শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অপেক্ষা শেষ পর্যটন রেলের

কক্সবাজারে প্রথম ট্রেন যাচ্ছে আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার প্রতিনিধি

অপেক্ষা শেষ পর্যটন রেলের

কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল শুরু আজ। কক্সবাজার থেকে প্রথম ট্রেনে যেতে টিকিট নেওয়া যাত্রীরাও অধীর আগ্রহে রয়েছেন। অবশেষে তাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে। আজ শুক্রবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেন কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এর আগে এ রেলপথে বেলা সাড়ে ১১টায় কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনটির চলাচলের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর।

গত বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল ৮টায় অনলাইন ও কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। বেলা ১১টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় ১, ২ ও ৩ ডিসেম্বরের কক্সবাজার থেকে প্রথম যাত্রীবাহী আন্তনগর ট্রেনের টিকিট। তিন দিনের টিকিট বিক্রি শুরুর তিন ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। এর আগে ১১ নভেম্বর কক্সবাজার রেলপথের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় ঘোষণা দেওয়া হয় ১ ডিসেম্বর থেকে এ রুটে ট্রেন চলাচল করবে। শুরুতে এক জোড়া আন্তনগর ট্রেন দিয়ে শুরু হবে যাত্রা। কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন থেকে প্রথম টিকিট সংগ্রহকারী কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল জানান, কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন থেকে তিনি তিনটি টিকিট নিয়েছেন। এর পর থেকে অধীর আগ্রহে ছিল কখন ট্রেনে চড়ে ঢাকায় যাবেন। অনেক দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কক্সবাজারবাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। রেল যোগাযোগের কারণে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে বহুমাত্রিক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের মাস্টার গোলাম রাব্বানী জানান, আজ দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজার থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়বে। ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে। পথিমধ্যে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে ২০ মিনিট ও ঢাকা বিমানন্দর স্টেশনে ৫ মিনিটের যাত্রাবিরতি দেবে। গতকাল সকাল ৮টা থেকে ১ থেকে ৩ ডিসেম্বরের টিকিট অনলাইনে ও রেলস্টেশনে বিক্রি শুরু হয়। সারা দেশের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কিনেছিলেন। ৩ ঘণ্টায় তিন দিনের সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। পরে ৪ তারিখের টিকিটও বিক্রি হয়ে যায়। ৫ ডিসেম্বর সাপ্তাহিক ছুটির কারণে কক্সবাজার থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। ওইদিন ঢাকা থেকে একটি ট্রেন আসবে।

কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন থেকে পাওয়া তথ্যমতে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি ননস্টপ হওয়ায় সাধারণ আন্তনগর ট্রেনের চেয়ে ভাড়া বেশি ধরা হয়েছে। কক্সবাজার থেকে ঢাকা পর্যন্ত শোভন চেয়ারে ভাড়া ধরা হয়েছে ৬৯৫ টাকা ও স্নিগ্ধা শ্রেণির ভাড়া ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩২৫ টাকা। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে শোভন চেয়ারে ভাড়া ধরা হয়েছে ২৫০ টাকা ও স্নিগ্ধা শ্রেণির ভাড়া ৪৭০ টাকা। শুরুতে কেবিন ও এসি বার্থের সুবিধা থাকছে না। পরে এসব সুবিধা সংযুক্ত হলে সমন্বয় করে টিকিটের দাম নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের প্রথম দিন উদ্বোধন করায় ট্রেনটি সাজানো হয়েছে লাল-সবুজ রঙে। প্রথম দিনে কক্সবাজার এক্সপ্রেসের ৭৮০ যাত্রী হবেন ইতিহাসের সাক্ষী। ২১টি কোচের বহর নিয়ে প্রস্তুত কক্সবাজার এক্সপ্রেস। নিরাপত্তায় থাকছে ১০ জন রেলপুলিশ। কক্সবাজার স্টেশনে পদায়ন করা হয়েছে একজন ইনচার্জসহ চারজন স্টেশনমাস্টার। আজ রাত ১০টা ৪০ মিনিটে প্রথমবারের মতো ঢাকা কমলাপুর স্টেশন থেকে কক্সবাজার এক্সপ্রেস যাবে কক্সবাজার।

কক্সবাজার এক্সপ্রেস ৮১৩ নম্বর ট্রেনটি কক্সবাজার থেকে আজ দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে চট্টগ্রাম পৌঁছাবে বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে এবং ঢাকা পৌঁছাবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে। পক্ষান্তরে রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ঢাকা কমলাপুর স্টেশন থেকে ৮১৪ নম্বর ট্রেনটি ছেড়ে চট্টগ্রাম স্টেশনে রাত ৩টা ৪০ মিনিটে এবং কাল কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে পৌঁছার কথা। আজ থেকে চালু হওয়া কক্সবাজার এক্সপ্রেস চলবে নির্ধারিত কোরিয়ান লাল-সবুজ কোচ দিয়ে। এর মধ্যে রয়েছে নয়টি শোভন চেয়ার, আটটি স্নিগ্ধা, দুটি পাওয়ারকার পিসি ও দুটি গার্ডব্রেক-শোভন চেয়ার। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকেও দুটি কোচে ১১৫ জন যাত্রী যাবেন কক্সবাজার। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসিরউদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিজয়ের মাসের প্রথম দিনে লাল-সবুজ রঙে সজ্জিত রেলটি প্রথমবারের মতো কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকা যাবে আজ। রাতে ঢাকা থেকে একটি রেল কক্সবাজারের উদ্দেশে ছাড়বে। এটি দেশের জন্য একটি ইতিহাস। এ ব্যাপারে আমরা প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন উদ্বোধন করেন। ওই দিনই ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল চলাচলের কথা ঘোষণা করা হয়। প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় রেললাইনটি। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আনা উন্নতমানের নতুন ২১টি কোচসংবলিত আন্তনগর ট্রেনটি চালানো হবে এ রুটে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত কোচ দিয়ে ৮১৩ ও ৮১৪ নম্বরের এক জোড়া আন্তনগর ট্রেন চালানো হবে। এটির আসন ৭৮০টি। সপ্তাহের সোমবার ও মঙ্গলবার ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের রেলপথের দূরত্ব ৫৩৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের রেলপথ দূরত্ব ১৫০ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার।

সর্বশেষ খবর