওপর হাঁটলে, গাছগুলোর কাছে গেলেও মনে হয় হুমায়ূন আহমেদ আছেন আমাদের মাঝে।

হুমায়ূন আহমেদের ছেলে নিশাত বলেন, ‘বাবার জন্মদিনের দিনে আমার খুব ভালো লাগে। আমরা নুহাশ পল্লীতে আসি, অনেকদিন পর। বেড়াই, বাবার জন্য কেক কাটি, অনেক সময় মিলাদ হয়, কোনো সময় এতিম বাচ্চাদের খাওয়াই। সব মিলিয়ে আমার খুব ভালো লাগে। একটু মন খারাপ লাগে, বাবা আমার সঙ্গে এখন আর নাই, এটার জন্যে একটু মন খারাপ লাগে, সেটা তো স্বাভাবিক। কিন্তু সব মিলিয়ে আমার খুব ভালো লাগে বাবার জন্মদিনে। আমার মনে হয়, এখন যদি বাবা থাকত কী যে ভালো লাগত।’

১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর বাবা ফয়েজুর রহমান ও মা আয়েশা ফয়েজ। ২০১২ সালে ১৯ জুলাই মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে মারা যান।

শিল্পকলায় আমি এবং আমরা : কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৬তম জন্মদিন উদযাপনে শিল্পকলা একাডেমিতে ‘আমি এবং আমরা’ নামের নাটক মঞ্চায়ন করেছে নাটকের দল বহুবচন।

প্রয়াত এই লেখকের জন্মদিনে গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চায়ন হয় নাটকটি।

হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত উপন্যাস ‘আমি এবং আমরা’ অবলম্বনে মনু মাসুদের নাট্যরূপে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন আরহাম আলো।

নাটকটির কেন্দ্রীয় মিসির আলী চরিত্রের নাম ভূমিকায় ছিলেন নাটকটির প্রযোজনা অধিকর্তা এবং বহুবচন দলের দলীয় প্রধান তৌফিকুর রহমান। এক রহস্যময় কিশোরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নাটকটির কাহিনি। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন- অপূর্ব, রুমানা, মনু মাসুদ, শাম্মী, হেলাল, সারোয়ার, তাপস, পলাশ, শিফা, নওরিন, মনি, জেনি, হ্যাপি, ফিরোজ, তৌফিকুর রহমান প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর