বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কঙ্কাল থেকে বেরিয়ে এলো রোমহর্ষক হত্যার রহস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

অজ্ঞাত ব্যক্তির কঙ্কাল উদ্ধারের ঘটনা থেকে রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় আঁখি আক্তার (২৪) ও আলাল মোল্লা (৩৫) নামে দুজনকে গ্রেফতার করেছে সংস্থাটি।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার কুদরত ই খুদা এসব জানান।

পিবিআই বলছে, গত ২১ মে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে সিংহ নদে খননকাজের সময় অজ্ঞাত ব্যক্তির কঙ্কাল পাওয়া যায়। পুলিশ কঙ্কালটি উদ্ধার করে। কঙ্কালে জড়ানো কাপড় দেখে স্বজনরা পরিচয় নিশ্চিত করেন। তারা জানান, কঙ্কলটি রুমান শিকদারের (৩৯)। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানায় একটি মামলা করেন এসআই মাইদুল ইসলাম। আর পরকীয়ার বিষয়টি স্থানীয়দের কাছে ফাঁস করে দেওয়ায় পরকীয়া প্রেমিকা আঁখির পরিকল্পনায় এ হত্যাকান্ড ঘটে। পরে সিংহ নদে লাশটি মাটিচাপা দেন।

পুলিশ সুপার কুদরত ই খুদা জানান, গ্রেফতার আঁখির স্বামী ওমর ফারুক বিদেশ থাকেন। প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে আসা-যাওয়ার একপর্যায়ে রুমান শিকদারের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন আঁখি। বিষয়টি জানতে পেরে প্রবাস থেকে চলে আসেন ফারুক। পরকীয়ার জেরে আঁখির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। পরে দুই পরিবারের মধ্যস্থতায় বিষয়টি মীমাংসা হয়। আবারও সংসারে ফেরেন তারা। কিছুদিনের মধ্যে আবারও রুমানের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান আঁখি। একপর্যায়ে তারা পালিয়ে যান। সপ্তাহখানেক একসঙ্গে থাকার পর তাদের খোঁজ পান ফারুক। এ নিয়ে সালিশ বৈঠক হয় দুই পরিবারের মধ্যে। সেখানে আঁখিকে বিয়ে করতে রুমানকে চাপ দেওয়া হলে তিনি রাজি হননি। পরে বিষয়টি মীমাংসা হলে ফারুকের কাছে ক্ষমা চেয়ে তার সংসারে ফিরে যান আঁখি। তিনি রুমানকে অনুরোধ করেন একসঙ্গে থাকার বিষয়টি কাউকে না জানাতে। কিন্তু রুমান লোকজনের কাছে বিষয়টি বলে দেন। এতে রুমানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আঁখি ও ফারুক। ২২ মার্চ রুমানকে ফোন করে বাসায় ডেকে নেন আঁখি। কথাবার্তার একপর্যায়ে লোহার রড দিয়ে রুমানের মাথায় আঘাত করেন ফারুক ও আঁখি। ঘটনাস্থলেই মারা যান রুমান। পরে প্রতিবেশী আলালের সহযোগিতায় লাশটি বস্তায় ভরে সিংহ নদে ফেলে দেন তারা। এ ঘটনায় ফারুক আগেই থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রুমান শিকদার হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন আঁখি ও আলাল। রুমান শিকদার একই এলাকার আবু শিকদারের ছেলে।

যেভাবে পরিচয় মিলল রুমানের : হত্যার এক মাস পর ২১ মে সিংহ নদে খননের কাজ শুরু হয়। কাদামাটি কাটার সময় ভেকুতে অজ্ঞাত মানুষের কঙ্কাল উঠে আসে। বিষয়টি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে জানান স্থানীয়রা। ঘটনাস্থলে এসে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল কঙ্কালের সঙ্গে একটি অস্পষ্ট নেভি-ব্লু রঙের শার্টের টুকরো পায়। কঙ্কাল উদ্ধারের খবর পেয়ে সেখানে যান রুমানের স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনরা। তারা শার্টের টুকরো দেখে এটি রুমানের বলে দাবি করেন। এসআই মাইদুল ইসলাম কঙ্কালের সুরতহাল প্রস্তুত করেন এবং ডিএনএ প্রোফাইলের জন্য কঙ্কালটি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠান। মামলাটি পাঁচ মাস থানা পুলিশের তদন্ত শেষে দায়িত্ব পায় পিবিআই।

গত ২২ আগস্ট মামলাটি তদন্ত শুরু করে পিবিআই ঢাকা জেলার একটি দল। এর আগে কঙ্কাল উদ্ধারের পর রুমানের স্ত্রী সেলিনা আক্তার ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রুমানের মেয়ে নুসরাত (১২) ও ছেলে সাইফের (৬) ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ডিএনএ পরীক্ষায় রুমানের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়।

সর্বশেষ খবর