বুধবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মাল্টিপারপাসের আড়ালে শত কোটি টাকা গায়েব

মাহবুব মমতাজী

আহমেদীয়া ফাইন্যান্স অ্যান্ড কমার্স মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভের প্রায় ১ হাজার ১০০ গ্রাহকের প্রায় ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। মানিলন্ডারিংয়ের এমন অভিযোগে রাজধানীর কাফরুল থানায় গত ১৯ নভেম্বর একটি মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মনির আহমেদ গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করে নিজের ও স্ত্রী সকিনা আহমেদের নামে সম্পদ করেছেন। এই কাজে তাদের সহযোগিতা করেছেন সাইফুল ইসলাম নামে একজন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ছিলেন। তিনজনের বিরুদ্ধেই মামলা করেছে সিআইডি।

সংস্থাটি বলছে, গ্রাহকের টাকায় নিজের ও স্ত্রীর নামে চারটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন মনির আহমেদ। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- আহমেদ ডেভেলপার লিমিটেড, আহমেদীয়া অ্যাপার্টমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপার প্রাইভেট লিমিটেড, ইউরো স্টার হোম অ্যাপলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রি ও ইউরো স্টার ল্যান্ড ডেভেলপার লিমিটেড। এ ছাড়া মনির ও তার স্ত্রীর নামে ছয়টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গ্রাহকদের বিপুল অঙ্কের টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। বর্তমানে অ্যাকাউন্টগুলোয় কোনো টাকা নেই। নথিপত্র পর্যালোচনায় মনির ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের ৫৮ কোটি টাকা দিয়ে নিজেদের নামে সম্পদ কেনার তথ্য পাওয়া গেছে।  তদন্ত সংশ্লিষ্টদের তথ্যানুযায়ী, সরকারি চাকরি করতেন গিয়াস উদ্দিন। বেতনের টাকা থেকে কিছু কিছু করে জমিয়ে ১০ বছর আগে প্রায় ৬ লাখ টাকা আমানত রাখেন আহমেদীয়া ফাইন্যান্স অ্যান্ড কমার্স মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভে। শুরুতে ১ লাখে মাসে ২ হাজার টাকা মুনাফা পেতেন গিয়াস উদ্দিন। পরে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে আরও ২৫ লাখ টাকা সেখানে আমানত রাখেন তিনি। প্রথম চার বছর মুনাফার টাকা পেয়েছেন। এরপর গত চার বছর ধরে পাননি মুনাফা। আসল টাকাও ফেরত পাননি। গিয়াস উদ্দিনের মতো লাখে ২ হাজার টাকা মুনাফা পাওয়ার আসায় আহমেদীয়া ফাইন্যান্স অ্যান্ড কমার্স মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভে ৮১ লাখ টাকা আমানত রাখের মিরপুরের মাহমুদা রহমান নামে এক নারী। তিনি গত চার বছর ধরে কোনো টাকা পাননি। জানা গেছে, এই দুজনের মতো প্রায় ১ হাজার ১০০ গ্রাহক ২০০৬ সাল থেকে আহমেদীয়া ফাইন্যান্স অ্যান্ড কমার্স মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা আমানত রেখেছেন। সিআইডির পুলিশ সুপার আজাদ রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, সিআইডি মনির ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষে এই মামলা করেছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গ্রাহকের টাকা দিয়ে মনির আহমেদ নিজের নামে কাফরুলে ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ জমি কিনে ইউরো স্টার টাওয়ার নামের একটি ১০তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। এ ছাড়া ভাটারায় ১১ কাঠার ৩টি প্লটও রয়েছে তার নামে। কাফরুলে ইউরো স্টার টাওয়ারে আহমেদীয়া ফাইন্যান্স অ্যান্ড কমার্স মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভের কার্যালয়টি বন্ধ দেখা গেছে। ১০তলা এই ভবনের ৫তলা পর্যন্ত কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংককে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। বাকি তলাগুলো খালি।

সর্বশেষ খবর