শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিলেটে জাতীয় পার্টি নিয়ে আওয়ামী লীগের টেনশন

জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে জেলার কয়েকটি আসন চাইবে জাপা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

শেষতক জোট সমঝোতা ঘটে গেলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে একাট্টা হয়ে ভোট করবে জাতীয় পার্টি (জাপা)। তাই সিলেটে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের কপালে জাপাকে নিয়ে টেনশনের ভাঁজ পড়েছে। জোটের ভাগবাঁটোয়ারায় এবারও কয়েকটি আসন জাপাকে ছেড়ে দিতে হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। জাপা মনে করে, রংপুরের পরই সিলেটে তাদের শক্ত ঘাঁটি। তাই জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটি তারা দাবি করবে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ ও ৫ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। আসন দুটি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন যথাক্রমে ইয়াহইয়া চৌধুরী ও মো. সেলিম উদ্দিন। আর একাদশ সংসদ নির্বাচনে জেলার কোনো আসনেই জয়ের মুখ দেখেনি জাপা। নবম সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী এম. ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে চমক দেখান আওয়ামী লীগের শফিকুর রহমান চৌধুরী। পরবর্তী দুই সংসদ নির্বাচনে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় শফিক চৌধুরী প্রার্থী হতে পারেননি। এবারও আসনটিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে কাজ করছেন ‘চব্বিশ ঘণ্টার রাজনীতিক’ খ্যাত শফিক চৌধুরী। এবার দলীয় নেতা-কর্মীরা সভা-সমাবেশ করে আসনটিতে শফিক চৌধুরীকে মনোনীত করার দাবি জানাচ্ছেন। এ ছাড়া এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ডা. অরূপ রতন চৌধুরী ও আখতারুজ্জামান চৌধুরী জগলু। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবি হলেও এবার আসনটিতে মহাজোটের মনোনয়ন চান জাপার সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন আরেক সাবেক সংসদ সদস্য মকসুদ ইবনে আজিজ লামা।

সিলেট-৩ আসনটি একসময় ঘাঁটি ছিল জাপার। এখন সাংগঠনিক অবস্থা খুব ভালো না। এ আসনে কয়েকবার নির্বাচন করেও জয়ের মুখ দেখতে পারেননি দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক। এবার তাঁর সঙ্গে মনোনয়নপ্রত্যাশী সিটি মেয়র নির্বাচনে ৬০ হাজার ভোট পেয়ে চমক দেখানো মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুল। এ ছাড়া সিলেট-৩ আসনে মনোনয়ন চাইবেন বিএমএ’র মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মো. মনির হোসাইন, বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সেক্রেটারি আবদুর রকিব মন্টু ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আ স ম মিসবাহ।

গেল দুই নির্বাচনে মহাজোটের কাছে সিলেট-৬ আসনে মনোনয়ন চেয়েও ব্যর্থ হয় জাপা। আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ বিজয়ী হন। নাহিদের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন। এবার এ তালিকায় যুক্ত হয়েছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর শাফি চৌধুরী এলিম। এ আসনে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন দলীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সেলিম উদ্দিন। সিলেট-৬ আসনে মনোনয়ন না পেলে সিলেট-৫ আসনে মহাজোটের একক প্রার্থী হতে চাইবেন সেলিম উদ্দিন।

সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সদস্যসচিব ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুদ্দীন খালেদ আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ‘সিলেট জেলার সবকটি আসনেই জাতীয় পার্টির প্রার্থী রয়েছেন। দল শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে গেলে এবং জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে সিলেট-২, ৩, ৫ ও ৬ আসনটি জাতীয় পার্টি চাইবে। এ চারটি আসনে জাতীয় পার্টির শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে।’

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে বলেন, ‘নির্দিষ্ট কোনো আসন নয়, পুরো সিলেটই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হওয়ায় মানুষও উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে নৌকায় ভোট দিতে উদ্গ্রীব। গেল নির্বাচনগুলোয় কয়েকটি আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের দলীয় প্রতীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি। এবার তারা সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলেও তারা সিলেট-২সহ সবকটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।’

সর্বশেষ খবর