বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে ১৫৮ পয়েন্ট দিয়ে দেশে ঢুকছে মাদক

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

বৃহত্তর চট্টগ্রামের ছয় জেলার ১৮ উপজেলায় ১৫৮ পয়েন্ট দিয়ে দেশে ঢুকছে মাদক। যার মধ্যে রয়েছে মরণ নেশা ইয়াবা, আইস, গাঁজা, ফেনসিডিল, এসকফ সিরাপসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। এসব মাদক ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের তৈরি করা ‘মাদকদ্রব্য পাচারের রুট’ শীর্ষক ম্যাপে এ ভয়ংকর চিত্র উঠে এসেছে।

‘মাদকদ্রব্য পাচারের রুট’ শীর্ষক ম্যাপ তৈরির নেতৃত্ব দিয়েছেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা মজিবুর রহমান পাটোয়ারী। তিনি বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রায় এক বছরের চেষ্টায় চিহ্নিত করা হয়েছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের মাদক পাচারের রুটগুলো। চট্টগ্রাম বিভাগের ছয় জেলার ১৮ উপজেলা দিয়ে মাদক প্রবেশ করে। যা পরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।’ মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লাহ কাজল বলেন, ‘বৃহত্তর চট্টগ্রামে মাদক প্রবেশের পয়েন্ট চিহ্নিত করার পর ওই রুটগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধির সুফল হিসেবে চিহ্নিত রুটগুলো দিয়ে মাদক পাচার আগের তুলনায় অনেক কমেছে।’ জানা যায়, বৃহত্তর চট্টগ্রামের ছয় জেলার ১৮ উপজেলায় ১৫৮টি পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করে মাদকের চালান। এর মধ্যে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে আসে মরণ নেশা  ইয়াবা ও আইস (ক্রিস্টাল মেথ)। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী এবং খাগড়াছড়ি জেলার পয়েন্টগুলো দিয়ে প্রবেশ করে গাঁজা, ফেনসিডিল, এসকফ সিরাপ ও বিদেশি মদ। যার মধ্যে কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ২০ পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করে ইয়াবা এবং আইস। পয়েন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ভালুখিয়ার শিকদারপাড়া, বাইশপাড়ির নারাইনশন, কাস্টমসের ডেউবুনিয়া, খাইনখালীর চাকমাকাটা, পালংখালীর লাম্মনহালী। টেকনাফ উপজেলার চাকমারকুলের কোয়ানচিবন, হোয়াই্যকংয়ের ডেউবুনিয়া, উনচিপ্রাংয়ের খোয়ারহালী, কাঞ্জরপাড়ার শালখালী, জীম্মনখালীর জিয়ানহালী, নয়াবাজারের কুয়ারবিল, হ্নীলার নাখপুরা, মুছনীর রাম্মাঘোনা, জাদীমুড়ার রংগাদন, নাইট্যংপাড়ার পেরানপুরু, টেকনাফ জেটির খায়ামখালী, সাবরাংয়ের মংডু শহর, ঘোলার পাড়ার মন্নিপাড়া, শাহপরীর দ্বীপের শাধনশা, নাইক্কনদীয়া ও সেন্টমার্টিনের মেরুল্লা। বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সাত রুটের মধ্যে রয়েছে ফুতলী, লম্বাশিয়া, ভালুরখাইয়া, চাকঢালাদৌছড়ি, উত্তরপাড়া ও বাইশফাঁড়ি। কুমিল্লার পাঁচ উপজেলার ৩৬ পয়েন্ট দিয়ে দেশে প্রবেশ করে ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল, এসকাফ সিরাপ, বিয়ার এবং বিদেশি মদ। এর মধ্যে রয়েছে আদর্শ সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর, পস্তরখিল, গোলাবাড়ি, নোয়াপাড়া, কটকবাজার, শাহপুর কাম্বারা টিলা, দলকিয়া ও গাজীপুর। সদর দক্ষিণ উপজেলার একবালিয়া, কনেশতলা, ধনপুর, রাজেশপুর ও বিরাহিমপুর। চৌদ্দগ্রামের সাহেবের টিলা, নোয়াপাড়া, বসন্তপুর, আদর্শ গ্রাম, কালিকাপুর, নাটাপাড়া, শ্যামনগর, মতিয়াতলী, কালিশপুর, সুজাতপুর ও ধনমুড়ি। বুড়িচং উপজেলার চড়ানল, নবীয়াবাদ, হায়দারাবাদ, তবের মুড়া, আনন্দপুর দক্ষিণ ও গুচ্ছগ্রাম। ব্রাহ্মণপাড়ার সালদা নদী, নারায়ণপুর, তেঁতাভূমি, আশাবাড়ী ও হরিমঙ্গল। খাগড়াছড়ির রামগড়, মাটিরাঙা এবং পানছড়ির ৩৬ পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করে ফেনসিডিল, গাঁজা, বিয়ার এবং বিদেশি মদ। এ পয়েন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে রামগড় উপজেলার বল্টুরাম, সোনাইপুল, মহামুন, কাশিয়ারি ও লাচাড়ীপাড়া। এ ছাড়া মাটিরাঙা উপজেলার লক্ষ্মীছড়ি, দইল্যা, ওয়াশো, ছাদিয়াবাড়ি, ছলিটাছড়া, অযোধ্যা, সফিটিলা, বেলছড়ি, শান্তিপুড়, করল্যাছড়ি, আমতলী, তবলছড়ি, দেয়ানবাজার, দরপাশাবাড়ি, আছালং, ভগবানটিলা, বান্দরসিং, সীমানাপাড়া, রূপসেনপাড়া, নন্দকুমার, ছনখোলা, কচুছড়ি, বোদ্ধমনি, পিহাইট, নারাইছড়ি, লোগাং, দুদকছড়া, পুচগাং, বাপ্পীমোড় এবং বাবুড়াপাড়া।  ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার চার উপজেলার ৩৪ পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করে ফেনসিডিল, এসকফ সিরাপ, ইয়াবা, বিদেশি মদ, বিয়ার এবং গাঁজা। এ পয়েন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে বিজয়নগর উপজেলার সিংগারবিল, বিষ্ণপুর, নোয়াবাদী, নলগড়িয়া, ইকরতলী, সেজামুড়া, কামালমুড়া, চাঁদপুর, কালাছড়া ও হরষপুর। এ ছাড়া আখাউড়া উপজেলার আজমপুর, কল্যাণপুর, হিরাপুর, আবদুল্লাপুর, চানপুর, আনোয়ারাপুর, কুড়িপাইকা, সেনারবাগি, মিনারকোট, কাইয়াতলা, জয়নগর ও সৈয়দপুর। কসবা উপজেলার অস্টজঙ্গল, কাশিনাথপুর, কালিকাপুর, গোসাইপুর, গঙ্গনগর, তারাপুর, রাহতখোলা, চাটুয়াখোলা, গোসাইপুর, কৈয়াপনিয়া, তারাপুর ও আকবপুর। ফেনীর চার উপজেলার ৩২ পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করে গাঁজা, ফেনসিডিল, বিয়ার ও বিদেশি মদ। যার মধ্যে ফেনী সদর উপজেলার জের কাচার, বরাইরা, ধর্মপুর, জোয়ার কাচার, কাজিরবাগ, গীতাবাড়ি। ফুলগাজী উপজেলার পেঁচিবাড়িয়া, তারাকুচা, খাজুরিয়া, গোসাইপুর, বসন্তপুর, নোয়াপুর, জামমুড়া, মনতলা ও কমুয়া। পশুরাম উপজেলার গুথুমা, অলকা, বিলোনিয়া, ধানকুড়া, সুবারবাজার, বাজেশপুর, জয়ন্তীনগর, বাঁশপদুয়া ও কেথরাংগা। ছাগলনাইয়ার মধুগ্রাম, দেবপুর, যশপুর, ছয়ঘরিয়া, সোনাপুর, দারোগারহাট, চম্পকনগর ও অলিনগর।

সর্বশেষ খবর