সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
ভূমিকম্প নিয়ে বাড়ছে উৎকণ্ঠা

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করতে হবে

মেহেদী আহমেদ আনসারী

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করতে হবে
ভূমিকম্প নিয়ে বাড়ছে উৎকণ্ঠা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ভূমিকম্পের উৎস নিয়েও তথ্য রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছেন সিনিয়র রিপোর্টার- জিন্নাতুন নূর

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেছেন, তুরস্কে কিছুদিন আগে ভূমিকম্পে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে শুধু ভবন চাপা পড়ে। আবার সিরিয়ায়ও ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আমাদের প্রধান কাজ হবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোকে চিহ্নিত করা। এক্ষেত্রে সব ভবনই পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

এই ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ বলেন, ২০০৯ সালে আমরা একটি জরিপ করেছিলাম। সেখানে বাংলাদেশের পাঁচটি স্থান, যেখানে ভূমিকম্প হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে তা দেখিয়েছিলাম। এর মধ্যে প্লেট বাউন্ডারি-১ কক্সবাজারের  সেন্টমার্টিন থেকে শুরু করে নোয়াখালী পর্যন্ত বিস্তৃত। আর নোয়াখালী থেকে সিলেট পর্যন্ত প্লেট বাউন্ডারি-২ অবস্থিত। আর প্লেট বাউন্ডারি-৩ সিলেট থেকে শুরু করে ভারতে চলে গেছে। গত শনিবার যে ভূমিকম্প হয়েছে তা প্লেট বাউন্ডারি-১ এবং প্লেট বাউন্ডারি-২ এর জাংশানে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর আইএলওর অর্থায়নে সরকারি উদ্যোগে আমরা সাড়ে ৩ হাজার ভবন পরীক্ষা করেছিলাম। তখন প্রতিটি ভবন পরীক্ষা করে আমরা কালার কোড করে দিয়েছিলাম। লাল চিহ্নিত ভবনের ক্ষেত্রে এটি তাৎক্ষণিকভাবে খালি করে দিয়ে এক বা দুই মাসের মধ্যে সংস্কার করে দেওয়া হয়েছে। আর কমলা রং চিহ্নিত ভবনের ক্ষেত্রে ছয় মাস সময়ের মধ্যে চালু অবস্থায় ভবনগুলো সংস্কার করা হয়েছে। আর সবুজ চিহ্নিত ভবনগুলোর ক্ষেত্রে কোনো সংস্কারের প্রয়োজন হয়নি।

মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ২০১৫ সালে নেপালে ভূমিকম্পের পর সে সময়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিবকে রাজউক কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়ে ভবন পরীক্ষার বিষয়টি দ্রুত করে ফেলার কথা বলেছিলাম। সে সময় রানা প্লাজা ধসের পর আমাদের কী কী করতে হবে তার জন্য অ্যাকশন প্ল্যানে নেমে গিয়েছিলাম। আমাদের দেশে এখন ৫০টির অধিক দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম আছে। সাধারণত ভবন পরীক্ষা করতে গেলে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হয়, এ জন্য ভবনের মাটি ও কংক্রিট কাটতে হয়। আর এই ফার্মগুলোতে এগুলো আছে। সে সময় রাজউকের ৮টি জোনে ৫টি করে টিম দিয়ে এ কাজটি করানোর জন্য বলেছিলাম। এ কাজটি করলে কোন ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং কোনটি নয় তা বের করা সহজ হতো। এ কাজটি স্বল্পমেয়াদে করার পর দীর্ঘমেয়াদে এ ভবনগুলো মজবুত করার বিষয়টিও চলে আসত। তিনি বলেন, তুরস্কের ভূমিকম্পে আমরা দেখেছি ভবন চাপা পড়ে মানুষ মারা গেছে। কিন্তু মানুষের উদ্ধারেরও বিষয় আছে। এক্ষেত্রে শুধু ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সংখ্যা বাড়িয়ে লাভ নেই। এ জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের একটি ব্রিগেড অক্সিলারি ফোর্স হিসেবে তৈরি করে রাখতে হবে। এরা যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এগিয়ে আসবে। কারণ ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা সময় লাগে। এ অধ্যাপক বলেন, এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে শিক্ষার্র্থীরা প্রকৌশল বিষয়ে ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছে তাদেরও ভূমিকম্প বিষয়ে তিন বা ছয় মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কারণ তারা এ বিষয়ে খুব একটা জানে না। ঢাকায় ৬ লাখ আর চট্টগ্রামে ৩ লাখ পাকা দালান আছে। এসব দালানের পরীক্ষার জন্য আমাদের দক্ষ আরও জনবল প্রয়োজন। ভবন পরীক্ষার বিষয়টি এখনই শুরু করা উচিত। এ জন্য রাজউককে নড়েচড়ে বসতে হবে। একই সঙ্গে কাজটি বাস্তবায়নে শক্ত রাজনৈতিক সদিচ্ছাও প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর