বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

তারার মেলায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক

তারার মেলায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

উপমহাদেশের চলচ্চিত্র আসলে বাঙালির হাতে গড়া বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক জমকালো অনুষ্ঠানে বিজয়ী শিল্পী ও কলাকুশলীদের মাঝে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় জাতির পিতার ছোট কন্যা এবং প্রধানমন্ত্রীর ছোটবোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যখন ১৯৫৬ সালে মন্ত্রিত্ব পান তখন চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা ১৯৫৭ বিল সাধারণ পরিষদে পেশ করেন, যা একই বছরের ৩ এপ্রিল পাস হয়। উপমহাদেশের চলচ্চিত্র আসলে বাঙালির হাতে গড়া। আমাদের মাতৃভাষায় ও সংস্কৃতির             ওপর আঘাত হানা হয়, তারও প্রতিবাদ করেছিলেন সেই ১৯৪৭ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। করোনাকাল-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার সিনেমা হল সংস্কারে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন বা বিএফডিসির উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন দেখা যায়নি। তবে বর্তমানে সেখানে অত্যাধুনিক কমপ্লেক্স নির্মিত হচ্ছে; যা পূর্ণতা পেলে বদলে যাবে দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির রূপ। বিশাল এ প্রকল্পের পেছনে প্রায় সাড়ে তিন শ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি টাকার হিসাব করেন না। বরং দেশের চলচ্চিত্র যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে, শিল্পীরা যাতে ভালোভাবে কাজ করতে পারে, সেটাই তাঁর চাওয়া। বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণের ব্যয় প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘টাকার অঙ্ক দিয়ে হিসাব করি না, আমাদের শিল্পীরা যাতে ভালো করে কাজ করতে পারে, সেটাই চাই। আমরা গাজীপুরে ফিল্ম সিটি প্রতিষ্ঠা করেছি। এটাও বঙ্গবন্ধু চিন্তা করেছিলেন। এটার প্রথম পর্বের কাজ শেষ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় পর্বের কাজও হচ্ছে। সেখানে সব ধরনের শুটিং যাতে করা যায়, সে ব্যবস্থা থাকবে। আমরা চাই দেশের অঙ্গন ছাড়িয়ে আমাদের চলচ্চিত্র বিদেশেও সমাদৃত হোক। সেই সঙ্গে শিল্পী-কুশলী সবাইকে আমি এ আহ্বান জানাই, এদিকে আরও মনোযোগ দিন। যেহেতু মানুষের জীবনে সচ্ছলতা এসেছে, তাই তারা বিনোদনের দিকে ঝুঁকছে।’ বক্তব্যের একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ ছবির শিল্পীদের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নির্মাতা-শিল্পীরা প্রত্যেকেই চমৎকার কাজ করেছেন। বিশেষ করে অভিনয়শিল্পীরা, তারা এত চমৎকার অভিনয় করেছে। সম্পূর্ণ অন্তর দিয়ে কাজ করেছে। এজন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আশা করি এটা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বড় অর্জন হয়ে থাকবে। যদিও খুব একটা অবসর মেলে না। তবু মাঝেমধ্যে ছবি দেখেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাত দিয়ে এফডিসি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এবং তাঁর হাত দিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে এ অঞ্চলে চলচ্চিত্রের যাত্রা হয়েছিল। তিনি জানতেন, অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর পশ্চিমাদের হিংস্র থাবা পড়েছে। সেজন্য তিনি এফডিসি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এর পর থেকে বহু কালজয়ী চলচ্চিত্র যেমন নির্মিত হয়েছে, বহু কালজয়ী শিল্পী তৈরি হয়েছেন। এ বছর আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন যৌথভাবে চিত্রনায়িকা রোজিনা ও অভিনেতা কামরুল আলম খান খসরু। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে রোজিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দেশের শিল্প-সংস্কৃতি বিকাশে এফডিসি প্রতিষ্ঠাসহ অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। যার ফলে আমরা অনেকেই কাজের সুযোগ পেয়েছি, আমি আপনাদের রোজিনা হতে পেরেছি। এ পুরস্কার পেয়ে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদানের জুরি বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার দীর্ঘ পথচলায় যারা সহযোগিতা করেছেন, পরিচালক-প্রযোজক, সহকর্মী, সাংবাদিক ও দর্শক সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার পুরস্কার তাদের সবার প্রতি উৎসর্গ করলাম। পুরস্কার প্রদান ও বক্তব্য শেষে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্ব। যেখানে চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও চিত্রনায়িকা পূর্ণিমার সঞ্চালনায় বিখ্যাত বেশ কটি গানের সঙ্গে মঞ্চে নেচেছেন সাদিয়া ইসলাম মৌ, নুসরাত ফারিয়া, মাহিয়া মাহি ও তমা মির্জা। এ ছাড়া ছিল সাইমন সাদিক-দীঘি, আদর আজাদ-পূজা চেরী, সোহানা সাবা-গাজী নূর ও জায়েদ খান-আঁচলের দ্বৈত পরিবেশনা। এ ছাড়া গান শুনিয়েছেন বালাম ও কোনাল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর