মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

চার দিনে ৫৭ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি

বাংলাদেশসহ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের সুযোগ তৈরি

চার দিনে ৫৭ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি

জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য রাজনৈতিক এবং আর্থিক প্রতিশ্রুতি উন্মোচন হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চলমান জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ২৮-এর প্রথম চার দিনে ৫৭ বিলিয়ন ডলার জমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মিলেছে। সম্মেলনে অংশ নিয়ে বিশ্বনেতারা এ ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল কপ২৮ সভাপতি সুলতান আল জাবের এক ব্রিফিংয়ে সম্মেলনের সফলতা তুলে ধরে এসব কথা জানান।

সুলতান আল জাবের বলেন, আমরা বিজ্ঞানকে খুব বিশ্বাস এবং সম্মান করি। সময় এসেছে গুরুত্বসহকারে সহযোগিতা করার এবং ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। এজন্য প্রয়োজন সংহতি। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ডেলিভারির জন্য একটি উচ্চ বার সেট করেছি। গতিবেগ, ট্র্যাকশন, ইতিবাচকতা এবং উত্তেজনার বাস্তব অনুভূতি রয়েছে। এটাও বলতে পারি যে, সেখানে সত্যিকারের আশা আছে, সাইটটি এবং প্রত্যেকের মধ্যে আমি এসেছি। এখানে সত্যিকারের আশা এবং আশাবাদ রয়েছে যে, এটি একটি প্রধান পরিবর্তন বিন্দু এবং আমরা সুযোগটি মিস করতে পারি না। এদিকে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের চতুর্থ দিনে জলবায়ু, ত্রাণ, পুনরুদ্ধার এবং শান্তি বিষয়ক একটি ঘোষণা গৃহীত হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশসহ জলবায়ু বিপর্যয় ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জন্য বৈশ্বিক তহবিল থেকে সহায়তা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো। এ ঘোষণা জলবায়ু তহবিল ব্যবস্থা এবং অন্যান্য অর্থায়নের সুযোগ পেতে এবং এ-সংক্রান্ত প্রকল্প তৈরি করতে দুর্বল দেশগুলোকে সহায়তা করবে। এতদিন জটিল আবেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশসহ যেসব দেশ বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিল থেকে অর্থ পেতে দৌড়ঝাঁপ করেও ব্যর্থ হয়েছে, এবার অর্থ প্রাপ্তি তাদের জন্য সহজ হবে।

বাংলাদেশে সৌর সেচ স্থাপনে গতি বৃদ্ধির রোডম্যাপ উন্মোচন : সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আয়োজিত সম্মেলনে বাংলাদেশে সৌর সেচ স্থাপনে গতি বৃদ্ধির (২০২৩-২০৩১) রোডম্যাপ উন্মোচন করা হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে অনুষ্ঠিত সাইড ইভেন্টে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ রোডম্যাপ উন্মোচন করেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। প্রতিমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমরা এখন ক্লিন এনার্জির কথা বলছি। সৌরবিদ্যুৎসহ কয়েকটি জায়গায় এখন অনেক বেশি কাজ করছি। আমরা বর্তমানে ১০ থেকে সাড়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে কাজ করছি। আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছে, বায়ুবিদ্যুৎ। এটা বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে ৩০ মেগাওয়াটের মতো একটি প্রজেক্ট চলে আসবে। বায়ুবিদ্যুতে বড় বিষয় হচ্ছে, আমরা দিনে রাতে সব সময়ই বিদ্যুৎ পাচ্ছি। আমরা আশপাশের দেশ থেকেও বিদ্যুৎ নেওয়ার চেষ্টা করছি। এতে দেখা যাচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে দূষণ তৈরি হয়, তা ৪০ শতাংশ কমাতে যে কমিটমেন্ট করেছিলাম, তা বাস্তবায়ন করতে পারব। তিনি বলেন, আমরা কার্বন কমাব, সেখানে থাকতে চাই না। কারণ আমরা এখনো ১ শতাংশের নিচে কার্বন নিঃসরণ করি।

এরপর সিনিয়র সাসটেইনেবল এনার্জি এক্সপার্ট সিদ্দিক জোবায়ের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে সহযোগিতা করেন তিস্তা সোলার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম। প্রবন্ধে জানানো হয়, এ রোডম্যাপের উদ্দেশ্য হলো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এবং সেচ খরচ কমানো। এ রোডম্যাপের লক্ষ্য ২০৩১ সালের মধ্যে ৪৫ হাজার সৌর সেচ পাম্প স্থাপনের মাধ্যমে ৪ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া, ১.৩ মিলিয়নের বেশি কৃষকের উপকার করা। এর মাধ্যমে ৩ লাখ টন ডিজেল খরচকে বাঁচানো সম্ভব বলেও উল্লেখ করা হয় প্রবন্ধে।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, এডিবির বাংলাদেশে নিযুক্ত আবাসিক মিশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিং বক্তব্য দেন। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্মসচিব নিরোদ চন্দ্র মণ্ডল।

মারাত্মক দূষণ নিয়ে সমালোচনার মুখে দুবাই : কপ২৮ অনুষ্ঠিত হচ্ছে এক্সপো সিটি ২০২০তে, যেখান থেকে ১১ কিলোমিটার দূরেই বিশ্বের বৃহত্তম গ্যাস-জ্বালানি শক্তি কেন্দ্র জেবেল আলি পাওয়ার অ্যান্ড ডিস্যালিনেশন কমপ্লেক্স। গ্যাস নির্গমনের জন্য জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বহু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পাইপলাইনের স্যাটেলাইট চিত্র তুলে ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং জলবায়ু চ্যাম্পিয়ন আল গোর তেলসমৃদ্ধ রাজতন্ত্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের নির্গমনের কথা তুলে ধরেন।

কপ২৮ শীর্ষ সম্মেলনের চতুর্থ দিনকে স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। আর এ দিনটিতেই দুবাইয়ের আকাশ ‘অস্বাস্থ্যকর’ ধোঁয়াশার চাদরে অস্পষ্ট হয়েছিল। আন্তর্জাতিক দূষণ ট্র্যাকার অনুযায়ী, বায়ুর গুণমান সূচক পিএম ২.৫ দূষণের প্রতি ঘনমিটারে ১৫৫ মাইক্রোগ্রামে পৌঁছেছিল। সূক্ষ্ম কণা যা সবচেয়ে ক্ষতিকারক, কারণ এটি রক্তের প্রবাহে প্রবেশ করতে পারে। এ তথ্য প্রকাশের পাশাপাশি সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, বায়ুর গুণমান ‘অস্বাস্থ্যকর’ হওয়ার ফলে ‘সবাই স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব অনুভব করতে পারে; সংবেদনশীল গোষ্ঠীর সদস্যরা আরও গুরুতর স্বাস্থ্যপ্রভাব অনুভব করতে পারে।

 

 

সর্বশেষ খবর