শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভোটের ব্যয়ে অগ্রিম দেওয়া হচ্ছে ১৩৫৭ কোটি টাকা

গোলাম রাব্বানী

ভোটের ব্যয়ে অগ্রিম দেওয়া হচ্ছে ১৩৫৭ কোটি টাকা

৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আটজন বিভাগীয় কমিশনার, ৬৬ জন রিটার্নিং অফিসার, ৫৯৪ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ১৩ খাতে অগ্রিম ১৩৫৭ কোটি টাকা দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ১২২৫ কোটি টাকা।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ১২২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে পুলিশ অগ্রিম চেয়েছে ৪০০ কোটি ২৫ লাখ ৩ হাজার টাকা; আনসার ও ভিডিপি চেয়েছে ৩৮৭ কোটি ৬২ লাখ ২৩ হাজার ৬৮ টাকা; বিজিবি চেয়েছে ২৩১ কোটি ২১ লাখ ৪৬ হাজার ৫০৪ টাকা; র‌্যাব চেয়েছে ১০২ কোটি ২৪ লাখ ৩ হাজার ৮৩৫ টাকা; কোস্টগার্ড চেয়েছে ৬৭ কোটি ৭২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৩২ টাকা; ফায়ার সার্ভিস চেয়েছে ৩৬ কোটি ৫৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এবার প্রায় ১২ কোটি ভোটারের এ নির্বাচনে ৩০০ আসনে কেন্দ্র থাকবে ৪২ হাজারেরও বেশি।

অন্যান্য খাতে অগ্রিম ১৩২ কোটি : বিভাগীয় কমিশনার, রিটার্নিং অফিসারসহ অন্যদের জন্য অগ্রিম বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ১৩২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে আটজন বিভাগীয় কমিশনারের অনুকূলে বরাদ্দ হচ্ছে ২৪ লাখ টাকা; ৬৬ জন রিটার্নিং অফিসারের অনুকূলে বরাদ্দ হচ্ছে ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা; ৫৯৪ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসারের অনুকূলে বরাদ্দ হচ্ছে ২১ কোটি ৩৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা; পাঁচজন মহানগর দায়রা জজের অনুকূলে বরাদ্দ ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা; ৬৪ জন জেলা ও দায়রা জজের অনুকূলে বরাদ্দ হচ্ছে ১৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা; আটজন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের অনুকূলে বরাদ্দ হচ্ছে ৮ লাখ টাকা; ৬৪ জন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অনুকূলে বরাদ্দ হচ্ছে ৬৪ লাখ টাকা; ১০ জন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার অনুকুলে বরাদ্দ হচ্ছে ৭০ লাখ টাকা; ৬৪ জন সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন অফিসারের অনুকূলে বরাদ্দ হচ্ছে ২০ কোটি ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার ১৪০ টাকা; ৫২০ জন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুকূলে বরাদ্দ হচ্ছে ১৬ কোটি ১২ লাখ টাকা; ৫২০ উপজেলা নির্বাচন অফিসারের অনুকূলে বরাদ্দ হচ্ছে ৬৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ হচ্ছে ৮ লাখ টাকা। ইসি সূত্র জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা খাতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি। আইনশৃঙ্খলা খাতে ১২২৫ কোটি টাকা চাহিদা এসেছে। নির্বাচনি প্রশিক্ষণ খাতে ব্যয় হবে ১৩১ কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া নির্বাচনি অ্যাপস তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ২১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এবার ব্যয় ধরা হচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৭০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হলেও এবারের ব্যয় দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসেবে চলতি অর্থবছরে সংসদ নির্বাচনের জন্য দ্বিগুণ ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর বড় অংশ ব্যয় হবে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। সূত্র জানিয়েছে, চলতি ২৩-২৪ অর্থবছরে নির্বাচন খাতে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকার সংস্থান রয়েছে। নির্বাচনি ব্যয়ের দুই তৃতীয়াংশই যায় নিরাপত্তা খাতে। সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের দিন প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৪ থেকে ১৬ জন নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। আর র‌্যাব, বিজিবি ও সেনা সদস্যরা ছিল টহলে। ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে ভোটের এক সপ্তাহ আগে থেকে ১০ দিনের জন্য মোতায়েন ছিল সশস্ত্রবাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন খাতে ব্যয় বাড়বে। এবার ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের ভাতা বাড়ছে এবং দুই দিনের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রায় ৯ লাখ প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তারা ভোট গ্রহণের ভাতা বাবদ গত নির্বাচনের চেয়ে এবার বেশি দিতে পারে ইসি। শুধু ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের ভাতা বাবদ ব্যয় বেড়েছে ২৮০ কোটি টাকা। এগুলোসহ নির্বাচন পরিচালনা খাতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর আইনশৃঙ্খলা খাত মিলিয়ে এবার ব্যয় ধরা হচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি।

বিগত তিন নির্বাচনের ব্যয় : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা ও নির্বাচন পরিচালনা- এই দুই খাত মিলিয়ে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। পরে তা আরও বেড়েছিল।। দশম সংসদ নির্বাচন : ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ২৬৪ কোটি ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৯ টাকা। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় ৮১ কোটি ৫৫ লাখ ৪১ হাজার ৩৪১ টাকা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেছনে ব্যয় হয় ১৮৩ কোটি ১২ লাখ ৮ হাজার ১২৮ টাকা। গত নির্বাচনে ১৪৭ আসনে ভোট হয়, ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন একক প্রার্থীরা। অর্ধেক এলাকায় ভোট করতে হওয়ায় বরাদ্দের তুলনায় খরচ অনেক কমে আসে। নবম সংসদ নির্বাচনে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ভোটে ১৬৫ কোটি ৫০ হাজার ৬৮৭ টাকা ব্যয় হয়; যাতে ভোটার ছিল ৮ কোটি ১০ লাখের বেশি।

সর্বশেষ খবর