মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নিঃসঙ্গ নারীরা ছিল টার্গেট

সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্যামিং

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিঃসঙ্গ নারীদের টার্গেট করে অন্যের ছবি ও পরিচয় দিয়ে ভুয়া ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করত। পরে তা বিশ্বাসযোগ্য রাখতে আসল ব্যক্তির বর্তমান সময়ের ছবি দিয়ে প্রোফাইল আপডেট করত। নিঃসঙ্গ নারীদের বিয়ে করে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে বেনজীর হোসেন (৪০) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পেয়ে ২২ নভেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের একটি টিম খুলনার ফুলতলা থেকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে বেনজীরকে। পুলিশ বলছে, এরই মধ্যে ১৩টি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে গত চার মাসে ১ কোটি টাকার বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, দুই নারীর করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বেনজীরের বিরুদ্ধে ভয়াবহ তথ্য পাওয়া যায়। ফেসবুকে ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে এই প্রতারক নিঃসঙ্গ নারীদের টার্গেট করে আসছিলেন। প্রথমে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন, পরে বিয়ের প্রলোভন ও সপরিবার যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখাতেন। এভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে এসেছেন বছরের পর বছর। সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান বলেন, শাহিদ হাসান নামে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এক বাংলাদেশি

বিমানচালকের প্রোফাইল হুবহু কপি করে একটি ভুয়া ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করেন বেনজীর। প্রোফাইলটি বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য তিনি নিয়মিত আসল শাহিদের ফেসবুক পেজ থেকে বিমান চালানোর ছবি ও ভিডিও নিয়ে ওই ভুয়া পেজে পোস্ট করতেন। এর পাশাপাশি পুলিশ পরিচয়ে, ইন্স্যুরেন্স স্ক্যাম, সেনাবাহিনী ও পুলিশে চাকরির নামে প্রতারণা, হুন্ডি ব্যবসা, মানব পাচারসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজে বেনজীর জড়িত। অডিওকলে কথা বললেও নানা অজুহাত দেখিয়ে ভিডিওকল এড়িয়ে যেতেন তিনি। অনলাইনে প্রেমের একপর্যায়ে বিভিন্ন রকম বিপদে পড়ার কথা বলে বিভিন্ন এমএফএস (মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস) নম্বরে টাকা নিতেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বেনজীরের বাড়ি নড়াইলের মির্জাপুর। সেখানে বসেই তিনি এরকম প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু প্রতারণা করে পাওয়া অর্থ ক্যাশআউট করতেন বাড়ি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে যশোর কিংবা খুলনার বিভিন্ন ক্যাশআউট পয়েন্টে গিয়ে। প্রতারণার কাজে তিনি যে সিম ব্যবহার করতেন, এমএফএস নম্বরের রেজিস্ট্রেশনে ব্যবহৃত যে এনআইডি নম্বর, সবই অন্য ব্যক্তির। ক্যাশআউট করার সময় পরিচয় ও চেহারা গোপন করার জন্য ক্যাপ, সানগ্লাস ও মাস্ক পরে থাকতেন। সিটিটিসি-প্রধান বলেন, একজন নারী বেনজীরের প্রতারণার শিকার হয়ে গত সাত মাসে প্রায় ১ কোটি টাকা খুইয়েছেন। আরেক নারী খুইয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ টাকা। তারা ওয়ারী থানায় মামলা করার পর সিটিটিসি তদন্তে নামে। এরপর ২২ নভেম্বর খুলনার ফুলতলার এক দোকান থেকে ক্যাশআউট করার সময় বেনজীর হোসেনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বলেন, বেনজীরের ফোনে শাহিদ হাসান নামে সেই ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লগ-ইন অবস্থায় পাওয়া যায়। ফোন ও সিম পরীক্ষা করে বোঝা গেছে, তার প্রতারণার শিকার মানুষের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। দৃশ্যমান কোনো আয়ের উৎস না থাকলেও বেনজীর কয়েক বছরে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন।

 

সর্বশেষ খবর