শিরোনাম
রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

তদন্ত কমিটির সঙ্গেও জালিয়াতি

বিআরটিএর ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত, তিনজনকে তাৎক্ষণিক বদলি

আরাফাত মুন্না

তদন্ত কমিটির সঙ্গেও জালিয়াতি

যানবাহনের ফিটনেস সনদ প্রদানে অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তে গঠিত কমিটির সঙ্গেও অভিনব কায়দায় জালিয়াতি ও প্রতারণার চেষ্টা করেছেন ঢাকার দুই বিআরটিএ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। তবে তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ৬ ঘণ্টায় প্রায় ১ হাজার ২০০ যানবাহনের ফিটনেস সনদ দেওয়ার ঘটনায় বিআরটিএ’র ইকুরিয়া ও পূর্বাচল কার্যালয়ের ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে এরই মধ্যে ওইসব কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিসও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে গুরুতর অভিযোগ থাকা তিন মোটরযান পরিদর্শককে। বিআরটিএ’র এক নির্ভরযোগ্য সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ফিটনেস সনদ প্রদানে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে ৫ নভেম্বর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাককে প্রধান করে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ৭ নভেম্বর কমিটি বিআরটিএ চেয়ারম্যান বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করে। তদন্তে দায়ী ১০ কর্মকর্তা হলেন বিআরটিএ’র ইকুরিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ফিটনেস) জি এম নাদির হোসেন, মোটরযান পরিদর্শক তানভীর আহমেদ, মনীষ কুমার চক্রবর্তী ও মো. রুহুল আমীন। এ ছাড়া পূর্বাচল কার্যালয়ের উপপরিচালক পর্কন চৌধুরী, সহকারী পরিচালক (ফিটনেস) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মোটরযান পরিদর্শক শামসুদ্দিন আহমেদ, মো. নজরুল ইসলাম, মো. আলমগীর শেখ ও অসীম পাল। এদের মধ্যে শামসুদ্দিন আহমেদ, মনীষ কুমার চক্রবর্তী ও মো. রুহুল আমিনকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে। এ দুই বিআরটিএ কার্যালয়ে ৩০ অক্টোবর ফিটনেস সনদ প্রদানে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে গত ৫ নভেম্বর ‘৬ ঘণ্টায় ১২০০ ফিটনেস সনদ!’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ প্রতিদিন। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের দিনই সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিআরটিএ। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩০ অক্টোবর বিআরটিএ’র ঢকা মেট্রো সার্কেল-২ (ইকুরিয়া) ও ঢাকা মেট্রো সার্কেল-৪ (পূর্বাচল) কার্যালয় থেকে অস্বাভাবিকসংখ্যক যানবাহনের ফিটনেস নবায়ন করা হয়েছে। ফিটনেস সনদ প্রদানের সময় ওইসব মোটরযান সরেজমিনে গিয়ে শতভাগ পরিদর্শন করা হয়নি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পরিদর্শন করা যানবাহনের সঙ্গে ছবি তোলার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেদিন মোটরযান পরিদর্শকরা তা করেননি। উল্টো মোটরযানের উপস্থিতির সত্যতা প্রমাণে নম্বর প্লেট সংযোজনের সময় তোলা ইভিআর সিস্টেমে সংরক্ষিত ছবি উপস্থাপন করা হয়েছে তদন্ত কমিটির কাছে, যা জালিয়াতি ও প্রতারণার শামিল। ফিটনেস সনদ গ্রহণে যানবাহনের অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট না থাকার পাশাপাশি ফাইলে দালাল চক্রের বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন থাকার প্রমাণও পেয়েছে তদন্ত কমিটি। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিআরটিএকে একটি দুর্নীতি-অনিয়মমুক্ত প্রতিষ্ঠান করতে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। বর্তমানে ঢাকার প্রতিটি বিআরটিএ কার্যালয়ের কার্যক্রম মনিটরিং করতে প্রতিদিন মন্ত্রণালয় থেকে একজন করে কর্মকর্তা পাঠানো হচ্ছে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই। আশা করি এতে কিছুটা হলেও কাজ হবে। পর্যায়ক্রমে ঢাকার বাইরের বিআরটিএ কার্যালয়গুলো নিয়েও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মাত্র ৬ ঘণ্টায় প্রায় ১ হাজার ২০০ যানবাহনের ফিটনেস সনদ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ঢাকার দুই কার্যালয়ে। বিআরটিএ’র ঢাকা মেট্রো সার্কেল-২ (ইকুরিয়া) ও ঢাকা মেট্রো সার্কেল-৪ (পূর্বাচল) কার্যালয়ে এ ঘটনা। এর বিপরীতে একই দিন রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ত বিআরটিএ মিরপুর সার্কেলে (ঢাকা মেট্রো-১) মাত্র ৪৫টি এবং উত্তরা কার্যালয়ে (ঢাকা মেট্রো-৩) মাত্র ২৭টি গাড়ির ফিটনেস সনদ দেওয়া হয়েছে।’ বিআরটিএ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ‘৩০ অক্টোবর ইকুরিয়া কার্যালয়ে ৬২১ গাড়ি এবং পূর্বাচল কার্যালয়ে ৫৬৪ গাড়িকে ফিটনেস সনদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পূর্বাচল কার্যালয়ের মোটরযান পরিদর্শক শামসুদ্দিন আহমেদ একাই দিয়েছেন ৪৮০ যানবাহনের ফিটনেস সনদ।’ বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধান বলছে, ‘ওইদিন ইকুরিয়া ও পূর্বাচল বিআরটিএ কার্যালয়ে যেসব গাড়ির ফিটনেস সনদ দেওয়া হয়েছে, তার ১০ শতাংশ গাড়িও সরাসরি উপস্থিত হয়নি। দালাল চক্র ও অন্যান্য পদ্ধতিতে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও আর্থিক সুবিধা নিয়ে এসব অনুপস্থিত গাড়ির ফিটনেস সনদ দেওয়া হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর