মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কারখানা খোলা না পেয়ে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক

কাজে যোগ দিতে এসে কারখানা খোলা না পেয়ে রাজধানীর মিরপুর-১৩ নম্বরে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। সড়কের পাশে প্রায় ৩০ মিনিট বিক্ষোভ শেষে সেখান থেকে সরে যান তারা। এ সময় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কড়া পাহারায় ছিলেন। গতকাল সকাল ৮টায় মিরপুর-১৩ নম্বরে পুলিশ কনভেনশন হল সংলগ্ন সড়কের পাশে জড়ো হতে থাকেন পোশাকশ্রমিকরা। পরে তারা সকাল সাড়ে ৮টায় সেখান থেকে সরে যান।

এদিকে সাভারের আশুলিয়ায় ৬৯টি এবং গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকার সাতটি কারখানা অনির্দিষ্টকালেন জন্য বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া আশুলিয়ায় আরও পাঁচটি মামলা দায়ের হয়েছে। জানতে চাইলে মিরপুরের শ্রমিকরা বলেন, আমরা পেটের দায়ে নেমেছি। আমরা ২৩ হাজার টাকা বেতন দাবি করছি। তারা কেন মানবে না? এখন চালের কেজি ৮০ টাকা। ১০ হাজার টাকা দিয়ে কী হয়? ঘর ভাড়ায় চলে যায় বেতনের ৬ হাজার টাকা। বাকি ৪ হাজার টাকা দিয়ে কী হবে? কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুকুল আলম বলেন, প্রতিদিনের মতোই পোশাকশ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এসেছিল। তবে গত কয়েক দিনের আন্দোলনের কারণে মালিকরা কারখানা বন্ধ রেখেছেন। ১৩(১) এর ধারা অনুযায়ী, কাজ নাই, তো টাকা নাই, সেই অনুযায়ী এই এলাকার কিছু কারখানা মালিকরা কারখানা বন্ধ রেখেছে। সকালে শ্রমিকরা কারখানার সড়কের সামনে ছিল। পরে তারা সেখান থেকে সরে গিয়েছে। সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনের মধ্যে বিভিন্ন কারখানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় আরও পাঁচটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে এ জাতীয় ঘটনায় মামলার সংখ্যা দাঁড়ালো ১৭টিতে। সোমবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগের ১২টি মামলার পর নতুন আরও পাঁচটি হয়েছে। ১৭টি মামলার মধ্যে চারটিতে মোট নামীয় আসামি আছে ৬১ জন, বাকিরা অজ্ঞাতনামা। গ্রেফতার রয়েছেন সাতজন। ১৭ মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা ৪ হাজারের মতো হবে বলে জানান তিনি। এদিকে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে ১৩০টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল । এর মধ্যে ৭০টি খুলে দিলে আরও ৯টি বন্ধ হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে গতকাল ৬৯টি কারখানা বন্ধ ছিল। এসব কারখানার শ্রমিকরা গতকাল সকালে কর্মস্থলে এসে বন্ধের নোটিস দেখে চলে গেছেন। তবে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম ৬৯টি কারখানা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, যেসব কারখানার শ্রমিকরা কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে কাজ করেন না, শ্রম আইন অনুযায়ী ওইসব কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আশুলিয়ার বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ১২ দিনের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। শ্রমিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলতা এড়াতে কর্তৃপক্ষ শনিবার থেকে বেশ কিছু কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। আশুলিয়ার জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুর ও কাঠগড়া এলাকায় গিয়ে দি রোজ ড্রেসেস লিমিটেড, দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার লিমিটেড, অনন্ত গার্মেন্টস লিমিটেড, হা-মীম, শারমীন, পাইওনিয়ার লিমিটেড এবং আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড, ডুকাটি অ্যাপারেলস লিমিটেড, আগামী অ্যাপারেলস লিমিটেড, ক্রসওয়্যার লিমিটেড, ছেইন অ্যাপারেলস লিমিটেড, টেক্সটাউন লিমিটেড, অরনেট নিট গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডসহ আরও অনেকগুলো পোশাক কারখানার গেটে বন্ধের নোটিস দেখা গেছে। নোটিসে কাজ না করে বসে থাকা, ভাঙচুরসহ বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকার সাতটি ছাড়া প্রায় সব কারখানা খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে কোনাবাড়ী শিল্পাঞ্চলের তুসুকা কারখানা এবং জরুন এলাকার স্ট্যান্ডার গ্রুপের কারখানা বন্ধ ছিল। গতকাল সকালে শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ কাজে যোগ দেন। গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম জানান, শ্রম আইন অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ সাতটি কারখানা ছাড়া গতকাল গাজীপুরের কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, নাওজোড়, আমবাগ, কড্ডা, বাইমাইল এলাকার সব পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। মঙ্গলবার থেকে বাকি বন্ধ কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, গতকাল সকাল থেকেই গাজীপুরের কোনাবাড়ী, সফিপুর বাজার, মৌচাক, তেলিচালা, জরুন ও ভোগড়া এলাকায় আশপাশের এলাকায় থানা ও শিল্প পুলিশ মোতায়েন করা হয়। একই সঙ্গে বিজিবির সদস্যদের সাঁজোয়া যান নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোয় টহল দিতে দেখা গেছে।

কাঠগড়া এলাকার আগামী অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার নোটিসে উল্লেখ করা হয়, গত ৩১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত শ্রমিকেরা কারখানায় এসে ফেস পাঞ্চ করেন। তারা কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রেখে চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। পরে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পর কারখানা ত্যাগ করে বাইরে চলে যান। এতে কারখানা কর্তৃপক্ষ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। পরে শ্রমিকেরা ৫ নভেম্বর কাজে যোগ দিয়ে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত কাজ করেন। ৯ নভেম্বর বেতন দেওয়া হলে ১২ নভেম্বর থেকে তারা আবারও কাজ বন্ধ করে আন্দোলন করতে থাকেন। এ অবস্থায় কারখানা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ১৩ (১) ধারা মোতাবেক অনির্দিষ্ট কালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে।

 

সর্বশেষ খবর