শিরোনাম
সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মৌসুম না আসতেই পানিশূন্য তিস্তা

নজরুল মৃধা, রংপুর

মৌসুম না আসতেই পানিশূন্য তিস্তা

মৌসুম না আসতেই তিস্তা পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে পলি পড়ায় ডালিয়া থেকে রংপুরের কাউনিয়া পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে জেগে উঠেছে বিশাল চর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে ২ কোটি টনের বেশি পলি নদীতে প্রবেশ করায় প্রতি বছরই নদীর পানির স্তর কমে যাচ্ছে। ক্রমাগত পলি পড়ার কারণে নদীর নিম্নাংশ ভরাট হয়ে ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে নদী ড্রেজিং না হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে এ পলির স্তর। পানির অভাবে দেশের বৃহত্তম তিস্তা সেচ প্রকল্প অকেজো হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

জানা গেছে, চলতি বর্ষা মৌসুমে তিস্তা নদীতে সর্বোচ্চ এক দিনে পানি এসেছিল ১ লাখ ৪০ হাজার ৫৫৩ কিউসেক। এটাই এখন পর্যন্ত রেকর্ড। সর্বশেষ ৪ অক্টোবর পানি এসেছে ৮৭ হাজার কিউসেক। অপরদিকে শুকনো মৌসুমে পানি নেই বললেই চলে। বর্তমানে তিস্তা নদীতে পানি পাওয়া যাচ্ছে ৫ থেকে ৬ হাজার কিউসেক। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শুকনো মৌসুম ধরা হয়। ডিসেম্বরে পানি প্রবাহ আরও কমে যাবে। সে ক্ষেত্রে তিস্তা সেচ প্রকল্পে পানির স্বল্পতা দেখা দেবে।

সেচ প্রকল্প সম্পর্কে জানা গেছে, ডালিয়ায় তিস্তা নদীর পানি সেচ প্রকল্পে ব্যবহারের প্রথম পরিকল্পনা হয়েছিল ১৯৪৫ সালে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর দুই দেশের এই প্রকল্প আলাদাভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ অঞ্চলে প্রথম সম্ভাবনা যাচাই সমীক্ষা হয় ১৯৬০ সালে। দ্বিতীয় সমীক্ষা প্রতিবেদন ১৯৬৯-৭০ সময়কালে সমাপ্ত হয়। পাকিস্তান আমলে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি পরিকল্পনা স্তরেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ প্রকল্পের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ১ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমিকে সেচ চাষের আওতায় আনার সিন্ধান্ত নেওয়া হলেও পানি প্রবাহ ঠিক না থাকায় প্রতিটি মৌসুমে পানি নিয়ে হাহাকার ওঠে। তিস্তা ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার একটি উপনদী। উত্তর সিকিমের পার্বত্য অঞ্চলে এ নদীর উৎপত্তি। লাচেন ও লাংচু নামের দুই পর্বত স্রোতধারাই তিস্তার মূল উৎস। এ দুই স্রোতধারা সিকিমের চুংথাংয়ে এসে মিলেছে। চুংথাংয়ে ভাটিতে তিস্তা আস্তে আস্তে প্রশস্ত হতে থাকে। সিংতামে এর প্রশস্ত ৪৩ মিটার। চুংথাং এবং সিংতামের বহু পর্বতের স্রোত তিস্তাকে সমৃদ্ধ করেছে। এগুলোর মধ্যে রাংনিচু, ডিকচু, তালাংচু চাকুংচু। রাংনিচু একটি বড় উপ-নদী। তিস্তার সঙ্গে এটি সিতামে গিয়ে মিলেছে। অন্য ৩টি গিয়ে মিলেছে গ্যাংটকের কাছে। এভাবেই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে তিস্তা ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার সিবকের কাছে সমতল ভূমিতে নেমে আসে। সিবকের কাছে এসে তিস্তা প্রশস্ত হয়ে যায়। সিবকের ভাটিতে আবার লিশ, সিশ, চেল ও নেংড়া পর্বতের স্রোতধারা তিস্তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে একে আরও সমৃদ্ধি করে। তিস্তা দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারের ওপর দিয়ে দোর্দ- প্রতাপে বইতে থাকে। জলপাইগুড়ি জেলার রায়গঞ্জ থানার পূর্বপ্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত হয়ে জলপাইগুড়ি সদর ও ময়নাগুড়ি থানা অতিক্রম করে। জলপাইগুড়িতে প্রায় ৫৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে তিস্তা বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার ছাতনাই গ্রামের মাইল খানেক উত্তর দিয়ে প্রবেশ করে। বাংলাদেশে প্রায় ১১২ কিলোমিটার পথ প্রবাহিত হয়ে তিস্তা কুড়িগ্রামের চিলমারীতে যমুনার সঙ্গে গিয়ে মিশেছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, নভেম্বর থেকে শুকনো মৌসুম ধরা হয়। এ সময় নদীতে পানি কম থাকে।

সর্বশেষ খবর