শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

জন্মনিবন্ধনে পদে পদে ভোগান্তি

বেশির ভাগ সময় সার্ভার বন্ধ, নিবন্ধন জটিলতায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা

হাসান ইমন

জন্মনিবন্ধনে পদে পদে ভোগান্তি

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চাকরিতে নিয়োগ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট নিবন্ধনসহ দেশে ১৯টি ক্ষেত্রে জন্মসনদের প্রয়োজন হয়। আবার কেউ মারা গেলে মৃত্যু নিবন্ধনের জন্যও লাগে জন্মসনদ। এটি না থাকলে উত্তরাধিকার নিশ্চিত করা যায় না। সব মিলে জন্মসনদ একজন নাগরিকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল নথি। অথচ এ সনদ পেতে ভোগান্তির অন্ত নেই নাগরিকদের। কারণ হিসেবে জানা গেছে, দিনের বেশিরভাগ সময় থাকে সার্ভার বন্ধ এবং যে সময়টুকুতে কাজ করতে হয় সে সময় থাকে সার্ভারে ধীরগতি। একই সঙ্গে টাকা পেমেন্ট করলেও নিবন্ধন করতে গেলে টাকা ‘নো পেমেন্ট’ দেখানো হয়। আর সার্ভার ডাউন ও বন্ধ থাকায় ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্মনিবন্ধনও করা যাচ্ছে না। এতে ভর্তি জটিলতায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জন্মনিবন্ধনে নতুন সার্ভার চালু করায় সেই নিবন্ধন জাতীয় পর্যায়ে কোনো কাজে আসছে না। সবমিলিয়ে জন্মনিবন্ধন করতে নানা সমস্যায় পদে পদে ভোগান্তিতে পড়ছেন নাগরিকরা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সার্ভার বন্ধ থাকায় অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করা যাচ্ছে না। অনেকে জন্মনিবন্ধন করতে এসে সার্ভার বন্ধ থাকায় করতে পারছেন না। একই সঙ্গে কিছু নিবন্ধন আগে করা হলেও সেগুলো প্রিন্ট দেওয়া যাচ্ছে না। দেখা গেছে, নিকুঞ্জ থেকে ছেলের জন্মনিবন্ধন করতে এসেছিলেন আজগর আলী। তারসঙ্গে কাউন্সিলর কার্যালয়ের বাইরে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের বয়স পাঁচ বছর। স্কুলে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্কুলে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী জন্মনিবন্ধন দিয়ে আবেদন করা লাগবে। সে জন্য নিবন্ধন করতে এসেছি। এসে দেখি কর্মকর্তারা বলছেন সার্ভার বন্ধ। সার্ভার চালু হলে করে দেবে।’ আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘গতকালও এসেছি, নিবন্ধনের জন্য টাকাও জমা দিয়েছি। কিন্তু কাজ শেষ করতে পারেনি। আজ আবার এসেছি, কিন্তু সার্ভার নাই।’ এ বিষয়ে কথা হয় ওয়ার্ড সচিব নুরু ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সার্ভার জটিলতা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু সময় সার্ভার থাকে না। এখন পর্যন্ত সার্ভার নেই (দুপুর ১২টা ২২ মিনিট)। আবার কিছু সময়  থাকলেও সার্ভারে কাজ খুব ধীরগতি হয়। একটা ক্লিক করলে ঘুরতেই থাকে। একটা জন্মনিবন্ধন করতে অনেক সময় লাগে। এসব কারণে দিনে ৮-১০টির মতো নিবন্ধন করা যায়। (যদিও প্রতিদিন ৩০টি জন্মনিবন্ধন করার ক্ষমতা তাদের দেওয়া হয়েছে।)’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে অনলাইনে টাকা পেমেন্ট করলেও নিবন্ধন করতে এসে দেখে টাকা পেমেন্ট হয়নি। একদিন বা দুই দিন পর টাকা পেমেন্ট দেখায়। একই সমস্যা দেখা গেছে সংস্থাটির ১৮ নম্বর ওয়ার্ডেও।’

এদিকে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সার্ভারের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিডিআরআইএস সফটওয়্যারে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সংক্রান্ত সব কার্যক্রম থাকবে। গত বৃহস্পতিবার রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের ওয়েবসাইটের নোটিসে জানানো হয়।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত ৪ অক্টোবর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নতুন ওয়েবসাইটে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করে। সংস্থাটির ৭৫টি ওয়ার্ডে এই কার্যক্রম চলছে। নিজেদের নতুন ওয়েবসাইটেই সরাসরি জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের আবেদন গ্রহণ ও সনদ বিতরণ করছে। ডিএসসিসির নিজস্ব সার্ভারে সহজে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন করা যাচ্ছে, সনদ পেতেও ভোগান্তি হচ্ছে না নাগরিকদের। তবে এ সনদ নিয়ে দেখা দিয়েছে আইনিসহ অন্য জটিলতা। এতে নতুন করে বিড়ম্বনায় পড়েছেন নাগরিকরা। নাগরিকদের অভিযোগ, দেড় মাস ধরে ডিএসসিসি নিজস্ব সার্ভারে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সনদের আবেদন গ্রহণ এবং বিতরণ করছে। তবে এসব সনদ নিয়ে স্কুল-কলেজে ভর্তি, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন করতে পারছেন না তারা। কারণ, ‘জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন’র দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের জাতীয় সার্ভারের সঙ্গে ডিএসসিসির আন্তযোগাযোগ নেই। এ ছাড়া ডিএসসিসির সঙ্গে সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠানের সমঝোতা স্মারকও (এমওইউ) নেই। ফলে তথ্য যাচাই করতে না পাড়ায় বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা নিতে গিয়ে হয়রানির মুখে পড়ছেন নাগরিকরা। তবে ডিএসসিসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা সরকারি ২৫টি দফতর ও মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। এর মধ্যে পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালককে ডিএসসিসি মেয়র এ বিষয়ে অবহিত করেছেন। তিনি আশ্বাসও দিয়েছেন। একই সঙ্গে ডিএসসিসির সঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের বৈঠক হয়েছে। তারাও আশ্বাস দিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দফতর ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। আশা করি শিগগির সমাধান হয়ে যাবে। এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন পর্যন্ত জাতীয় সার্ভার অর্থাৎ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের ওয়েবসাইট ব্যবহার করা হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়েবসাইট ব্যবহার হচ্ছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর