পাচারের শিকার হয়ে ছয় বছর ভারতের একটি কারাগারে স্থান হয় বাংলাদেশি এক নারীর। জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার নামে এক এনজিওর সহায়তায় রোকেয়া (ছদ্মনাম) নামে ওই নারীর সন্ধান পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। কারাগার থেকে রোকেয়া জামিন পেয়ে একটি সেফ হোমে ছিলেন। জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের সহায়তায় দুই সপ্তাহ আগে তিনি দেশে ফিরেছেন বলে জানা গেছে।
সিআইডিসূত্র জানান, রোকেয়াকে ভারতে পাচারের বিষয়ে ২০১৭ সালের ২ মে আদালতের নির্দেশে দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলাটির তদন্তভার থানা থেকে সিআইডিতে দেওয়া হয়। ওই মামলায় জুলেখা ও দুলাল খাঁ নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু তার পরও পাচার হওয়া নারীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এসআই ইমদাদুল কবির জানান, দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর তার সন্ধান পাওয়া যায়। ভারতীয় জেলে তিনি বন্দি ছিলেন। পরে তার জামিন হয়। তিনি দুই সপ্তাহ আগে দেশে ফিরেছেন। তবে এখনো তার সঙ্গে পুলিশের কেউ সরাসরি কথা বলার সুযোগ পাননি। জানা যায়, গর্ভবতী হওয়ার চার মাসের মাথায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তার স্বামী। সন্তান পেটে নিয়ে অকূলপাথারে পড়ে যান তিনি। সন্তান জন্মের পর চারদিক থেকে অভাব ঘিরে ধরে তাকে। দুই বছর পর সন্তান আলিফকে রেখে বোনের ননদের সঙ্গে কাজের সন্ধানে যান যশোরে। কিন্তু কাজ জোগাড় করে দেওয়া উদ্দেশ্য ছিল না বোনের ননদ গোলাপী বেগমের। কৌশলে তিনি তাকে পাচার করে দেন ভারতে। ঠাঁই হয় দিল্লির এক যৌনপল্লীতে। একদিন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যেতে হয় কারাগারে। সেখানে ছয় বছর তাকে দুর্বিষহ জীবন পার করতে হয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২১ সালে রোকেয়াকে ভারতীয় কারাগারে বন্দি হিসেবে খুঁজে পায় সিআইডি। ওই বছরের ২৫ মার্চ পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) কাছে তাকে উদ্ধারের জন্য চিঠিও দেয়। একপর্যায়ে তারা রোকেয়াকে ফিরিয়ে আনতে জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার নামে একটি এনজিওর সহায়তা নেয়। এ প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে ভারতে পাচারের শিকার নারীদের ফেরত আনা বিষয়ে কাজ করে আসছে। জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি জেলে তাকে শনাক্ত করে। পরে ভারতীয় একটি এনজিওর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে উদ্ধারের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করে। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উত্তর প্রদেশের আদালত তাকে জামিন দেন। এরপর তাকে পুলিশের তত্ত্বাবধানে একটি সেফ হোমে রাখা হয়েছিল। সিআইডি বলছে, শুধু রোকেয়াই নন, আরও অর্ধশতাধিক নারীকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে ভারতে পাচার করেছেন গোলাপী। পাচারের শিকার নারীর বেশির ভাগই জামালপুরের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। গোলাপী দীর্ঘদিন ধরে ভারতে বসবাস করছেন। নিজে সঞ্জয় নামে ভারতীয় এক ব্যক্তিকে বিয়ে করে ওই দেশের আধার কার্ড তথা জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন।