মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

এবার যুদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে

আকতারুজ্জামান

এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের পর এবার ছাত্র-ছাত্রীদের অংশ নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়। উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থীই পছন্দের উচ্চ শিক্ষার বিদ্যাপীঠে নিজের অবস্থান করে নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। চলতি বছরে সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানে পাস করেছে ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৫ জন। এই শিক্ষার্থীদের সারা দেশে ভর্তিযোগ্য আসনের সংকট না থাকলেও পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় বা চাহিদামাফিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবে না তারা। ফলাফলে দেখা গেছে, সারা দেশে চলতি বছরে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। এই শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য থাকে মূলত সরকারি বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে প্রায় ৭০ হাজার। সে হিসেবে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদেরও আসন হবে না এসব বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে। তাই বাধ্য হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি হতে হবে সারা দেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ফাজিল মাদরাসা আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রথমবর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে মাত্র ৫৭ হাজার ৯৯টি। দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এমবিবিএস কোর্সে চলতি বছর ১ হাজার ৩০টি আসন বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৮০টিতে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতেই ভর্তিচ্ছুদের সম্মুখীন হতে হবে বড় প্রতিযোগিতার। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (পাস)/স্নাতক (সম্মান)/ স্নাতক (কারিগরি) পর্যায়ে প্রথমবর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে ১২ লাখ ৬৯ হাজার ৯৪৮টি। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬১০ টি। সে হিসাবে এইচএসসি উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠে ভর্তির ক্ষেত্রে আসনের কোনো স্বল্পতা থাকবে না। এদিকে কোন্ পদ্ধতিতে চলতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে সে ব্যাপারেও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি সরকার। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে। সাধারণ ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ধারার ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে। কৃষি ধারার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরীক্ষা নেয় আরেক গুচ্ছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) আরেকটি গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে। আর সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় কেন্দ্রীয় একটি ভর্তি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।

শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়ার ভোগান্তি কমাতে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর একক ভর্তি প্রক্রিয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, চলতি বছরে একটি ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সারা দেশের উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে একটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে চলতি বছরে একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলেছিল ইউজিসি। কিন্তু এ প্রক্রিয়া খুব বেশি এগোয়নি। একক ভর্তি পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আলো অনেকটাই নিভে গেছে।

রবিবার এইচএসসির ফল প্রকাশের দিনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের জানান, একক ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে এখনো আলাপ-আলোচনা চলছে। আমরা চেষ্টা করছি একক পরীক্ষার ব্যাপারে। আর যদি না পারি তাহলে গুচ্ছ পরীক্ষার মতো করে এ বছর হয়তো পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরের বছর একক ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

সর্বশেষ খবর