রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্বঘোষিত ভিআইপির হুটার হর্নে ঝালাপালা কান

বিভ্রান্ত ট্রাফিক পুলিশ ভিআইপি সেজে অপরাধীর পার পাওয়ার সুযোগ সড়কে বিশৃঙ্খলা

শামীম আহমেদ

স্বঘোষিত ভিআইপির হুটার হর্নে ঝালাপালা কান

রাজধানীর মগবাজার মোড়ে দক্ষিণ দিকের সড়কে তখন সিগন্যালে আটকা ৭০-৮০টি গাড়ি। অন্য লেনের গাড়িগুলোকে সুশৃঙ্খলভাবে দ্রুত পার করতে ব্যস্ত ট্রাফিক পুলিশের কয়েকজন সদস্য। পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে দক্ষিণ দিকের সড়কে যানজটের ভিতরে তখন উচ্চ শব্দে হুটার হর্ন বাজিয়ে চলছিল একটি জিপ। কখনো বেজে উঠছিল অ্যাম্বুলেন্সের হুইসেল, কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ির হর্নের মতো ট্যা ট্যা শব্দ। কান ঝালাপালা শব্দে আশপাশের যানবাহনে থাকা মানুষগুলো চরম বিরক্ত হলেও ভ্রুক্ষেপ ছিল না জিপ চালকের। ভিআইপির গাড়ি আটকা পড়েছে ভেবে সম্ভবত পুলিশও দ্রুত সিগন্যালটি ছেড়ে দেয়। চিত্রটি গত শনিবার দুপুরের। রাজধানীতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব ভিআইপি হর্ন বা হুটারের উচ্চ শব্দে নাজেহাল মানুষ। সড়কের পাশের বাসিন্দাদের ভোগান্তি সীমাহীন। এই হর্ণযুক্ত গাড়ির সবচেয়ে বেশি দেখা মেলে অভিজাত স্কুল এলাকায় ক্লাস শুরু ও ছুটির সময়। স্কুল থেকে বাচ্চা আনা-নেওয়ার জন্য গাড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে হুটার হর্ন। আগারগাঁও এলাকার বিভিন্ন সরকারি অফিসের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর গাড়িতে এমন হর্ন ব্যবহার করতে দেখা গেছে। যদিও সড়ক পরিবহন আইন বলছে- আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম, অ্যাম্বুলেন্সের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ যানবাহন বাদে কেউ হুটার হর্ন ব্যবহার করতে পারবে না। এমনকি সংসদ সদস্যরাও এই ভিআইপি হর্ন ব্যবহার করতে চাইলে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে নিতে হবে অনুমতি। তবে এসব আইনের তোয়াক্কা করছেন না স্বঘোষিত ভিআইপিরা। সংসদ সদস্য, সরকারি আমলা থেকে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী, রাজনৈতিক নেতা, তাদের আত্মীয়স্বজন,     ব্যবসায়ী, অনেক সময় ভাড়া গাড়ির চালকরাও লাগাচ্ছেন হুটার হর্ন। লাল-নীল ফোকাস লাইট জ্বালিয়ে ও হুটার হর্ন বাজিয়ে কখনো উল্টো পথে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন গাড়ি। ভিআইপি মনে করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিচয় জানতে বিব্রত হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। রাজধানীর বড় রাস্তা থেকে অলিগলিতেও দেখা যাচ্ছে এসব হর্নের যথেচ্ছ ব্যবহার। এ ব্যাপারে সড়কে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, এসব হর্নের শব্দ শুনলে মনে হয় কোনো ভিআইপি যাচ্ছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ এসব গাড়ি আটকানোর সাহস পান না। অনেক সময় সার্জেন্টের উপস্থিতিতে গাড়ি আটকালে চালক বড় কোনো সরকারি কর্মকর্তার পরিচয় দেন। তখন ট্রাফিক পুলিশের কিছু করার থাকে না। কিছু করতে গেলে ওপর থেকে চাপ আসে। তবে ভিআইপি সেজে অনেক অপরাধীও পার পেয়ে যেতে পারে বলে স্বীকার করেন তারা। এদিকে ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি ঢাকার ‘ভিআইপি হর্নের’ ব্যবহার বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। এরপর পেরিয়ে গেছে আট বছরের বেশি। তবুও উচ্চ শব্দে হুটার হর্ন বাজিয়ে সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে স্বঘোষিত ভিআইপিরা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গুলশান ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার হাফিজুর রহমান রিয়েল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হুটার হর্নের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ করতে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। জরিমানা করছি। সামনে বড় আকারে অভিযান শুরু করব। বংশালের অটোপার্টস ব্যবসায়ী ইমরান বলেন, এসব হর্ন বৈধভাবেও আসে, অবৈধভাবেও আসে। ৩৫০-৪৫০ টাকাতেই পাওয়া যায়। একটি হর্নেই তিনটি সুইচ থাকে। তিন ধরনের শব্দ হয়। এর শব্দ এত কড়া যে, দুর্বল হার্টের কারও সামনে বাজালে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে। সরকার নিষিদ্ধ করার পর এখন ব্যবসায়ীরা কম আনেন। তবে কেউ চাহিদা দিয়ে রাখলে জোগাড় করে দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর