বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুর্লভ শামুকখোল পাখির আবাস

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

দুর্লভ শামুকখোল পাখির আবাস

দুর্লভ প্রজাতির শামুকখোল পাখি বগুড়ার কয়েক উপজেলায় আবাস গড়ে তুলেছে। বিভিন্ন বৃক্ষের শাখায় জোড়ায় জোড়ায় এরা সংসার পেতেছে। ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাখিগুলোর ডাকে মুখরিত হয়ে উঠছে এলাকাগুলো।

বড় বড় বৃক্ষের শাখায় বাসা বেঁধে আছে তারা। শামুকখোল পাখি ভোরে বাসা ছেড়ে বের হয়ে উড়ে যায় আশপাশের বিলে। এরা বিল থেকে ব্যাঙ, শামুক, মাছ, কাঁকড়া ও ছোট ছোট জলজ প্রাণী খেয়ে জীবনধারণ করে নিজেদের টিকিয়ে রাখছে। প্রথম দিকে সংখ্যায় কম দেখা গেলেও বংশবিস্তারে বগুড়ায় এখন কয়েক হাজার পাখি উড়ছে। বাঁশবাগান, শিমুল, কদম, পিটাহরি, পাকুড়, মেহগনিসহ বেশ কয়েক প্রজাতির গাছে এরা বাসা বেঁধেছে। বগুড়া সামাজিক বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার, শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের রামনগর গ্রামে অসংখ্য শামুকখোল পাখি বাসা বেঁধেছে। গ্রামটির চারপাশে রয়েছে একাধিক বড় বড় বাঁশবাগান। এই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে করতোয়া নদী ও পাশের গ্রাম দড়িপাড়া থেকে মমিনপুর ৪ কিলোমিটার, হাপুনিয়া গ্রামে রয়েছে প্রায় ৩ কিলোমিটারজুড়ে খাল। রামনগরে রয়েছে কয়েকটি ব্যক্তি মালিকানাধীন বড় বড় পুকুর। রয়েছে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে আবাদের খেত। এ ছাড়া বাগানের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এসব গাছের চিকন ও মোটা ডালগুলোয় আবাসস্থল গড়ে তুলেছে দুর্লভ প্রজাতির পাখি ‘শামুকখোল’। এ পাখিগুলো আবার চলেও যায়। কিছুদিন পর আবার ফিরে আসে।  বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধূসর রঙের পাখিগুলোর ডানাও বেশ বড়। ঠোঁট লম্বা এবং মাঝখানে ফাঁকা। গাছের চূড়ায় ডালপালায় ডানা শরীরের সঙ্গে লাগিয়ে বিশ্রাম করে। শামুকখোলের লেজ ও পাখার শেষভাগ কালো রঙের। ঠোঁটও বেশ খানিকটা বড়। শামুক এদের প্রিয় খাবার। শামুকের খোল ভাঙে ঠোঁট দিয়ে। তারপর সেটা ওপরের দিকে তুলে ধরে গিলে ফেলে। খাবার হিসেবে এরা শুধু শামুকই খায় না। মাছ, কাঁকড়া, ছোট ছোট জলজ প্রাণি, ব্যাঙ খেয়ে থাকে। অনেকটা বকের মতো দেখতে। একেকটা গাছে ২৫-৩০টি বাসা দেখা যায়। শুকনো ডাল, কঞ্চি ও লতাপাতার সমন্বয়ে বাসা তৈরি করে শামুকখোল। স্ত্রী-পুরুষ পাখি মিলে ১০-১২ দিনে তৈরি করে বাসা। পাঁচ ফুট পর্যন্ত বাসার দৈর্ঘ্য হয়। ডিম দেয় জুলাই-আগস্ট মাসে। তিন থেকে পাঁচটি ডিম পাড়ে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি মিলে ডিমে তা দেয়। ২৫ দিন লাগে ডিম ফুটে ছানা বের হতে। ৩০ থেকে ৩৫ দিন বয়স হলে ছানা উড়তে শেখে।

 সাধারণত তারা দল বেঁধে থাকে। দল বেঁধে খাবার সংগ্রহ করে। বর্ষাকালে উত্তরের জেলাগুলোতে বেশি দেখা যায়। খাবার থাকলে তারা এক স্থানে দীর্ঘদিন থেকে যায়। খাবার সংকট হলেই তারা অন্য স্থানে আবার বাসা বাঁধে। ২০১১ সাল থেকে বিহার এলাকায় পাখিগুলোকে নিয়মিত দেখা যায়। তাদের যেন কেউ ক্ষতি না করতে পারে সে বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়। বিহার গ্রামকে পাখির নিরাপদ রাজ্য গড়ে তুলতে ২০১৩ সালে তিরের আঞ্চলিক কমিটি করা হয়। ২০১৬ সালে শিবগঞ্জের বিহারহাটকে শামুকখোল পাখির রাজ্য ঘোষণা করা হয়। উপজেলা প্রশাসন থেকে পাখিগুলোর খোঁজ রাখা হয় নিয়মিত। বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসভিত্তিক সংগঠন ‘তির’ (টিম ফর এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ)-এর কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাইকোনিডিয়া গোত্রের কয়েক হাজার পাখি নিয়মিত আবাস হারিয়ে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বিপন্ন হওয়া বড়সড় গড়নের এ প্রজাতির পাখি ঝাঁক বেঁধে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকার বড় বড় বৃক্ষে আশ্রয় নিয়েছে। শুধু বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহারে নয়, জেলার শেরপুর, কাহালু, ধুনট, সারিয়াকান্দি উপজেলাতেও এই পাখির দেখা মিলছে। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আকতার জানান, পাখিগুলোর বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়। পাখির কলোনিগুলো নিরাপদ যেন থাকে সে বিষয়ে কাজ করা হয়। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে পাখিগুলো রক্ষায় সচেতন থাকতে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর