বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
পুলিশি বাধা

স্মারকলিপি দিতে পারেননি বিএনপি নেতাদের স্বজনরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্মারকলিপি দিতে পারেননি বিএনপি নেতাদের স্বজনরা

খুন নির্যাতনের শিকার বিএনপি নেতাদের স্বজনরা গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পুলিশের বাধার কারণে প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি দিতে পারেননি খুন-গুম-কারা নির্যাতিত বিএনপি নেতাদের স্বজনরা। স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের উদ্দেশে রওনা দিতেই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। এর আগে গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গ্রেফতার হওয়া বিএনপি নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা পূর্বনির্ধারিত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। গুম-খুন ও কারা নির্যাতিত নেতাদের স্বজনদের নিয়ে বিএনপি এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন কারাবন্দি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সহধর্মিণী আফরোজা আব্বাস। সেখানে বিএনপির যেসব জাতীয় ও সিনিয়র  নেতা কারাগারে এবং আদালতের রায়ে যাদের সাজা হয়েছে তাদের স্বজনরা অংশ নেন। পরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা সুপ্রিম কোর্ট অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। তবে পুলিশের বাধায় তারা প্রেস ক্লাবের সীমানা অতিক্রম করতে পারেননি। মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল হাই সিকদার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, এলডিপির শাহাদাৎ হোসেন সেলিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আ ফ ম ইউসূফ হায়দার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষক শামসুল আলম সেলিম, সাংবাদিক নেতা আবদাল আহমেদ, আমিরুল ইসলাম কাগজী, খুরশেদ আলম প্রমুখ। সাংবাদিক নেতা কাদের গনি চৌধুরীর সঞ্চালনায় ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার, নির্যাতনের হৃদয়বিদারক বর্ণনা দেন কারাবন্দি নেতাদের স্বজনেরা। এর মধ্যে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের স্ত্রী রহিমা শাহজাহান মায়া, কারাবন্দি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মেয়ে ব্যারিস্টার তাবাসসুম, ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা মুক্তিযোদ্ধা শেখ মনিরুজ্জামানের স্ত্রী, জেলেখানায় মারা যাওয়া বিএনপি নেতা আবুল বাসারের স্ত্রী, যুবদলের সিনিয়র সহ সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী প্রমুখ।

‘রাজবন্দির’ স্বজনদের কান্না : মানববন্ধন কর্মসূচি অংশ নিতে দাদার সঙ্গে এসেছিলেন তার দুই শিশু নাতনি বর্ষা ও নূরী। কান্না করে কারাবন্দি মায়ের জন্য মুক্তি দাবি করেন অবোধ শিশুরা। বাবা বিএনপি নেতা আবদুল হামিদ ভূইয়াকে না পেয়ে মা পুতুলকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ। একইভাবে কারাবন্দি স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবুল কালামের ছয় বছরের ছেলে সিয়ামও মায়ের সঙ্গে এসেছে স্বজনদের এই প্রতিবাদ সমাবেশে। শিশু সিয়াম কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার বাবার মুক্তির দাবি জানান। মানববন্ধনে তিন ছেলের গ্রেফতারের বর্ণনা দিয়ে পিতা আবদুল হাই বলেন, বিএনপি করা কি আমাদের অপরাধ? আমরা তো শুধু সুষ্ঠু ভোটের অধিকার চেয়েছি। তিনি বলেন, আমার তিন সন্তানকে কারান্তরিন করা হয়েছে। এক ছেলেকে ১০ বছর সাজা দেওয়া হয়েছে। বড় ছেলেকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে তিন দিনের রিমান্ডেও নিয়েছে পুলিশ। অথচ আমার ছেলের বউ রাজনীতিতে জড়িত নন। ২০১৩ সালের গুমের শিকার ছাত্রদল নেতা কাওসারের স্ত্রী মিনু আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামীকে যখন গুম করা হয় তখন আমার সন্তানের বয়স তিন। ১০ বছর ধরে সন্তানকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি। আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই। গ্রেফতার হওয়া ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা লিয়ন হক ও রাজীব হাসানের বোন বলেন, এক বছর আগে আমার ভগ্নিপতিকে লক্ষ্মীপুরে র‌্যাব গুলি করে মেরে ফেলেছে। তারা প্রথমে লাশটিও দিতে চায়নি। তিনি বিএনপি করতেন।

সর্বশেষ খবর