সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দ্রুত বিচারের মামলায়ও ধীরগতি

বিচারাধীন মামলায় ৫৪ শতাংশই ঝুলছে পাঁচ বছরের বেশি

আরাফাত মুন্না

দ্রুত বিচারের মামলায়ও ধীরগতি

পুরান ঢাকার ওয়ারীতে গৃহবধূ রেশমা (২০) হত্যা মামলার একমাত্র আসামি স্বামী রবিন হোসেনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মামলাটি পাঠানো হয় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এ। অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচার শুরু হয়েছে। তবে মামলা নিষ্পত্তির নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই।

আইন অনুযায়ী ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো মামলা নিষ্পত্তির বিধান থাকলেও এ মামলার তারিখ পরে তিন থেকে চার মাস পর। সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য এ পর্যন্ত এই মামলাটিতে চার বার দিন ধার্য করা হয়। গত বছর ৪ অক্টোবর ছিল প্রথম ধার্য দিন। এরপর চলতি বছর ২৩ এপ্রিল ও ২৩ আগস্ট আরও দুটি নির্ধারিত তারিখও পেরিয়ে গেছে, হয়নি সাক্ষ্য গ্রহণ। শুধু এ মামলাটিই নয়, দেশের ৯টি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এমন ৯৫টি মামলা বিচারাধীন আছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৪ শতাংশ, অর্থাৎ ৫১টি মামলাই ঝুলছে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে। এ ছাড়া এসব ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য থাকা আরও ৬৭টি মামলা স্থগিত রয়েছে উচ্চ আদালতের নির্দেশে।

আইনজ্ঞরা বলেন, বিচারে দীর্ঘসূত্রতা দেশের বিচার বিভাগের জন্য বড় সমস্যা। আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল করা হলেও সাক্ষী না আসা, প্রয়োজনের তুলনায় কম ট্রাইব্যুনাল থাকাসহ নানা কারণে এখানেও মামলা নিষ্পত্তির গতি কম। ফলে সাধারণ মানুষ আইনের প্রকৃত সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী,      ঢাকার চার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ৩৫টি, চট্টগ্রামের একমাত্র ট্রাইব্যুনালে ২৯টি, রাজশাহীর এক ট্রাইব্যুনালে ৫টি মামলা বিচারাধীন আছে। এ ছাড়া খুলনা, বরিশাল এবং সিলেটে থাকা একটি করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পর্যায়ক্রমে ১০, ৬ এবং ১০টি মামলা বিচারাধীন আছে। আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ২০০২ সালে প্রণয়ন করা হয় ‘আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন’। আর এ আইনের অধীনে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একই বছর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইনও প্রণয়ন করে তৎকালীন সরকার। দ্রুত বিচার আইন প্রণয়নের সময় দুই বছরের জন্য আইনটি করা হলেও বিভিন্ন সময়ে এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সংশোধিত আইনে মামলা নিষ্পত্তিতে বেঁধে দেওয়া হয়েছে ১২০ দিন। এই সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা না গেলে কারণ উল্লেখ করে বিচারক আরও ৬০ দিন সময় বৃদ্ধি করতে পারবেন বলেও সংশোধিত আইনে উল্লেখ রয়েছে। দ্রুত বিচারের মামলায় দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিচারে দীর্ঘসূত্রতার জন্য মূলত সাক্ষী না আসা এবং বিচার কাজ মুলতবি হওয়া প্রধানত দায়ী। রাষ্ট্রপক্ষের কাজ হবে যে কোনোভাবে সাক্ষী হাজির করা এবং মুলতবি ঠেকানো। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন মনে করেন, এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে সরকারের মনিটরিং খুব জরুরি। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের বিচারক স্বল্পতা রয়েছে এটা অস্বীকার করা যাবে না। একই সঙ্গে বিচার চলাকালে বার বার সমন দিয়েও সাক্ষীদের হাজির করা যায় না। সে ক্ষেত্রে বিচারক চাইলেও মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পারেন না। এ জন্য এসব সমস্যা সমাধানে দ্রুত বিচারের মামলাগুলোর ওপর সরকারের মনিটরিং আরও বাড়াতে হবে।

সর্বশেষ খবর