রবিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

রওশন এখন কী করবেন কী হবে অনুসারীদের

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

রওশন এখন কী করবেন কী হবে অনুসারীদের

দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে টানা বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করে আসা বেগম রওশন এরশাদ ৩২ বছর পর এবারের নির্বাচনে নেই। রওশন এরশাদের অনুসারীদের প্রত্যাশা ছিল পার্টি থেকে অন্তত ১০ থেকে ১৫টি আসন তাদের দেওয়া হবে। কিন্তু রওশন গ্রুপকে তিনটির বেশি আসন ছাড় দিতে নারাজ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এদিকে রওশন এরশাদের প্রত্যাশা ছিল প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি সুরাহা করে দেবেন। কিন্তু সে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় ক্ষোভে-দুঃখে তিন আসনেও মনোনয়ন নেননি জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্টপোষক রওশন এরশাদ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বার্ধক্য ও অসুস্থতায় ভুগছেন রওশন এরশাদ। ৮০ বছর বয়সী এই নেত্রী নিকট ভবিষ্যতে রাজনীতিতে কতটা সক্রিয় থাকতে পারবেন, তা নিয়ে নেতা-কর্মীসহ রাজনৈতিক মহলে সংশয় রয়েছে। পাশাপাশি চলতি একাদশ সংসদের নির্বাচনে পার্টির মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় রওশন এরশাদের যে ভূমিকা ছিল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তা একেবারে শূন্যে নেমে আসে। অসুস্থ রওশন এরশাদ চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থান করলেও দলের ভিতরে তার একটা জোরালো অনুসারী বলয় গড়ে উঠেছিল। কিন্তু নভেম্বরের মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় রওশনের দুর্বল নেতৃত্বের পরিণামে তার অনুসারীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। বাস্তবতার নিরিখে অনেকে রওশন বলয় থেকে বেরিয়ে আসেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। দল-বদলের ঘটনাও ঘটে। ঠিক এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকা অবশিষ্ট ‘নিজস্ব লোক’দের নিয়ে রওশন এরশাদ এখন কী করবেন? শেষ হয়ে যাচ্ছে কি জাতীয় পার্টিতে রওশন অধ্যায়? তখন কী হবে তার অনুসারীদের? তবে, রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ বলেন, ‘ম্যাডামের (রওশন) রাজনৈতিক অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে মনে করি না। বয়সের কারণে একটা অনিশ্চয়তা থাকলেও আশা করছি, আবার আমরা নতুনভাবে তার নেতৃত্বেই ঘুরে দাঁড়াব।’ রওশন অনুসারীরা এই প্রতিবেদককে জানান, ‘ম্যাডাম (রওশন) নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে থেকে যাবেন তা আমরা ভাবতে পারিনি’। রওশনের নির্বাচন বর্জনের এ ঘটনায় তার অনেক অনুসারীর জাতীয় পার্টির রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে রওশনকে সামনে রেখে যারা দলে বিভক্তি সৃষ্টিসহ জাপার শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমাসহ ব্যক্তিগত বিরোধে জড়িয়েছেন, ভবিষ্যতে তাদের কী হবে। তাদের মধ্যে রওশন এরশাদের ছেলে ও বর্তমান সংসদের সদস্য রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদও নির্বাচনপ্রক্রিয়া থেকে ছিটকে পড়েছেন। জানা গেছে, এ পরিস্থিতিতে রওশন অনুসারীদের মধ্যে জাপার সাবেক মহাসচিব ও বর্তমান বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা রংপুর-১ আসন থেকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে পার্টির সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা, আরেক সাবেক এমপি এম এ গোফরান লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিয়েছেন। এ ছাড়া রওশন এরশাদ ঘোষিত পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ জামাল রানা দলছুট হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী হয়েছেন। রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত এসব নেতা মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত রওশন এরশাদের পক্ষেই সক্রিয় ছিলেন। শাহ জামাল রানা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দীর্ঘদিন ম্যাডামের (রওশন) সঙ্গে আছি। পরিস্থিতির আলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। কারণ দীর্ঘদিন এলাকায় রাজনীতি করে আসছি। এলাকায় নেতা-কর্মীদের একটা প্রত্যাশা রয়েছে। তাদের প্রত্যাশা পূরণে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। এদিকে জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, রওশন ও ছেলে সাদসহ অনুসারীদের একটি অংশ নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়ায় পার্টিতে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া হবে না। তারা মনে করেন, রওশন এরশাদকে ঘিরে যারা এতদিন জাপার নামে বিভিন্ন তৎপরতায় যুক্ত ছিলেন, তাদের মধ্যে সাদ এরশাদ ছাড়া অনেকেই পার্টি থেকে বহিষ্কৃত এবং পদ-পদবি হারা। নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক রওশনশিবিরের এক নেতা বলেন, ‘ম্যাডামের (রওশন) রাজনীতির মূল শক্তি ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদ। আগে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে জাপার সাংগঠনিক সংকটের নেপথ্য অনেক বিষয় সমাধান হলেও এবার তা হয়নি।

মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার আগে ম্যাডাম একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়েও পাননি। এতে তিনি দারুণভাবে হতাশ হয়ে স্বেচ্ছায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এ অবস্থায় ম্যাডামের অনুসারীদের অনেকেই এখন যে যার মতো করে এগোচ্ছেন, ভোট করছেন।’ রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ওই নেতা আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা কাউকে মনোনয়ন দিতে পারিনি। এখন কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে আমরা না করতে পারি না। ম্যাডামও কাউকে কিছু বলছেন না।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দলের ভিতর জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের মধ্যকার দুটি ধারা এতদিন চলে আসছিল। কিন্তু এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে জি এম কাদেরের একক নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব সুসংহত হয়েছে। এ অবস্থায় বার্ধক্য, অসুস্থতা ও হতাশা সব মিলিয়ে বেগম রওশন এরশাদের রাজনৈতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটবে নাকি তিনি অনুসারীদের নিয়ে নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে রাজনৈতিক মহলকে।

 

সর্বশেষ খবর