বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভয়ংকর মাদক ট্রাংক নিয়ে নতুন আতঙ্ক

সব বিমান-স্থল সমুদ্র বন্দরে বিশেষ সতর্কতা

সাখাওয়াত কাওসার

নতুন মাদক ‘ট্রাংক’ ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ঘোড়ার চেতনানাশক হিসেবে ব্যবহৃত ভয়ংকর এ ড্রাগটি যাতে কোনোভাবেই বাংলাদেশে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

২১ নভেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) গোয়েন্দা পরিচালক তানভীর মমতাজ স্বাক্ষরিত একটি সতর্কবার্তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেশের সব বিমান, স্থল ও সমুদ্র বন্দরে পৌঁছানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফেন্টানিল, হেরোইন, কোকেন ছাড়া আরও কিছু মাদকের সঙ্গে মেশানো হয় এটি সেগুলোর প্রভাব ও স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য। ট্রাংক সেবনকারীরা কিছু সময়ের জন্য বাস্তবতা ভুলে চলে যান ভিনজগতে। বিচরণ করেন কল্পনায়। তবে একটু বেশি মাত্রায় সেবনে মৃত্যুও ঘটতে পারে। জানা গেছে, ভয়ংকর এ মাদকের বিষয়টি প্রথম ডিএনসির নজরে আনেন রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালক (গোয়েন্দা) মোহা. জিল্লুর রহমান। তিনি ৩০ আগস্ট এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠান ডিএনসির প্রধান কার্যালয়ে। এর আগে ২০ আগস্ট ‘মাঙ্কি ডাস্ট’ নামে আরও একটি মাদকের বিষয়েও সতর্কতা নিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন এই কর্মকর্তা।

সম্প্রতি ডিএনসির প্রধান কার্যালয়ে দেওয়া সেই প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, জম্বি ড্রাগ তথা ট্রাঙ্কের ধ্বংসাত্মক দিক হলো এটি ত্বক, পেশি, রক্তনালি ও শরীরের প্রধান অঙ্গগুলোর মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। ট্রাঙ্ক সেবনকারীর শরীরে নিরাময়-অযোগ্য ক্ষত সৃষ্টি হয়; যা ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস সংক্রমিত হয়ে গ্যাঙ্গারিন হয়ে যায়। কিছু কিছু ট্রাঙ্ক সেবনকারীর মনোবৈকল্য দেখা যায়। তারা কেউ আগ্রাসি আচরণ করে আবার কারও মতিভ্রম হতে পারে। ট্রাঙ্ক মানুষের স্নায়ুর এমনভাবে ক্ষতি করে যা হৃদস্পন্দন এবং শ্বাসপ্রশ্বাসকে কমিয়ে দিতে পারে; যার ফলে সেবনকারীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। ডিএনসির অপারেশন্স এবং গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক তানভীর মমতাজ বলেছেন, ‘নতুন এ ড্রাগসটির ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে এর ব্যবহার ভয়াবহ মাত্রায় বেড়ে গেছে। সে কারণে বাংলাদেশেও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।’ নতুন এ মাদক নিয়ে কাজ করছেন এমন কর্মকর্তারা বলেন, ট্রাঙ্কের মারাত্মক আশঙ্কার বিষয় হলো অনেক সেবনকারীও জানে না তারা ট্রাঙ্ক সেবন করছে; কারণ অনেক ক্ষেত্রেই এটি সেবনকারীর অজান্তে অন্যান্য মাদকের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ট্রাঙ্ক মানবদেহে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত নয়, এটি বড় পশু যেমন ঘোড়ার চেতনানাশকের কাজে ব্যবহৃত হয়। তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত ট্রাঙ্ক বাংলাদেশে সেভাবে না ছড়ালেও যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অভিবাসী রয়েছে। এ বিপুলসংখ্যক প্রবাসীর যাতায়াত রয়েছে বাংলাদেশে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) ও প্রিভেনশনের তথ্যমতে, ট্রাঙ্কের মাত্রাতিরিক্ত সেবনের কারণে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে মৃত্যুহার ৩৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির ফেডারেল সরকারের তথ্যানুযায়ী, এ মাদকের মাত্রাতিরিক্ত সেবনে প্রতি পাঁচ মিনিটে একজন মৃত্যুবরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাঙ্কের ব্যাপক প্রবাহ চিকিৎসা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের আশঙ্কার কারণ হয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ খবর