রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

শিল্পকলায় চিত্রাঙ্গদা

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

শিল্পকলায় চিত্রাঙ্গদা

নাট্যসংগঠন স্বপ্নদলের প্রযোজনায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে একই দিনে মঞ্চায়ন হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’র দুটি প্রদর্শনী। গতকাল একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা এবং সাড়ে সাতটায় অনুষ্ঠিত হয় এই দুটি প্রদর্শনী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর সৃষ্টি ‘চিত্রাঙ্গদা’র প্রদর্শনীর নির্দেশনায় ছিলেন জাহিদ রিপন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাভারতের চিত্রাঙ্গদা-উপাখ্যান অবলম্বনে ১৮৯২ সালে কাব্যনাট্যরপে এবং ১৯৩৬ সালে নৃত্যনাট্যরূপে ‘চিত্রাঙ্গদা’ রচনা করেন। স্বপ্নদলের ‘চিত্রাঙ্গদা’ প্রযোজনাটি নির্মিত হয়েছে কাব্যনাট্যের পা-ুলিপি অবলম্বনে। নাট্যকাহিনিতে উপস্থাপিত হয়- মহাবীর অর্জুন সত্যপালনের জন্য একযুগ ব্রহ্মচর্যব্রত গ্রহণ করে মণিপুর বনে এসেছেন। অর্জুনের প্রেমে মণিপুর-রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদা উদ্বেলিত হলেও অর্জুন রূপহীন চিত্রাঙ্গদাকে প্রত্যাখ্যান করেন। অপমানিত চিত্রাঙ্গদা প্রেমের দেবতা মদন এবং যৌবনের দেবতা বসন্তের সহায়তায় এক বছরের জন্য অপরূপ সুন্দরীতে রূপান্তরিত হন। এবার অর্জুন চিত্রাঙ্গদার প্রেমে পড়েন। কিন্তু অর্জুনকে লাভ করেও চিত্রাঙ্গদার অন্তর দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত হতে থাকে- অর্জুন প্রকৃতপক্ষে কাকে ভালোবাসেন, চিত্রাঙ্গদার বাহ্যিক রূপ নাকি তার প্রকৃত অস্তিত্বকে? এভাবে ‘চিত্রাঙ্গদা’ পৌরাণিক কাহিনির আড়ালে যেন এ কালেরই নর-নারীর মনোদৈহিক সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং পাশাপাশি পারস্পরিক সম্মান নিয়ে অবস্থানের প্রেরণারূপে উপস্থাপিত হয়।

বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোনালী, জুয়েনা, শিশির, শ্যামল, অর্ক, সুমাইয়া, সামাদ, ঊষা, জেবু, আলী, বিপুল, নিসর্গ, হাসান, সুকুমার, তুষার,  রাজীব, বিমল, অনিন্দ্য প্রমুখ।

বাংলা একাডেমির সাধারণ পরিষদের ৪৬তম বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত : গতকাল অনুষ্ঠিত হলো বাংলা একাডেমির সাধারণ পরিষদের ৪৬তম বার্ষিক সভা।

একাডেমি প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও বাংলা একাডেমির পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সভার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ছিল পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রয়াত গুণী ব্যক্তিদের স্মরণে শোকপ্রস্তাব পাঠ ও তাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এবং একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. হাসান কবীর ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট অবহিত করেন।

একাডেমির সদস্যবৃন্দ বার্ষিক প্রতিবেদন ও বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন। মহাপরিচালক সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং উত্থাপিত প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বক্তব্য প্রদান করেন। সভায় ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত ৪৫তম বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যবিবরণী সারা দেশ থেকে আগত একাডেমির ফেলো, জীবনসদস্য ও সদস্যদের সম্মতিক্রমে অনুমোদন ঘোষণা করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। তিনি অসুস্থ বোধ করায় সাধারণ সভার পরবর্তী কার্যক্রমে পর্যায়ক্রমে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির ফেলো ড. নূহ-উল-আলম লেনিন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাধারণ সভায় সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বাংলা একাডেমি সাম্মানিক ফেলোশিপ ২০২৩ এবং বাংলা একাডেমি পরিচালিতজ্জ মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার-২০২৩, অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ নাট্যজন পুরস্কার-২০২৩, আবু রুশ্দ সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩, মেহের কবীর বিজ্ঞানসাহিত্য পুরস্কার-২০২৩, সাহিত্যিক মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ প্রবন্ধসাহিত্য পুরস্কার-২০২৩, সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ এবং হালীমা-শরফুদ্দীন বিজ্ঞান পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করা হয়। ‘বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ ২০২৩’ প্রাপ্তরা হচ্ছেন : মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু (সাংবাদিকতা), এ কে শেরাম (আদিবাসী গবেষণা), মো. আলম দেওয়ান (ফোকলোর), তানভীর মোকাম্মেল (চলচ্চিত্র), আক্কু চৌধুরী (মুক্তিযুদ্ধ), ফালগুনী হামিদ (সংস্কৃতি) এবং ডা. হালিদা হানুম আখতার (চিকিৎসাবিজ্ঞান)। কবি নির্মলেন্দু গুণ ‘মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার’-২০২৩, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার ‘অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ নাট্যজন পুরস্কার’-২০২৩, অধ্যাপক মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ ‘আবু রুশ্দ সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩’, ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ ‘মেহের কবীর বিজ্ঞানসাহিত্য পুরস্কার’-২০২৩, ড. অনুপম সেন ‘সাহিত্যিক মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ প্রবন্ধসাহিত্য পুরস্কার’-২০২৩, কবি ওমর কায়সার ‘সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার’-২০২৩ এবং ‘বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট : বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অবদান’ গ্রন্থ রচনার জন্য আবদুল গাফ্ফার ‘হালীমা-শরফুদ্দীন বিজ্ঞান পুরস্কার-২০২৩’-এ ভূষিত হয়েছেন।

পুরস্কার ও ফেলোশিপপ্রাপ্ত গুণীজনদের হাতে পুরস্কারের অর্থমূল্য, সম্মাননাপত্র, সম্মাননা-স্মারক ও ফুলেল শুভেচ্ছা তুলে দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। কবি নির্মলেন্দু গুণের পক্ষে তার কন্যা মৃত্তিকা গুণ এবং আক্কু চৌধুরীর পক্ষে রামেন্দু মজুমদার পুরস্কার ও ফেলোশিপ গ্রহণ করেন।

সর্বশেষ খবর