সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভাঙাচোরা সড়ক সংস্কারে নেই উদ্যোগ ভোগান্তিতে নগরবাসী

হাসান ইমন

ভাঙাচোরা সড়ক সংস্কারে নেই উদ্যোগ ভোগান্তিতে নগরবাসী

রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের (উত্তর ও দক্ষিণ) আওতাধীন এলাকার অধিকাংশ সড়ক ভাঙাচোরা। এসব সড়কের কোথাও কেটে ফেলে রাখা হয়েছে দিনের পর দিন। কোথাও আবার কাজ শেষে ভরাট করলেও মাটি উঁচু-নিচু হয়ে আছে। আবার কোনো কোনো সড়কে ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দ। এসব গর্তে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। একই চিত্র প্রধান সড়ক ও পাড়া-মহল্লার সড়কগুলোর। গত বর্ষার পানিতে এসব সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সংস্কারের উদ্যোগ নেই দুই সিটি করপোরেশনের। এতে দৈনন্দিন কাজে ঘর থেকে বের হওয়া নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা যায়, গুলশান-বনানী-বারিধারা লেকড্রাইভ সড়ক। এই সড়কটি ২০১৮ সালে নির্মাণ করা হলেও গত পাঁচ বছর আর সংস্কার করা হয়নি। সড়কটির অধিকাংশ স্থানে পিচ উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সময় সেখানে ঘটেছে দুর্ঘটনা। ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেল, কাভার্ড ভ্যান ও প্রাইভেট কার চলাচল করে। লেকড্রাইভ সড়কে কথা হয় গ্যারেজ কর্মচারী ইসমাইলের সঙ্গে। তিনি বলেন, মরিয়ম টাওয়ার থেকে গুদারাঘাট পর্যন্ত সড়কটি খুবই খারাপ। এটি গত এক বছরে খানাখন্দে ভরে গেছে। অনেক জায়গায় বড় গর্তও রয়েছে। ভাঙাচোরা সড়কটি কি কর্তৃপক্ষের চোখে পড়ে না?

মেরুল বাড্ডার পোস্ট অফিস গলির সড়কটির মেইন রোড থেকে পাঁচতলা কাঁচাবাজার পর্যন্ত অসংখ্য খানাখন্দ। একটু বৃষ্টি হলেই জমে যায়  হাঁটুপানি। সড়কটির পিচ, সুরকি ও পাথর উঠে গেছে। অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে চলেন পথচারী ও রিকশাচালকরা। একই অবস্থা ডিআইটি ৪ নম্বর সড়ক ও বাজার রোডের। তবে বাজার রোডের সংস্কার কাজ চলায় দুর্ভোগ আরও বেশি বলে স্থানীয়রা জানান। এ ছাড়া মাদারটেক-খিলগাঁও সড়কের অধিকাংশ স্থানে পিচ উঠে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। একই অবস্থা বেটার লাইফ হাসপাতাল থেকে দক্ষিণ বনশ্রী টেম্পো স্টেশন সড়কটিরও। সিপাহীবাগ বাজার-গোড়ান বাজার সড়কটির অনেক স্থানে ছোট-বড় গর্ত রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে গেছে। এ ছাড়া আট মাসের বেশি সময় ধরে হাতিরঝিলের রামপুরা থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়কের একটি লেন খোঁড়াখুঁড়িতে তছনছ। রাস্তাটি কেটেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সম্প্রতি মাটি ফেলা হলেও রাস্তাটির কোথাও উঁচু কোথাও নিচু। কোথাও আবার বড় বড় গর্ত। দিনদুপুরে চলা দায়। তবে কয়েকদিন থেকে সংস্কার কাজ শুরু করতে দেখা যায়। এ ছাড়া বনশ্রী ই, এফ, জি, এইচ, এম ব্লকেও বিদ্যুৎ বিভাগ কাজ শেষে মাটি ভরাট করলেও বৃষ্টিতে অসংখ্য খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। মতিঝিল সোনালী ব্যাংক মোড় থেকে দৈনিক বাংলা পর্যন্ত সড়কটি কয়েক মাস আগে কেটেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। মাটি ভরাট করলেও গত এক মাসের বৃষ্টিতে উঁচু-নিচু ছোট-বড় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। মোহাম্মদপুরের বর্ধিত এলাকা ঢাকা উদ্যানের বিভিন্ন সড়কের অবস্থাও শোচনীয়। সেখানকার প্রধান সড়কসহ অলিগলি দিয়ে চলাচল করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকার বিভিন্ন রাস্তা দুই মাস ধরে কাটা। টিকাটুলী থেকে গেন্ডারিয়া যাওয়া সড়কের একপাশ দীর্ঘদিন ধরে খোঁড়া। যত্রতত্র রাখা পাইপ-বালু-ইট-সুরকি। সতীশ চন্দ্র সাহা লেনের পুরোটাই কাটাকাটি। এলাকার মানুষের ভোগান্তি এতে চরমে। ফুটপাত দিয়েও চলাচল করা কষ্টকর। বংশালের কাজী আলাউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতাল থেকে নাজিরাবাজার চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কে ড্রেন মেরামত চলছে অনেক দিন ধরে। স্থানীয়রা জানান, এক দিন কাজ হয় তো দশ দিন হয় না। এর আগে বংশালের রোকনুদ্দিন মসজিদ থেকে নাজিরাবাজার চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কটি খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বন্ধ ছিল প্রায় এক বছর। এটি এখনো পুরোপুরি চলাচলের উপযুক্ত নয়। সূত্রাপুরের কাগজীটোলার সড়কেও চলছে খোঁড়াখুঁড়ি।

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, গত বর্ষা মৌসুমে সিটি করপোরেশনের যেসব রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো করপোরেশনের অঞ্চল থেকে সংস্কার করা হবে। প্রতিটি অঞ্চলের আওতাধীন যে পরিমাণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো নির্বাহী প্রকৌশলীরা সংস্কারের উদ্যোগ নেবেন। অঞ্চলের আওতায় কী পরিমাণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা প্রকৌশল বিভাগে জমা দেবেন। সে আলোকে সিটি করপোরেশন বরাদ্দ দেবে। একই সঙ্গে ছোট বাজেটের খরচ হওয়া কিছু সড়ক ওয়ার্ড কাউন্সিলররা সংস্কার করে থাকেন। এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, বর্ষা মৌসুমে যেসব সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো আগামী বছরের শুরুতে সংস্কার কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া যে সংস্থাগুলো রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করেছে, তারা সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে। কিন্তু তাদের যে সময় দেওয়া হয়েছিল সময়মতো তা শেষ করতে পারেনি। এ জন্য নগরবাসীর ভোগান্তি বেড়েছে। সংস্থাগুলোকে জরিমানা করা হবে।

সর্বশেষ খবর