মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
ভাঙল মিলনমেলা

রাস উৎসবে পুণ্যার্থীর ঢল

বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও দিনাজপুর প্রতিনিধি

রাস উৎসবে পুণ্যার্থীর ঢল

সমাপ্ত হয়েছে তিন দিনব্যাপী রাস উৎসব। সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা ও সুন্দরবনের দুবলারচরে আলোরকোলে নামে পুণ্যার্থীর ঢল। গতকাল ঊষালগ্নে রাসস্নান শুরু হয়ে শেষ হয় সকাল ৯টায়। ২০০ বছর ধরে শ্রী কৃষ্ণের রাস লীলাকে ধারণ করে অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাস মেলা বা রাস উৎসব। দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দির প্রাঙ্গণে রাস উৎসব উপলক্ষে জমে ওঠে মেলা। ভক্ত ও পুণ্যার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয় মন্দির প্রাঙ্গণ। জাগতিক পাপ মোচনের আশায় কুয়াকাটায় লাখো পুণ্যার্থীর পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রাসপূজা ও মেলা। এ বছর শীতের শুরু আর পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায় সারা দেশ থেকে ভক্তদের উপচে পড়া ভিড় হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নির্বিঘ্নে সমাপ্ত হয়েছে রাস পূর্ণিমার স্নান। গতকাল ঊষালগ্নে রাসস্নান শুরু হয়ে সকাল ৯টায় শেষ হয়। সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে আগত পুণ্যার্থী-ভক্তরা রাস পূর্ণিমা তিথিতে মধ্যরাতে নাম সংকীর্তন, পূজা-অর্চনা, পদাবলি কীর্তন শেষে ঊষালগ্নে করেন পুণ্যস্নান। ১৭ জোড়া রাধা-কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা স্থাপন করে শনিবার সন্ধ্যায় অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় রাস উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। রাতে ভক্তদের বাড়তি আনন্দ জোগায় প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাসের গান। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস-সমুদ্র স্নানে জাগতিক পাপ মোচন হয় আর পূর্ণ হয় মনের বাসনা। তাই প্রতিবছর রাস উৎসবে অংশ নিয়ে সমুদ্র স্নান করে এ উৎসব পালন করেন তারা। মোমবাতি প্রজ্বালন, ধান-দূর্বা ও বেলপাতা সমুদ্র জলে অর্পণ করে গঙ্গাস্নান সম্পন্ন করেন পুণ্যার্থীরা। স্নান শেষে পিতৃপুরুষের আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করেন। শুধু পুণ্যার্থীরাই নয়, নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ মিলিত হন রাস লীলা, পূজা, মেলা ও সমুদ্র স্নানে। ভক্তরা বলেন, রাস পূর্ণিমা তিথিতে গঙ্গাস্নানে ইহলোকের জাগতিক পাপ মোচন ও রোগ মুক্তি হয়। এদিকে হরতাল-অবরোধের কারণে বাড়তি নজর ছিল প্রশাসনের। পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা দিতে আনসার ভিডিপি, পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেন পর্যটন নগরী কুয়াকাটা। সিসি ক্যামেরা ও চেকপোস্টের মাধ্যমে পুণ্যার্থীদের নজর রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে প্রস্তুত ছিল মেডিকেল টিম। কুয়াকাটা রাসপূজা উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক কাজল বরণ দাস জানান, উষালগ্নে সাগর সৈকত কুয়াকাটার বিচে পাপ মোচন ও পুণ্য লাভের আশায় স্নানে পুণ্যার্থী ও পর্যটকের ঢল নামে। সি-বিচে পুরোহিত এনে ভক্তদের অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন মানত করা পূজা দিয়েছেন।

বাগেরহাট : পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জে দুবলার আলোরকোলে গতকাল ভোরে দিনের প্রথম জোয়ারে সমুদ্রের লোনা পানিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রাস পুণ্যস্নানের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে ঐতিহ্যবাহী রাস পূর্ণিমা পুণ্যস্নানের তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। প্রায় ২০০ বছর ধরে সুন্দরবনের আলোরকোলে রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নানে এবার প্রায় ১০ হাজার পুণ্যার্থী জাগতিক পাপ মোচনের আশায় অংশ নেন। এর আগে রবিবার সন্ধ্যায় অস্থায়ী মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয় রাস পূর্ণিমা পূজা। তিন দিনব্যাপী রাস পূর্ণিমা পুণ্যস্নান চলাকালে দুবলারচরে আলোরকোলে র‌্যাব-৬ এর নতুন ক্যাম্প পরিদর্শন, মেডিকেল ক্যাম্প ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের উদ্বোধন করেন র‌্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন। রবিবার দুপুরে উদ্বোধন করা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের ১৫টি সরবরাহ পয়েন্ট থেকে প্রতিদিন জেলে-বনজীবীসহ লক্ষাধিক মানুষের বিশুদ্ধ সুপেয় পানির চাহিদা মিটবে। এবারের রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নানে শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীরাই যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় করতে দেওয়া হয়নি মেলা। রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নানে যাওয়া-আসার জন্য পাঁচটি নৌরুট নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম জানান, পুণ্যস্নানে যাওয়া-আসা নির্বিঘ্ন করতে পাঁচটি নৌরুট নির্ধারণসহ চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আলোরকোলে যেতে হয়েছে।

দিনাজপুর : কান্তজিউ মন্দির প্রাঙ্গণে রাস উৎসব উপলক্ষে গতকাল জমে ওঠে মেলা। প্রায় পৌনে ৩০০ বছর ধরে চলে আসছে কান্তজিউ মন্দিরের এ রাস উৎসব ও মেলার আয়োজন। বিকালের পর থেকে লোক সমাগম বাড়তে থাকে। রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলে। মন্দিরে ভক্ত ও পুণ্যার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

রবিবার সন্ধ্যায় দিনাজপুর রাজদেবোত্তর এস্টেটের আয়োজনে কান্তজিউ মন্দির রাসবেদি চত্বরে ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবের ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দেবাশীষ চৌধুরী।

সর্বশেষ খবর