বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাউত উৎসবে মিলছে না মাছ

এস এ আসাদ, পাবনা

বাউত উৎসবে মিলছে না মাছ

কারও হাতে পলো, কারও হাতে খেয়া জাল, বাদাই জালসহ মাছ ধরার নানা উপকরণ। এরপর দল বেঁধে বিলে নেমে মাছ শিকার করছেন। কেউ পাচ্ছেন বোয়াল, কেউ বা শোল, রুই, কাতলা। আবার অনেকেই ফিরছেন খালি হাতে। এভাবেই চলনবিল অধ্যুষিত বিলগুলোতে মাছ শিকারে মেতেছেন শৌখিন মৎস্যশিকারিরা। পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার রুহুল বিলে দল বেঁধে মাছ ধরার এই আয়োজনের নাম ‘বাউত উৎসব’। আর এ উৎসব হয় সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারি মাসের অর্ধেক সময়জুড়ে চলে এই মাছ ধরার উৎসব। আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাউত উৎসবে অংশ নেন নানা বয়সী হাজারো মানুষ। তবে এ বছর বিলে কাক্সিক্ষত মাছের দেখা মিলছে না। এতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ মৎস্যশিকারিরা। তাদের অভিযোগ, নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল আর গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে মাছ ধরে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। ফলে মাছ ও পোকামাকড় মরে গিয়ে পানিতে সৃষ্টি হয়েছে দুর্গন্ধ। গত শনি ও মঙ্গলবার ভোরে পাবনা-ফরিদপুর আঞ্চলিক সড়কের মালিগাছা ইউনিয়নের টেবুনিয়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো অন্তত ২০টি বাস। এসব বাসে কুষ্টিয়া, নাটোর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছেন অনেক মৎস্যশিকারি। আবার অনেকে ইজিবাইক, অটোরিকশা,  মোটরসাইকেল, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে এসেছেন।

 এরপর রুহুল বিল অভিমুখে ছুটে চলেন মানুষ। ভোরের আলো ফোটার আগেই বিল পাড়ে হাজির নানা বয়সী হাজারো মানুষ। সবার হাতে নানারকমের মাছ ধরার উপকরণ। একসঙ্গে বিলে নেমে চলছে মাছ শিকার। দল বেঁধে মাছ ধরার এ আয়োজনে মৎস্যশিকারিদের ডাকা হয় বাউত। তাদের ঘিরেই উৎসবের নামকরণ। চলনবিলাঞ্চলে এমন উৎসব চলে আসছে যুগের পর যুগ। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর চলে এই উৎসব। সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার ভোর থেকে বিলাঞ্চলের পূর্বনির্ধারিত এলাকায় দল বেঁধে মাছ শিকারে নামেন বাউতেরা। কুষ্টিয়া থেকে মাছ শিকারে আসা আশিকুর রহমান বলেন, বাউত উৎসবের কথা অনেক শুনেছি। এবার প্রায় ২০টি বাস নিয়ে পাঁচ শতাধিক লোক এসেছি মাছ ধরতে। একসঙ্গে মাছ ধরার আনন্দই আলাদা, খুব ভালো লেগেছে। নাটোর থেকে আসা আরেক মৎস্যশিকারি রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরই আসি বাউত উৎসবে। কিন্তু এবার মাছ নেই বললেই চলে। পাবনা সদরের মাছশিকারি আজিজ প্রামাণিক বলেন, ‘প্রভাবশালীরা আগেই চায়না দুয়ারী, কারেন্ট জাল দিয়ে সব মাছ মাইরে লিছে। পরে তারা বিলে গ্যাস ট্যাবলেট দিছে, যে কারণে  ছোটখাটো মাছ যা আছে বেশির ভাগ মরে গেছে। এজন্যি মাছ নাই এবার।’ বাউত উৎসব দেখতে আসা পাভেল মৃধা বলেন, বিলে যেভাবে গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়েছে, এতে দেশি মাছের প্রজনন নষ্ট হচ্ছে। জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। এখনই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। না হলে ভবিষ্যতে দেশি মাছের সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতির এই উৎসবও হারিয়ে যাবে। পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাছের প্রজনন ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি না করে বাউত উৎসব পালন করতে হবে। এ বিষয়ে মৎস্যশিকারিদের সচেতন হতে হবে। সেই সঙ্গে বিলে গ্যাস ট্যাবলেট বা নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে মাছের ও পরিবেশের ক্ষতি করছে এমন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ খবর